• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মানির সিকপে রপ্তানির মাধ্যমে ওয়ালটন কম্প্রেসারের যাত্রা শুরু


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৭, ২০১৭, ০৬:৩৬ পিএম
জার্মানির সিকপে রপ্তানির মাধ্যমে ওয়ালটন কম্প্রেসারের যাত্রা শুরু

ঢাকা: জার্মানভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষ হাইজহোল্ড কম্প্রেসার উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান ‘সিকপ জিএমবিএইচ’ এ যন্ত্রাংশ রপ্তানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলো নবনির্মিত ওয়ালটন কম্প্রেসার কারখানা। গত ৬ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ওয়ালটন কম্প্রেসার কারখানা উদ্বোধন করেন। ওইদিনই অর্থমন্ত্রীর সামনে রপ্তানি সংক্রান্ত নথি উপস্থাপন করে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, প্রথম ধাপে সিকপ ৪ লাখ কাস্টিং পার্টস নিচ্ছে ওয়ালটন থেকে। যার শিপমেন্ট সম্পন্ন হবে চলতি মাসেই। সিকপে বার্ষিক ১ মিলিয়ন কাস্টিং পার্টস রপ্তানির চুক্তিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ওয়ালটন। যন্ত্রাংশের পাশাপাশি সম্পূর্ণ তৈরি কম্প্রেসার রপ্তানির প্রক্রিয়াও চলছে।

উল্লেখ্য, কম্প্রেসার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে বাৎসরিক প্রায় ৭ মিলিয়ন যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয় সিকপে। চাহিদার পুরোটাই বাংলাদেশে তৈরি যন্ত্রাংশ দিয়ে মিটানোর প্রত্যাশা করছে ওয়ালটন। সিকপের পাশাপাশি জাপান ও দক্ষিন কোরিয়া ভিত্তিক খ্যাতনামা কম্প্রেসার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও বার্ষিক ২ মিলিয়ন যন্ত্রাংশ রপ্তানি আদেশ পেতে যাচ্ছে ওয়ালটন।

উদ্বোধনের পর থেকেই বিভিন্ন দেশের কম্প্রেসার উৎপাদন এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করছেন। আগ্রহ দেখাচ্ছেন বাংলাদেশে তৈরি সর্বোচ্চ গুণগতমানের কম্প্রেসার ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ আমদানির। চীনে চলমান ক্যান্টন ফেয়ারেও ওয়ালটন কম্প্রেসারের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশের ক্রেতারা।

ওয়ালটন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রায় ১৬ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি ও ভারী মেশিনারিজের সমন্বয়ে স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম কম্প্রেসার কারখানা। যেখানে রয়েছে বিশাল স্টিল, জিংক, এ্যালুমিনিয়াম ও কপার কাস্টিং এবং ফাউন্ড্রি। আরো রয়েছে অত্যাধুনিক টেস্টিং ও মেটাল প্রসেসিং সিস্টেম। আর উৎপাদিত কম্প্রেসার ও এর কাঁচামালের সর্বোচ্চ গুণগতমান বজায় রাখতে শক্তিশালী ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ (কিউসি) এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) বিভাগ স্থাপন করা হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৬ হাজার লোকের। যার মধ্যে প্রকৌশলী ৩৫ শতাংশ।

ওয়ালটনের সোর্সিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও কম্প্রেসার প্রকল্পের প্রধান আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, উদ্বোধনের পর থেকেই ওয়ালটন কারখানায় কম্প্রেসার ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে কাস্টিং পার্টস, প্লাস্টিক পার্টস, ইনসুলেটিং কপার ওয়্যার, স্ক্রু, টিউবস এন্ড পাইপস, শীট মেটালসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ। তিনি আরো জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ালটন কম্প্রেসার কারখানায় বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৪০ লাখ। তবে আমাদের লক্ষ্য- আগামী ৫ বছরের মধ্যে কম্প্রেসারের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখে উন্নীত করা। যার সিংহভাগই রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া বার্ষিক ৪.৫ মিলিয়ন কাস্টিং পার্টস উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ওয়ালটন কম্প্রেসার কারখানায়। কাস্টিং পার্টস ছাড়াও কম্প্রেসারের অন্যান্য যন্ত্রাংশ রপ্তানির প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

ওয়ালটন সূত্রমতে, ডেনিশ প্রযুক্তির অটোমেটিক মেটাল কাস্টিং প্ল্যান্টে তৈরি হচ্ছে কম্প্রেসারের অপরিহার্য কাঁচামাল। জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, থাইল্যান্ড ও চীনের ইলেকট্রনিক্স ও কম্প্রেসার উৎপাদনকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন এ সকল খুচরা যন্ত্রাংশ আউটসোসিং করছে, যা আশান্বিত করেছে ওয়ালটনকে। সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বোচ্চমানের কম্প্রেসার ও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহের সক্ষমতা থাকায় তাদের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটনের দিকে।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তৈরি কম্প্রেসারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ছে। কেননা, এখানে স্টিল স্ক্র্যাপ অনেক সহজলভ্য। সেইসঙ্গে পাওয়ার ও শ্রম মজুরিও তুলনামূলক সাশ্রয়ী। এতে করে, বাংলাদেশে তৈরি কম্প্রেসারের কাস্টিং ব্লক ও ক্র্যাঙ্ক শেফ্ট উৎপাদন খরচও অন্যান্য দেশের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কম। ফলে, ওয়ালটন কম্প্রেসার কারখানা চালু হওয়ায় বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনাময় এক ব্যাকওয়্যার্ড লিংকেজ শিল্পও গড়ে উঠছে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম জানান, এটি শুধু ওয়ালটনের জন্যই নয়, বাংলাদেশের উচ্চ প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন খাতেও একটি মাইলফলক। পাশাপাশি, বহির্বিশ্বে এক নতুন পরিচয় নিয়ে দাঁড়াতে পারছে বাংলাদেশ।

ওয়ালটন কম্প্রেসার প্রকল্পের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মীর মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ভাবতেই ভালো লাগছে যে, বাংলাদেশে তৈরি যন্ত্রাংশ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। সর্বোচ্চ মানের কম্প্রেসার তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ওয়ালটনের প্রায় শ’খানেক প্রকৌশলী ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এক বছর মেয়াদি উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। লব্ধ জ্ঞান ও সৃজনশীল মেধাকে কাজে লাগিয়ে তারা দেশেই তৈরি করছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত আন্তর্জাতিকমানের কম্প্রেসার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!