• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া পরিবারের হাত থেকে চলে যাচ্ছে বিএনপি!


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৬, ২০১৮, ১১:৫২ এএম
জিয়া পরিবারের হাত থেকে চলে যাচ্ছে বিএনপি!

ঢাকা: জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে হচ্ছে। গণফোরাম প্রধান ড. কামাল হোসেন এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো জনসমর্থনহীন রাজনীতিবিদদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন দলটির কর্ণধাররা।

দেশে নির্বাচনকালীন জোট গঠনে অতীতে সব সময় বড় দলগুলোকে পরিচালকের আসনে দেখা গেছে। কিন্তু এবার ঠিক এর উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই ঐক্য প্রক্রিয়া বলে দিচ্ছে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি কতটা অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এই অসহায়ত্ব সৃষ্টির জন্য এককভাবে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বই দায়ী বলে মনে করা হয়।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একবারও জাতীয় ঐক্যর উদ্যোক্তারা বিএনপির কাছে ছুটে যায়নি। বিএনপিই তাদের আজকের বাস্তবতায় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব থেকে মুখ্য বিষয় ছিল জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্বের আসনে থাকবেন কে। বিএনপির পক্ষ থেকে ড. কামালের নেতৃত্ব মেনে তার অধীনে থেকে রাজনীতি করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরই জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা এসেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এর মধ্যেই বলেছেন জাতীয় ঐক্যের কাছে সরকার মাথানত করবে। এর মধ্য দিয়ে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। আর এতে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসার পর রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে বড় কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। আর গত কয়েক বছর ধরেই মাহমুদুর রহমান মান্না জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্কিত হয়েছেন নানা মন্তব্যের কারণে। এককভাবে ড. কামাল কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্না দেশের কোন আসনে নির্বাচন করে জয়ী হবেন এটা কেউ স্বপ্নও দেখেন না। এমনকি তারা নিজেরাও এমন প্রত্যাশার কথাও কোন দিন বলেননি। কিন্তু বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলকে কেন তাদের নেতৃত্বই মেনে নিতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপিকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো একজন নেতাও নেই। যার নেতৃত্বে দলটি আবার সংগঠিত হতে পারে। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। খালেদাবিহীন বিএনপিতে তারেক রহমানকে কান্ডারি মনে করত নেতাকর্মীরা। কিন্তু তারেক রহমান দুর্নীতি আর হত্যা পরিকল্পনায় সাজাপ্রাপ্ত। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলায় নেতাদের সাজা হওয়াতে চুপসে গেছে বিএনপি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দলীয় গঠনতন্ত্রে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সর্বময় ক্ষমতা থাকায় দলটির মধ্যে কোন রাজনৈতিক চর্চা ছিল না। এখনও নেই। জিয়া পরিবারের হাত থেকে বিএনপি যাতে অন্য কারও হাতে না চলে যায় তা সুসংহত করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়। আর এতে করে নেতৃত্বের সঙ্কটে পড়েছে দলটি।

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পৃথিবীর অন্য কোথাও এভাবে এত অল্প সময়ে একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল অজনপ্রিয় হয়ে যায় না। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে তাই জুটেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে শীর্ষ নেতাদের ভুলকেই দায়ী করেন তিনি। তার মতে সারাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যে সহিংসতা চালিয়েছে তা দুইভাবে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। একটি হচ্ছে জনগণের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। অন্যটি হচ্ছে এসব ঘটনায় সারাদেশের নেতাকর্মীরা মামলায় জড়িয়ে গেছেন। তখন নির্বাচনের বাইরেও আরেকটি ইস্যু ছিল যুদ্ধাপরাধ। জামায়াত-বিএনপির কাঁধে ভর করে সারাদেশে যে সন্ত্রাস চালিয়েছে জোটের শরিক হিসেবে তার দায়ও বিএনপিকেই স্পর্শ করেছে। আর এসব ঘটনায় গত পাঁচ বছর ধরেই বিএনপি একটু একটু করে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন এর জন্য চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।

বিএনপিতে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যেই শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে আস্থার সঙ্কট রয়েছে। একপক্ষ তারেক রহমানকে পছন্দ করলেও অন্যপক্ষ মনে করে তারেক রহমানই বিএনপির রাজনীতিকে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দলটির এই শ্রেণী মনে করে সাবেক জোট সরকারের সময় হাওয়া ভবন থেকে শুরু করে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাতে তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। মায়ের ক্ষমতাকে পুঁজি করে একের পর এক অঘটন ঘটানোর দায় এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বিএনপিকে। অন্যদিকে তারেক রহমানের ইশারা ছাড়া বিএনপিতে কোন কিছু করা সম্ভবও নয়। দলের যেসব ত্যাগী নেতা রয়েছেন তাদেরকেও দলের দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলার রায়ের পর আশা করা হয়েছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন তারেক রহমান। কিন্তু দলের মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নই ওঠে না। ফলে নেতৃত্বের সঙ্কট থেকে উত্তরণের খুব একটা আশা নেই।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!