• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়ার ফরমুলায় এবার নির্বাচনী ১৯ দফা?


এম সুজন আকন, নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৮, ২০১৭, ০৮:৩৮ পিএম
জিয়ার ফরমুলায় এবার নির্বাচনী ১৯ দফা?

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানামুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি বা ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছেন নেতারা। সেসব দফা সংবলিত পোস্টারও লাগানো হচ্ছে দেশেজুড়ে।

কেন্দ্র থেকে সারাদেশের দলীয় ইউনিটগুলোকে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সেসব দাবি জনগণের সামনে উপস্থাপন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জনমত গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখার যোগ্য দাবি বা ইস্যুর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯টি। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট এসব দাবি বা ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার আগে ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্য ও দেশের আর্থ-সামাজিক মুক্তির লক্ষে ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতার সেই ১৯ দফার সঙ্গে মিল রেখেই এবার নির্বাচনীমুখী ১৯ দফা প্রণনয় করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এসব ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তারা ১৯ দফার প্রতিটি ইস্যুকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায়। জনগণের প্রতিক্রিয়াও নিজেদের পক্ষেও পেতে চায়। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ১৯ দফা দাবির প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন সৃষ্টি করেই তারা রাজপথে নামতে চায়।

বিএনপি দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শক্রমে প্রণয়ন করা জনসম্পৃক্ত ১৯ দফা বা ইস্যুগুলো নিম্নরূপ-
১. গুম, খুন, অপহরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ এবং এসবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
২. সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং অপহৃত সব নাগরিককে পরিবারের কাছে ফেরত প্রদান।
৩. বাকস্বাধীনতা ও সভা-সমাবেশের অধিকারসহ সব রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।
৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পাচার, ব্যাংক লুট, শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাৎ ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তার।
৫. পাচারকৃত অর্থ পুণরুদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা।
৬. রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করা।
৭. প্রশাসন আওয়ামীকরণ, আঞ্চলিকীকরণ বন্ধ করা।
৮. বিচার বিভাগকে সরকারের প্রভাবমুক্ত করা।
৯. শিক্ষার মান ধ্বংস, পরীক্ষায় কৃত্রিম উপায়ে পাসের হার বৃদ্ধি, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগে দলীয়করণের ঘৃণ্য অপতৎপরতা বন্ধ করা।
১০. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব বন্ধ করা।
১১. শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
১২. সুন্দরবন রক্ষার্থে পরিবেশ বিধ্বংসী ও বিতর্কিত কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করা।
১৩. সার, কীটনাশক ও বীজের দাম কমানো।
১৪. পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
১৫. বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য কমানো।
১৬. শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ।
১৭. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ধর্মীয় উপাসনালয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত হামলা বন্ধ করতে হবে।
১৮. চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা।
১৯. বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রণয়ন করা ১৯ দফা কর্মসূচি নিম্নরূপ-
১. সর্বতোভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা এবং সার্বোভৌমত্ব রক্ষা করা।
২. শাসন তন্ত্রের চারটি মূলনীতি অর্থ্যাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি সর্বাত্নক বিশ্বাস ও আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার সমাজতন্ত্র জাতীয় জীবনে সর্বাত্মক প্রতিফলন।
৩. সর্ব উপায়ে নিজেদের একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে গঠন করা।
৪. প্রশাসনের সর্বস্তরে, উন্নয়ন কার্যক্রমে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৫. সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা।
৬. দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং কেউ যেন ক্ষুধার্থ না থাকে তা নিশ্চিত করা।
৭. দেশে কাপড়ের উৎপাদন বাড়িয়ে সবার জন্য অন্তত মোট কাপড় নিশ্চিত করা।
৮. কোনো নাগরিক যেন গৃহহীন না থাকে তার যথাসম্ভব ব্যবস্থা করা।
৯. দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা।
১০. .সকল দেশবাসীর জন্য নূন্যতম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
১১. সমাজে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং যুবসমাজকে সুসংহত করে জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা।
১২. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দান।
১৩. শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সুস্থ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
১৪. সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে জনসেবা ও দেশ গঠনের মনোবৃত্তি উৎসাহিত করা এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
১৫. জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করা।
১৬. সকল বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা।
১৭. প্রশাসন এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা।
১৮. দুনীতিমুক্ত, ন্যায়নীতি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা।
১৯. ধর্ম, গোত্র ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার পূর্ণ সংরক্ষণ করা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করা।

সোনালীনিউজডটকম/এন

Wordbridge School
Link copied!