• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জুয়েলারি শিল্প ধ্বংসে গভীর চক্রান্ত


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ৩, ২০১৭, ০৯:৩১ পিএম
জুয়েলারি শিল্প ধ্বংসে গভীর চক্রান্ত

ঢাকা: আতঙ্ক কাটছে না জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের। জুয়েলারি ব্যবসা নিয়ে গভীর চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের ধর্ষণের ঘটনাকে পূঁজি করে পুরো শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে।

তারা অভিযোগ করেন, একটি চক্র পুরো জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সারাদেশে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেকেই শো-রুম পর্যন্ত খুলতে পারছেন না। তারা বলছেন, যখন সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিক সেই সময়ে একটি চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
 
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ তার তিন বন্ধু। এ ঘটনার পর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ পাবলিক ডিমান্ডের কথা বলে আপন জুয়েলার্সের সবকটি শো-রুমে একযোগে অভিযান চালায়। জব্দ করা হয় ৫টি শো-রুমের প্রায় সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ।

আর এ ঘটনার পর সারাদেশে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)। তারা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করার দাবি জানান।

বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলের ঘটনার পর সারাদেশেই জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা গহনা বানানোর জন্য ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণ নিয়ে আসার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির মুখে পড়ছেন।

এমনকি তাঁতীবাজার থেকে গহনা বানিয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে আনার সময়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির মুখোমুখি হতে হয়। যদিও কাগজপত্র দেখালে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গহনা নিয়ে যিনি আসেন তিনি হেয় প্রতিপন্ন হন, পাশাপাশি তাকে ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

বাজুসের এ সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা অবৈধ স্বর্ণ দিয়ে ব্যবসা করেন না। বিমানবন্দরসহ অন্যান্য জায়গায় স্বর্ণের যেসব চোরাচালান ধরা পড়ে সেগুলো আন্তর্জাতিক চোরাচালানের অংশ। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আমিনুল ইসলাম বলেন, এটি একটি শিল্প। আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আইনে যা হবে সেটি সবার-ই মেনে নিতে হবে। কিন্তু একটি ঘটনাকে পূঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহল পুরো শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

বাংলাদেশের কোনো জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে হয়রানি না করার দাবি জানিয়ে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, ‘গোল্ড আমদানি করার কোনো সুযোগ সরকার দেয়নি। তবে আমরা বৈধভাবেই স্বর্ণের ব্যবসা করি। পোদ্দারদের কাছ থেকে স্বর্ণ কিনে ব্যবসা করি। আমরা বৈধ স্বর্ণ নীতিমালা চাই।’ একটি ঘটনাকে পূঁজি করে পুরো শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এটি হতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর স্মরণাপন্ন হব।

তিনি বলেন, সারাদেশে জুয়েলারিগুলোতে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এটা অন্যায়। অনেকেই ভয়ে শোরুম পর্যন্ত খুলতে পারছে না।

ব্যবসায়ী আজাদ আহমেদ বলেন, আপন নাম দিয়ে যে ব্যবসাটি আমরা পরিচালনা করে আসছি তা আমাদের পৈত্রিক ব্যবসা। বংশানুক্রমে এই ব্যবসা এখন আমরা তিন ভাই গুলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ এবং আমি আমরা যার যার স্বতন্ত্র শো-রুম পরিচালনা করছি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম এক থাকলেও প্রত্যেক ভাইয়ের ব্যবসা স্বতন্ত্র। অর্থাৎ যার যার ব্যবসা সে সে দেখভাল করছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, এক ভাইয়ের পরিবারের কোনো সদস্যের অন্যায় কাজের মাশুল পুরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে তা আমাদের কাম্য নয়। এদেশে কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। কেউ কোনো অন্যায় করে থাকলে এবং দোষ প্রমাণিত হলে তাকে সাজা ভোগ করতে হয়। কিন্তু এখানে আমাদের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জড়ানো হচ্ছে যেনও সব দোষ আপন জুয়েলার্সের।

আজাদ আহমেদ অভিযোগ করেন, তৃতীয় কোনও শক্তি এর পেছনে কাজ করে যাচ্ছে, যারা এ দেশের মঙ্গল চায় না। তারা এ শিল্পকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। কারণ দেশীয় কোনো শিল্প বিশ্বমানের কাজ করে যাবে এটা হয়তো সহ্য হচ্ছে না। তাই একটি ইস্যুর সঙ্গে অন্যান্য ইস্যু জড়িয়ে রাখছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/জেএ

Wordbridge School
Link copied!