• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা কারাগারে অনিয়ম, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীরা


মৌলভীবাজার প্রতিনিধি নভেম্বর ২৫, ২০১৬, ০৭:২৯ পিএম
জেলা কারাগারে অনিয়ম, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীরা

মৌলভীবাজার : ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ এই মন্ত্র বাংলাদেশ কারা বিভাগের। তবে মৌলভীবাজার জেলা কারাগার চলছে উল্টো স্রোতে। এখানে আসামিদের সাথে সাক্ষাৎ লাভে, জামিন প্রাপ্ত আসামিদেরকে ছাড়তে,  কারাগারে বন্দি আসামিদের প্রয়োজনীয় কাপড় ও খাবার দিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, আসামিদের সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের আইনি সুযোগ রয়েছে। ওই সাক্ষাৎ লাভে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে স্ব-ইচ্ছায় মসজিদের ফান্ডে ৫ টাকা জমা দিলে নির্ধারিত স্থান দিয়ে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা যায়। কিন্তু কারাগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারীদের বেআইনীভাবে মূল ফটকের ভেতর দিয়ে আসামি প্রতি ৫০০ টাকা হারে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন।

সরেজমনি জেল গেইটে গেলে সাক্ষাৎ করতে আসা মৌলভীবাজার বর্ষিজোড়া এলাকার আয়শা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ৫০০ টাকা দিয়ে মূল ফটকের ভেতরে আমার ছেলেকে দেখেছি। কুলাউড়ার কাদিপুর থেকে আসা মো. ইন্তাজ আলী বলেন, বাবা এখানে শুধু টাকার খেলা। টাকা না হলে কোন কাজ হয় না।

ছেলেকে দেখছেন কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এখন ১২টা পার হয়ে গেছে ৫ টাকা দিয়ে আর দেখা যাবে না তবে মূল ফটকের ভেতর দিয়ে ৫০০ টাকা হলে এখনো দেখতে পারব। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ আমাদের এত টাকা নেই। দুপুর ২টার পরে ৫ টাকা দিয়ে দেখব। এভাবেই প্রতিনিয়ত কারা কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বেআইনীভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন বড় অংকের টাকা।

এ সময় দেখা যায়, জেলা কারাগার পরিচালিত ক্যান্টিনে ১টি কাপড় দিতে ২০/৩০ টাকা রাখা হচ্ছে। মোস্তফা মিয়া নামের একজন দর্শনার্থী আসামি জসিমের নামে ৩টি কাপড় ৯০ টাকা দিয়েছেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলার একজন নারীর কাছ থেকে একটি কাপড়ের ব্যাগের দাম চাওয়া হয়েছে ১২০ টাকা। যেটা বাহিরে ২০/৩০ টাকা বিক্রি করা হয়। ক্যান্টিনের পূর্ব পাশে মূল্য তালিকা টাঙানো থাকলেও এটাতে টাকার পরিমাণ লেখা নেই। এভাবে প্রত্যেকটি জিনিসপত্র চূড়া মূল্যে বিক্রি করা হয়। বাহিরের মালামাল দিতে না পারায় সাক্ষাৎকারীরা চূড়া মূল্যে এসব জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য। মালামাল সঠিকভাবে হাজতিদের কাছে না পৌঁছানোরও অভিযোগ করেন উপস্থিত অনেক দর্শনার্থী।

এ সময় আরও দেখা যায়, জেলগেটের এরিয়ায় প্রবেশের মূল গেইটে জামান (+) ও নেইমপ্লেটবিহীন একজন নারী সিপাহী দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সাক্ষাৎ করতে আসা লোকদের মোবাইল রেখে নাম্বার যুক্ত একটি টুকেন দেন। বাহির হওয়ার সময় টুকেন দিয়ে মোবাইল প্রতি ৫ এবং কারো কাছ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন (প্রতিবেদকের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে)। এ সময় নেইমপ্লেটবিহীন আনসার নারীর নাম জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন।

কুলাউড়া উপজেলার মাহিরুল ইসলাম ও জুড়ী উপজেলার জামাল উদ্দিন বলেন, মূল ফটকের ভেতর দিয়ে দেখতে ৫০০ টাকা, কাপড় ও খাবার দিলে অতিরিক্ত টাকা এবং আসামির স্বাক্ষর আনতে হলে তাদেরকে ৩০০/৫০০ টাকা দিতে হয়।

এ বিষয়ে জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে আপনি দেখতে পারছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মোবাইল রাখতে ও ক্যান্টিনে টাকা রাখার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!