• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জেলেদের আশা নিরাস করে দিয়েছে ইলিশ শূন্য সগর


এনমুল ইসলাম, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) জুলাই ১৩, ২০১৮, ০১:৫০ পিএম
জেলেদের আশা নিরাস করে দিয়েছে ইলিশ শূন্য সগর

পটুয়াখালী : প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই জেলে পল্লীগুলোতে ফুঁটে ওঠে খুশির ঝলক। তাঁজা ইলিশের গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা সাগরকুলীয় চরাঞ্চল। পাল্টে যায় জেলে পরিবারের দূর্দশার চিত্র। স্বচ্ছলতা ফিরে আসে জেলে পরিবার গুলোতে। কিন্তু এ বছর জেলে পল্লীতে ভিন্নরূপ দেখা গেছে। চলমান বর্ষা তথা ইলিশ মৌসুমে সাগর থেকে শুন্যহাতে ফিরছে জেলেরা। ইলিশের বদলে দাদনের দায় নিয়ে তীরে ফিরছে একাধিক জেলে। ফলে উপকূলের জেলে পল্লী গুলোতে নেমে এসেছে হতাশার কালো আবাস।  

চলমান বর্ষা মৌসুম। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলাসহ বঙ্গোপসাগর ঘিরে কয়েক হাজার জেলের বসবাস। অন্যান্য পেশার তুলনায় এই অঞ্চলে জেলে, জেলে শ্রমিক তথা মৎস্য ব্যবসায় মানুষ প্রসারিত হয়। বলতে গেলে এই অঞ্চলটি ইলিশ তথা মৎস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এই উপজেলা থেকে রপ্তানী হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গোটা ইলিশ মৌসুমে উপজেলার বেশ কয়েকটি মৎস্য পয়েন্টে চলে ইলিশ কেনা-বেচার কর্মযজ্ঞ।

সাধারন মানুষ অন্যন্য কাজকর্ম বাদ দিয়ে এই কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকে। প্রতিবছরের মত এবার তেমনটাই হয়েছে। কিন্তু জেলেদের আশা নিরাস করে দিয়েছে ইলিশ শূন্য সাগর। জেলেরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছ শিকারের আশায় সাগরে গমন করলেও মাছ না নিয়ে ফিরছে তারা। ইলিশ মৌসুমে ইলিশের আকাল জেলেদেরকে হতাশ করে দিয়েছে। একদিকে মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদন টাকা পরিশোধের চিন্তা আরেক দিকে পরিবারকে দেখভাল করা প্রয়াস। এই দুই দুঃচিন্তা জেলে পল্লীতে অশনীর আবাস নিয়ে এসেছে। এই মৌসুমে জেলে পল্লী গুলোতে ইলিশ নিয়ে মহাকর্মযজ্ঞের রূপ এবার ভিন্ন রূপে পরিনত হয়েছে। এমনটাই জানায় রাঙ্গাবালী উপজেলার একাধিক জেলেরা।  

 এপ্রসঙ্গে কথা হয় রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ স্লুইসঘাট এলাকার জেলে আইয়ুব দফাদারের সাথে। তিনি জানান, ‘জাটকা নিধন বন্ধ করার জন্য সরকার অবরোধ ঘোষণা করে। কিন্তু অবরোধের সময় মৎস অফিস ও কোষ্টগার্ডের লোকদের টাকা দিয়া জাটকা শিকার করছে প্রভাবশালীরা। যার ফলে এবছর জেলেরা সাগরে গিয়ে ইলিশ পচ্ছেনা। আগামী দিন গুলোতেও পর্যাপ্ত মাছের আসা করা যাচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, মহাজনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাদন এনে জালের সাবার করেছি। জালে মাছ না পরলে ঋণের টাকা পরিশোধ করবো কি করে!

উপজেলার কোড়ালিয়া এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী কাওছার মৃধা জানান, ‘বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুমে সাগরে ইলিশের আকাল চলছে। জেলেরা সাগর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ নিয়ে ফিরতে পারছেনা। প্রতিদিনই তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। যার ফলে আমাদের ব্যবসায়ও ভাঁটা পারছে। গত ৯/১০ দিন ধরে গদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছও আসেনি। তাই গদি ফেলে ঘোরা ফোরা করছি। ঋণ নিয়ে জেলেদের দাদন দেয়া হয়েছে। সাগরে জেলেদের জালে মাছ না পরায় ঋণের বোঝা বইতে হবে। এমনকি পেশা ছাড়তে বাধ্য হবে অনেক জেলে।’

রাঙ্গাবালী উপজেলার গঙ্গীপাড়া এলাকার জেলে জসিম কাজী জানান, ‘১৫ লাখ টাকা ব্যায় করে ইলিশের সাবার করছি। এরমধ্যে ১০ লাখ টাকা আমার নিজের ছিল, বাকি ৫ লাখ টাকা ঢাকার এক দাদনদারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশের বোট সাগরে নামাইছি। ভাবছিলাম মৌসুমের শুরুতে সাগরে অনেক মাছ পরবে। সে আশায় ট্রলার নিয়ে সাগরে জাল ফেলে, যে মাছ পেয়েছি তাতে ট্রলারের খরচই উঠেনি। সাগরে তিন-চারদিন ব্যপি একটি খেও দিতে ৬০ হাজার টাকার মত খরচ হয়, অথচ ২০ হাজার টাকার মাছ নিয়েও ঘাঁটে আসা যায়না। এভাবে আর কয়েক দিন চলতে থাকলে সাগরে একটা জেলেকেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।’

নয়াচর এলাকার আলমগীর মাঝি বলেন, ‘মোরা মহাজনের কাছে গোনে দাদন আইন্না জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন মাল সামানা কিন্না নদীতে ইলিশ মাছ ধরি। জলদস্যু আইয়া আমাগো টাহা-পয়সা হগোল লইয়া যায়। এ্যাহন সাগরে এমনেতেই মাছ পরেনা, এর মধ্যে যদি জলদস্যুগোরে টাহা-পয়সা দেওয়া লাগে হ্যালে ক্যামন করমু।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো: মোসলেম উদ্দিন খাঁন জানান, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের মৌসুম পাল্টিয়েছে। তাই এখন সাগরে মাছ কম পরছে। আসা করছি আগমী মাসের শুরুর দিকেই ইলিশের দেখা মিলবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!