• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বলছে আগুন, পুড়ছে স্বপ্ন


এম সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর জানুয়ারি ৩, ২০১৭, ০৭:৫৯ পিএম
জ্বলছে আগুন, পুড়ছে স্বপ্ন

ঢাকা: ‘কয়েকবার ব্যবসায় লোকসান খেয়েছি। শেষ সম্বল ছিলো পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিন কাঠা জমি, সেই জমি বিক্রি করে কয়েকদিন আগে দোকানে মালামাল উঠিয়েছিলাম। অনেক স্বপ্ন দেখেছি, এই মালামাল বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করে আরো অনেক মালামাল ওঠাবো।  কিন্তু আজ চোখের সামনে আমার সব স্বপ্নগুলো পুড়ে গেছে। আমি এখন পথের ভিখাড়ী হয়ে গেলাম’।

পঞ্চগড়ের যুবক জমির উদ্দিন এভাবেই বিলাপ করছিলেন ডিসিসি মার্কেটে তার দোকান পুড়ে যাওয়ায়। চোখের সামনে সব পুড়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই যুবক। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে যখন গুলশান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট থেকে আগুনের শিখা আর ধোঁয়া বের হচ্ছিল, তখন জমির উদ্দিন মাটিতে গড়াগড়ি করে প্রলাপ বকছিলেন।

শুধু জমির উদ্দিনই নয়, আজ ডিসিসি মার্কেট পোড়ার সঙ্গে পুড়েছে আরো বহু ব্যবসায়ির স্বপ্ন। সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িদের কাছে জানতে চাইলে অনেকেই এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি। এর মধ্যে দু’একজন কথা বললেও তাদের দোকানের এতো বড় ক্ষতির কথা মনে করে বাকরুদ্ধ হয়ে জান তারা।

গত রাতের করুণ কাহিনীর কথা মনে করিয়ে দিয়ে নূর মোহাম্মদ নামের এক ব্যবসায়ী জানান- তিনি একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। ওই মার্কেটে তিনি কাঁচা মালের ব্যবসা করেন। সেই সুবাদে প্রতি ভোর রাতেই তাকে দোকানে আসতে হয়। তবে আজ দোকানে আসার আগেই শুনতে হয়েছে আগুনের কথা। বাসা থেকে আসতে আসতে দোকানে থাকা সব মালামাল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেটের একাংশ আগুনে ধসে পড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট কাজ করে সন্ধ্যার পরে নিয়ন্ত্রণে আসে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর ডিএনসিসি মার্কেটের অধিকাংশ দোকান পুড়ে গেছে। মার্কেটের অন্যান্য দোকানের মালামাল সরিয়ে রাস্তায় নামিয়ে রাখছেন মালিকরা। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পাশের গুলশান শপিং সেন্টারের প্রায় সব দোকানের মালামাল রাস্তায় নামিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ও তাদের স্বজনরা রাত থেকে আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের দোকান থেকে মালামাল বের করছেন। তবে অনেকেই কোনো মালামাল বের করতে পারেনি। এছাড়া যারা বের করেছে তাদের মালামালও রাস্তায় পড়ে আছে।

ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপাকালে জানা গেছে, ডিসিসি মার্কেটে ছোট-বড় প্রায় এক হাজার দোকান রয়েছে। সেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে মানুষের ব্যবহারের সকল ধরনের মালামাল পাওয়া যেত। গরীব-ধনী সকল ধরনের হাজার হাজার ক্রেতা ওই মার্কেটে আসতো প্রতিদিন। এমনকি বিদেশী ক্রেতারা ওই মার্কেট থেকে কেনাকাটা করতো বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে বিকেলে ডিএনসিসি মার্কেটের রিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক রুনা আহমেদ আহজারি করে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ ফায়ার সার্ভিস। তারা ঠিক মতো পানি দিলে আগুন হয়তো নিভে যেত। আমার দেড় কোটি টাকার মালামাল আছে দোকানে। সব শেষ হয়ে যেতে বসেছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলছে। এক জায়গায় কিছুটা নিভলেও অন্যদিকে জ্বলে উঠছে। পানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে পানি আনতে সময় লাগছে। ফলে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে।

অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মহাখালী-গুলশান, গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ ও হাতিরঝিল এবং বাড্ডা লিংক রোড থেকে গুলশান-১ এলাকায় যাতায়াতের রাস্তা অনেকটাই বন্ধ। ফলে যাত্রীবাহী গাড়ি চলছে ধীরগতিতে।

ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!