• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালানিখাত হতে হবে আত্মনির্ভরশীল


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৭, ০৮:৫৩ পিএম
জ্বালানিখাত হতে হবে আত্মনির্ভরশীল

ঢাকা: আমদানি করা গ্যাসের উচ্চ মূল্য হবে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে বহুগুন। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না আমাদের উৎপাদিত পণ্য। এ কারণেই আমাদের জ্বালানি খাত হতে হবে আত্মনির্ভরশীল। এ জন্য বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়িয়ে মহাসাগরে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে হবে।

জ্বালানি খাতকে আত্মনির্ভরশীল করতে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো বিষয়ে এভাবেই দাবি জানালেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ডিসিসিআইয়ের ২০১৭ সালের পরিকল্পনা ও ব্যবসায়িক কার্যকলাপ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে অপেক্ষাকৃত সস্তা শ্রম ও সাশ্রয়ী জ্বালানি খরচকে প্রধান শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে আবুল কাসেম খান বলেন, আমাদের নিজস্ব গ্যাস আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। আমদানি নির্ভর হতে চলেছে গ্যাস। এর জন্য উচ্চ মূল্যে নিতে হবে ব্যবসায়ীদের। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। পণ্যর দাম বাড়লে বিদেশে ও দেশের প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদের পণ্য চলবে না।

করণীয় সম্পর্কে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বিশাল মহাসাগর আমরা পেয়েছি। মিয়ানমার ইতোমধ্যে সাগরে পেয়েছে গ্যাসের ২৫টি ব্লক। আমরা এখনো কিছুই পাইনি। আমাদের জ্বালানিতে নিজেদের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। এজন্য বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে নিজেদেরকেই। দেশিয় কয়লা কোথায় ব্যবহার করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। জ্বালানি সক্ষমতা অর্জনে ব্যবসায়ীরা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

এসময় সাংবাদিকদের কাছে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে তথ্যবহুল একটি প্রতিবেদন উপস্থান করা হয়।

ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা অবকাঠামো নির্মাণে পিছিয়ে পড়ছি। ফ্লাইওভারগুলো নির্মিত হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে আজ ভিয়েতনাম অনেক উন্নত। শিল্পায়নের যুগে দেশটি তার জিডিপির ১০ শতাংশ ব্যয় করেছে অবকাঠামো উন্নয়নে। চীন ৯ শতাংশ, ভারত ৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৫ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৪ শতাংশ ব্যয় করছে জিডিপির। সেখানে আমরা মাত্র ২.৮৫ শতাংশ ব্যয় করছি। অবকাঠামো উন্নয়নে আমাদের সড়ক, রেল ও নৌপথকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

বিদেশি বিনিয়োগের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আবুল কাসেম খান বলেন, বার্ষিক ১২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভিয়েতনামে যাচ্ছে। স্যামসাং, নেসলে, এলজির মতো বড় বড় কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে দেশটিতে। আর আমাদের সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র ২.২ বিলিয়ন ডলার। এটা প্রয়োজনের তুলনায় মোটেও যথেষ্ট নয়। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত ও সংশ্লিষ্ট করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আন্তর্জাতিক এক তালিকায় ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে ১১৪তম। যা দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। যেখানে শ্রীলংকা ১০৩তম, ভিয়েতনাম ৭৩তম ও কম্বোডিয়া ৯৮তম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত রয়েছে ৬৮ তম ও থাইল্যান্ড ৪৯তম স্থানে।

ঢাকা চেম্বার মনে করে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। সে হিসেবে প্রতিবছর করতে হবে ২০ বিলিয়ন ডলার করে। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ভিয়েতনামের মতো আমাদের টেকসই উন্নয়ন করতে হলে এক্ষেত্রে বিনিয়োগ না বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

এক প্রশ্নের উত্তরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, অর্থনীতির সূচকগুলো এখন ভালো অবস্থায় আছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে গত দুই বছর ধরে। তারপরও কেন বিনিয়োগ বাড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। দেশে ব্যবসার খরচ বাড়ছে। হয়তো বাইরে চলে যাচ্ছে অর্থ। এমনই মনে করছেন তিনি।

প্রতি বছর দেশে ২৫ লাখ যুবশক্তি চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে উৎপাদনখাতের। তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হলে বেশি অর্থের যোগান দিয়ে এসএমই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মালয়েশিয়া তাই করেছে বলে ঢাকা চেম্বার মনে করে।

আবুল কাসেম আরো বলেন, ভিয়েতনামের মতো জ্বালানি এবং যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। ভারতের ন্যায় হাইব্রিড পিপিপি চালু করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের ন্যায় যোগাযোগ খাত উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসা করার খরচ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, এটা কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঢাকা চেম্বারের পরিকল্পনার বিষয় উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি জানান, ২০১৭ সালে কয়েকটি খাতকে বেশি অগ্রাধিকার দিবে সংগঠনটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এসএমই, জ্বালানি সক্ষমতা, ঢাকা-চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক করিডোর, কর ও ভ্যাট, দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা, ই-২কে, অবকাঠামো, পাট পণ্যে বহুমুখীকরণ।

অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে মহাসড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, ঢাকা চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, রেল ও নৗপথ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঢাকা শহর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন (এমআরটি এবং বি আরটি প্রকল্প), বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বন্দর, সমুদ্রবন্দর ও গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।

সংগঠনটির মতিঝিল অফিসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হোসেন এ সিকদার, পরিচালক আসিফ এ চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার আকবর হাকিম, হোসেন আকতার, হুমায়ুন রশিদ, ইমরান আহমেদ, কে এম এন মঞ্জুরুল হক, খ. রাশেদুল আহসান, মামুন আকবর, আলাউদ্দিন মালিক এবং মহাসচিব এএইচএম রেজাউল কবির প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!