• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জয়দেবপুরে নিরস্ত্র জনতার ওপর সৈন্যদের গুলি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৯, ২০১৮, ০৬:১৬ পিএম
জয়দেবপুরে নিরস্ত্র জনতার ওপর সৈন্যদের গুলি

ঢাকা : আজ ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল শুক্রবার। অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টাদশ দিবস। ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে এই দিন জনতার সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সৈন্যদের বেপরোয়া গুলিতে শহীদ হয় ৫০ জন। আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।

জয়দেবপুরে নিরস্ত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যারা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণ-আন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলার মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়।’

জয়দেবপুরে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজধানী ঢাকা। হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোটা, বর্শা-বল­ম নিয়ে রাজপথে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

সকালে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে তৃতীয় দফা একান্ত বৈঠক হয়। দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কোনো সহকারী ছিলেন না। এই আলোচনা চলাকালে রংপুর ও সৈয়দপুরে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাধারণ জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বাসভবনে এদিনও কালো পতাকা ওড়ে। সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চলে কর্মবিরতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।

সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উভয়পক্ষের উপদেষ্টাদের বৈঠক হয়। দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন।

ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় এসে সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন। সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তার নেই।’

করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ সব দলের পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোবিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণ-আন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না।’ তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শক্তি দেখতে পাবেন।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!