• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঝালকাঠির শীতল পাটির কদরই আলাদা


ঝালকাঠি সংবাদদাতা মে ২৪, ২০১৭, ০১:২৮ পিএম
ঝালকাঠির শীতল পাটির কদরই আলাদা

ঝালকাঠি : দেশজুড়ে সমাদৃত ঝালকাঠির শীতল পাটি। এখানকার চিকন বেতির শীতল পাটির চাহিদাও প্রচুর। পাটি শিল্প বাংলাদেশের লোকা চারে জীবন ঘনিষ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী লৌকিক উপাদান। অতিথিদের সামনে ভালো মানের শীতল পাটি বিছিয়ে নিজেদের আভিজাত্যকে ফুটিয়ে তোলেন তারা।

জানা গেছে, জেলার রাজাপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামে ৯০ বছরের বৃদ্ধ থেকে ৮-১০ বছরের শিশুরাও ব্যস্ত এ নিপুণ কারুকাজে। জেলায় তিনশ’রও বেশি পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। পুরাতন ঐতিহ্যের কারু হাতে গড়া শীতলপাটির জন্য রাজাপুরের দুটি গ্রামকে ‘শীতলপাটির’ গ্রাম নামেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

পাইত্রাবা মোর্তানামে এক ধরনের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কান্ড থেকে এ বেতি তৈরি করা হয়। পরিপক্ব পাটিগাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে পাটির বেতি তোলা হয়। এরপর ভাতের মাড় ও পানি মিশিয়ে বেতি সেদ্ধ করাহয়। ফলে বেতি হয়ে ওঠে মসৃণ ও সাদাটে। বেতির উপরের খোলস থেকে শীতল পাটি, পরের অংশ তুলে বুকার পাটি এবং অবশিষ্ট অংশ ছোটার (চিকন দড়ি) তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।

রাজাপুর উপজেলার হাইলা কাঠি ও ডহরশংকর গ্রামেই রয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। এরা সবাই পাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করে। রাতন ঐতিহ্যের কারু হাতে গড়া শীতল পাটির জন্য গ্রাম দুটিকে ‘শীতল পাটির’ গ্রাম নামে ডাকা হয়। গ্রামের শতশত ক্টর জমিজুড়ে নজরকাড়া পাটি গাছের বাগান। গ্রামগুলোতে শীতল পাটি, নামাজের পাটি ও আসন পাটি নামে তিন ধরনের পাটি তৈরি করা হয়। পাটির বুনন পদ্ধতি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমত, পাটির জমিনে ‘জো’ তুলে তাতে রঙিন বেতি দিয়ে নকশা তোলা হয়। দ্বিতীয়ত, পাটির জমিন তৈরি হলে তার চারদিকে অন্য রঙের বেতি দিয়ে মুড়ে দিয়ে।

এলাকাবাসী জানান, শৈল্পিক উপস্থাপনায় এবং নির্মাণ কুশল তার কারণে দক্ষ ও সুনিপুণ একজন পার্টিয়াল নারীর কদর রয়েছে সর্বত্র। একটি পাটি বুনতে ৩/৪ জনের দুই-তিন দিন সময় লাগে। যা বিক্রি করে ৫শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয়। মহাজনরা প্রতি পাটিতে একশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা লাভ করেন।

পাটি শিল্পীরা জানায়, পাইত্রা চাষ ও কেনার জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয়। এ জন্য শিল্পীরা মহাজন ও এনজিওদের কাছে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হচ্ছে না। শীতল পাটি শিল্পীর জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা না থাকায় পুঁজির জন্য শিল্পীরা দাদন ব্যবসায়ী, সুদখোর মহাজনদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন। তাছাড়া বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও এখন পর্যন্ত শীতল পাটি রফতানিযোগ্য পণ্যের স্বীকৃতি পায়নি।

পাটি শিল্পি মঞ্জু রানী বলেন, আমাদের তৈরি শীতল পাটি দেশজুড়ে সমাদৃত। দেশের বিভিন্নস্থানে মেলা কিংবা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। শুধু মাত্র শীতল পাটি বিক্রি করেই সংসারের খরচ এবং ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাই। তবে শীত এবং বর্ষার সময় আর্থিক সংকটে ভুগতে হয় আমাদের। সরকার যদি বিনা সুদে ঋণ প্রদান করতো, তাহলে বেশি পরিমানে পাইত্রা ক্রয় করে শীতল পাটি তৈরি করা সম্ভব হতো।

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমি (পাটিকর) জানায়, আমাদের পরিবারের সকলেই পাটি বুনতে পারে। বাবা-মাকে সহযোগিতা করার জন্য পড়া-লেখার পাশাপাশি পাটি তৈরি করি। এতে বাবা-মা ও আমার প্রতি খুশি।

স্থানীয় পাটি শিল্পী সমিতির সভাপতি বলাই চন্দ্র পাটিকর বলেন, গরমে একটু প্রশান্তির জন্য যুগযুগ ধরে দেশের মানুষ শীতল পাটি ব্যবহার করে আসছে। পাটি শিল্পীদের সরকারিভাবে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসএমই খাতের আওতায় ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫ জন পাটি শিল্পীদেরকে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। তবে বিনা সুদে ঋণ বিতরণ করলে আমরা উপকৃত হব।

জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, ঝালকাঠির শীতল পাটি দেশজুড়ে বিখ্যাত। চাহিদা থাকা সত্বেও পাটি বিপণন ত্রুটি থাকায় বছরের একটা সময় তাদের বসে থাকতে হচ্ছে। আমরা সরকারের অতি দরিদ্র্য কর্ম সৃজন কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র পাটি শিল্পীদের কাজের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। হয়তো এটা অচিরেই সম্ভব হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!