• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ১৩ লাখ শিশু


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩০, ২০১৬, ০১:২৫ পিএম
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ১৩ লাখ শিশু

বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোন না কোন শ্রমে নিয়োজিত। শিশু শ্রম নিষিদ্ধ থাকলেও ‘জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ-২০১৩’ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। শ্রম আইন অনুযায়ী, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা নিষেধ। এ ছাড়া শিশুদের দিয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রম একেবারেই নিষিদ্ধ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক শিশু শ্রমিকের আয়ে চলে তাদের পরিবার। অভাবের তাড়নায় নিরুপায় হয়ে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। অন্যদিকে সস্তা শ্রমের কারণে শিশুদেরও কাজে নিয়োগের প্রবণতা আছে। এসব কারণে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। সারা দেশে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু এখনও শ্রমিক। যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জীবিকার তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। অর্থাৎ প্রায় ১৩ লাখ শিশু দারিদ্র্যের কশাঘাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এদের অধিকাংশরই বিদ্যালয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। 

এ ছাড়া পিতামাতার অনাগ্রহ, কাছাকাছি দূরত্বে বিদ্যালয় না থাকা, গৃহস্থালির কাজ ও শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেও এসব শিশু শ্রমিক হচ্ছে। মূলত পাঁচ খাতে এসব শিশু কাজ করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

এর মধ্যে রয়েছে : পরিবহন এবং গুদামজাতকরণ, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবস্যা, যানবাহন মেরামত, নির্মাণ খাত এবং খনিজ খাত। এ ছাড়া কৃষি, বন ও মৎস্য খাতেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুরা। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু কাজ করছে খনিজ খাতে। প্রায় ৩৩ দশমিক ৩০ শতাংশ শিশু কাজ করে খাতটিতে। সংস্থার জরিপে শিশুদের কর্মস্থলকে আট কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অভিহিত করা হয়েছে। 

এর মধ্যে রয়েছে : স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ যন্ত্রপাতি, আগুন-গ্যাস, ধুলাবালি এবং ঝাঁকুনিপূর্ণ স্থান, অত্যাধিক গরম এবং উত্তপ্ত, ভূগর্ভস্থ অথবা অতি উচ্চতায়, পানি, অন্ধকার বা আবদ্ধ স্থান, রাসায়নিক ও বিস্ফোরক নিয়ে কাজ। শিশু শ্রমিকরা ধুলাবালি এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ যন্ত্রপাতিসংক্রান্ত কাজ বেশি করছে। কয়েক বছর আগে সরকারিভাবে সারা দেশে ৯৯ শতাংশের বেশি শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল। তবে ঝরে পড়া রোধ করা যাচ্ছে না। 

প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই একটি বড় অংশ বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। এদের কেউ কেউ বাস, টেম্পো, হিউম্যান হলারে সহকারী হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। বেশিরভাগ সময় এদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলে থাকতে হয়। কেউ কেউ চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মোটরগাড়ি ও রিকশার গ্যারেজ, সাইকেল নির্মাণ কারখানা, ইটভাটাসহ নানা ধরনের ছোট ছোট কারখানায় কাজ করছে। 

বাসাবাড়িতে এখনও শিশু শ্রমিক লক্ষ্য করা যায়। মেয়ে শিশু শ্রমিকের পাশাপাশি ছেলে শিশুদেরও রান্নাবান্নার কাজে পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বদ্ধপরিকর বলে জানানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। ২০১৬ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তা সম্ভব হয়নি। 

সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করলে শিশুদের এই ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ দেওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার এখন পর্যন্ত ৪৬টি মামলা করেছে। 

শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৪ বছর মেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬০ হাজার শিশুকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমরা সেমিনারে শিশুদের জন্য বড় বড় কথা বলি। আবার বাসায় গিয়ে শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুকে মারধর করি। মানসিকতার পরিবর্তন না হলে শিশুদের জন্য কোনো কাজই ঝুঁকিমুক্ত হবে না। এদিকে, বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শিশুদের অনেকেই শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার। গত বছর খুলনার শিশু রাকিবের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনা আলোড়িত করেছিল সারাদেশকে। 

এ ঘটনায় ২ জনের ফাঁসির আদেশও দিয়েছে আদালত। বছর কাটতে না কাটতেই এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ফের ঘটে নারায়ণগঞ্জে। চলতি মাসেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার যাত্রামুড়া এলাকার একটি তুলা কারখানায় সহকর্মীরা সাগর বর্মণ (১০) নামের এক শিশুর পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে দেয়ায় অসুস্থ হয়ে মারা যায় সাগর। 

ঘটনার পর সেখান থেকে আরও ২৪ শিশুকে উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, একই মালিকের এরকম তিনটি কারখানায় চার হাজার শ্রমিকের মধ্যে ১২০০ জন শিশু শ্রমিক। যাদেরকে নামেমাত্র মজুরি দিয়ে কাজ করানো হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!