• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
অস্তিত্ব সংকটে নিউ মার্কেট

ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হোক


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১১, ২০১৬, ১০:৪২ এএম
ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হোক

রাজধানীর নিউ মার্কেটের তিন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে একটি করে তলা বাড়িয়ে প্রায় ৭৫০টি দোকান নির্মাণের চেষ্টা উদ্বেগজনক। বুয়েট অনেক আগেই ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। কিন্তু ডিএসসিসির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী উদ্যোগটির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলছেন, বুয়েটের প্রতিবেদনে শুধু ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে, দোকান করা যাবে না বলা হয়নি। তাহলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কথাটির অর্থ কী? বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন ২০০৭ সালে। গত প্রায় এক দশকে নিশ্চয় স্থাপনাগুলোর মান আরো খারাপ হয়েছে।

বিপণিবিতানটি একসময় কেনাকাটা ছাড়াও আড্ডার এক প্রাণকেন্দ্র ছিল। এরশাদ আমলে আদি মাস্টারপ্ল্যান তছনছ করে পার্ক আর গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় গড়ে তোলা হয় তিনটি তিনতলা ভবন। উচ্চ আদালত নিউ মার্কেটকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে ৩৫ একর জমিতে গড়ে তোলা মার্কেটটিকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রত্বতত্ত্ব অধিদপ্তরে মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে আবেদন করা আছে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজিতে নিউ মার্কেট তছনছ হয়ে গেছে। গতকাল একটি দৈনিকের মূল প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্কেটটি ঘিরে কুচক্রী মহল বরাবরই সক্রিয় ছিল। তারা যেখানেই ফাঁকা জায়গা পেয়েছে, গড়ে তুলেছে স্থাপনা। খোলা জায়গা ফুরিয়ে যাওয়ার পর এবার ঝুঁকিপূর্ণ তিনতলা ভবনের ওপর বাড়তি তলা তোলার চেষ্টা চলছে। এ যেন ঐতিহাসিক বিপণিবিতানটিকে গলা টিপে মারারই আয়োজন।

সম্প্রতি ডিএসসিসির সভাকক্ষে প্রধান প্রকৌশলী ও রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দোকান নির্মাণের ওপর জোর দেন। তবে বুয়েটের প্রতিবেদনের কথা উঠলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফিটনেস যাচাইয়ের কথা বলা হয়। বুয়েট আগে পরীক্ষা করেছিল। কর্তৃপক্ষের যদি মনে হয় সে প্রতিবেদনে ভুল ছিল, বুয়েটকে আরো এক দফা পরীক্ষা করতে বলছে না কেন? যে বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা সরকারি-বেসরকারি বড় বড় স্থাপনার অভিভাবক হিসেবে গণ্য, তাদের মতামত অবহেলা করার পেছনে কী স্বার্থ জড়িত? ব্যবসায়ীদের সন্দেহ, বুয়েটকে পাশ কাটানো মানেই হচ্ছে ইচ্ছামতো প্রতিবেদন আনিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া। কারণ ৭৫০টি দোকানের একেকটি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হবে। অর্থাৎ কোটি কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারার মওকা!

নিউ মার্কেটের মৌলিকত্ব আগেই আমরা ধ্বংস করেছি। নতুন উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে ঐতিহাসিক বিপণিবিতানটির ক্ষত আরো বাড়বে। বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে থাকার কারণেও বিশেষজ্ঞদের মতের বাইরে যাওয়া অনুচিত। গত কয়েক বছরে মার্কেটের ভেতরে প্রায় ২০টি অস্থায়ী স্থাপনা তুলে বাণিজ্য চলছে। সরকারদলীয় লোকজনের সঙ্গে বাজার সার্কেলের কেউ কেউ অবৈধ এসব দোকানের সুবিধাভোগী। তাদের প্রভাবের কারণে স্থাপনাগুলো উচ্ছেদও করা যাচ্ছে না। এই প্রভাবশালী মহলই যে নতুন উদ্যোগে হাওয়া দিচ্ছে, বলাই বাহুল্য। ঢাকার অন্যতম এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে লুটপাট যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। ডিএসসিসির মেয়র বলেছেন, ফ্লোর বাড়ানোর কোনো ফাইল তাঁর কাছে এখনো যায়নি। মেয়র মহোদয় বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ ব্যবসায়ীদের উদ্বেগে সাড়া দিয়ে দ্রুত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবেন এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!