• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টার্গেট ধর্মভিত্তিক দল


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২১, ২০১৮, ০৯:৩২ পিএম
টার্গেট ধর্মভিত্তিক দল

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক দলগুলোর জোটগঠনের তৎপরতাও তত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ছোট দলগুলোরও কদর। জোটের আকার বাড়াতে বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছোট ছোট ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি এমনকি জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়াও অন্য জোটগুলোয় ভেড়াতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চলছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, আগামী মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। সংবিধান অনুযায়ি আগামী জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।  নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় ছোট দলগুলো বড় দলগুলোর কাছে গুরুত্ব তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিকে কেন্দ্র করেই জোটগুলোর তৎপরতা বেশি। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নিজের মধ্যে ঐক্য না হওয়ায় ভিড়ছে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর জোটে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। এরমধ্যে ১০টি রয়েছে ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে ১টি ইসলামি দল। বিএনপির বিশ দলীয় জোটেও রয়েছে ৩টি ইসলামি দল। এদিকে, সম্প্রতি গঠিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’-এ যুক্ত হয়েছে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধতি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। এই জোটে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে নিবন্ধিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অনিবন্ধিত দলও রয়েছে।

১৫ সেপ্টেম্বর ১৫টি সমমনা রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নিয়ে গঠিত হয়েছে নতুন জোট ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (আইডিএ)’। এ জোটে রয়েছে ৯টি  ধর্মভিত্তিক দল। গত ১৯ অক্টোবর ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করে। এ জোটে ৩৯টি দলের মধ্যে ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ৬টি। তবে এই জোটের সব দলই অনিবন্ধিত।

নির্বাচন কমিশনে ইসলাম ধর্মভিত্তিক নিবন্ধিত ১০টি দল হচ্ছে- জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস।

এরমধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, জামায়াতে ইসলামী বিএনপি জোটে রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। তবে আওয়ামী লীগের মহাজোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে জাকের পার্টি, সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। জাতীয় পার্টির জোটে রয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। জোট ছাড়া এককভাবে রয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এরমধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট দীর্ঘ দিন ধরেই জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের পহেলা আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের এক রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রসঙ্গে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, ‘আমরা মহাজোটের সঙ্গে আছি। নির্বাচনের আগে মহাজোট সক্রিয় হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।’ নির্বাচনি জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছোট দলগুলো নিজেদের সুযোগ-সুবিধার জন্য বিভিন্ন জোটে যায়। বড় দলগুলোও নির্বাচনে প্রভাব বাড়াতে ছোট দলগুলোকে জোটে টানে।’

গত বছরের ৭ মে ৫৮টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ গঠন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ২টি নিবন্ধিত দল ও ২টি জোটসহ মোট ৪টি শরিক দল নিয়ে গঠিত এ জোট। সম্মিলিত জোটের শরিক নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। সঙ্গে আছে ‘জাতীয় ইসলামী মহাজোট’ নামে একটি জোট। ইসলামী মহাজোটে আছে ৩৪টি ধর্মভিত্তিক দল।

‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, ‘অনেক দল জাতীয় পার্টির জোটে যুক্ত, আরও অনেক দল যুক্ত হতে আগ্রহী। আমাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে দলের নিবন্ধন বড় বিষয় নয়, সব দল একসঙ্গে হয়ে কাজ করাই মুখ্য। এক্ষেত্রে সেসব দল ধর্মভিত্তিক হতে পারে নাও হতে পারে।’

কোনও জোটে যাচ্ছে না চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘ক্ষমতার যাওয়ার রাজনীতি ইসলামী আন্দোলন করে না। আমাদের মূল লক্ষ্য ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। ফলে আদর্শগত মিল না হলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনও জোটে আমরা যাবো না।’ ইসলামী দলগুলোর কদর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, ফলে দেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে জোটে ধর্মভিত্তিক দলগুলো গুরুত্ব পায়। ভোটের কারণেই এসব গুরুত্ব, আর্দশিক কোনও কারণ এখানে নেই।’

এদিকে, বিভিন্ন জোটে ধর্মভিত্তিক দলগুলো গেলেও শুধু ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কোনও ঐক্য বা জোট নেই। গত কয়েক বছর ধরে সে চেষ্টা থাকলেও আলোর মুখ দেখেনি। বরং কয়েকটি ইসলামী দল কোন্দলের কারণে ভেঙেছে। ইসলামী ঐক্যজোট ২০১৬ সালে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে চলছে এককভাবে। বিরোধের কারণে ভেঙেছে খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। তবে রাজনৈতিক জোট না থাকলেও হেফাজতে ইসলামের ভেতরে ঐক্য রয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে।  

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘একটা সময় ইসলামি জোট ছিল। সেটি শক্তিশালী ভ‚মিকরা রেখেছে। তবে সে জোটস্থায়ী হয়নি নানা কারণে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটি সবাই অনুভব করি। কিন্তু দলীয় স্বার্থ, আস্থা না থাকার কারণে ঐক্যবদ্ধতা নেই।

অন্যদিকে সবার নিজের দলের ভালো অবস্থান, সংসদে আসন পাওয়াসহ নানা সুবিধার হিসাব থাকে। এসব  কারণে ভোটের রাজনীতির কারণে বড় জোটের সঙ্গে যাচ্ছে অনেক দল। বড় দলগুলোও নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ছোট দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে।’ দেশে মুসলমানের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ইসলামী দলগুলোর কদর বেশি বলেও তিনি মনে করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!