• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টার্গেট নির্বাচন: কর্মকৌশল ঠিক করছে বিএনপি


আবু ইউসুফ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর অক্টোবর ১৬, ২০১৬, ১০:৪০ পিএম
টার্গেট নির্বাচন: কর্মকৌশল ঠিক করছে বিএনপি

ঢাকা: বিএনপির এখন প্রধান টার্গেট নির্বাচন। যে করেই হোক নির্বাচনে অংশ নেয়া। নিরপেক্ষ বা মধ্যবর্তী নয়, একেবারে নতুন নির্বাচনের দাবি তুলেছেন নেতারা। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মকৌশল ঠিক করছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলে প্রাণচাঞ্চল্যের অভাব দেখা দিয়েছে। তাই দলকে চাঙা করতে আর রাজনীতির গতিধারা বজায় রাখতে ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। তাই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়াই মূল টার্গেট হিসেবে দেখতে শুরু করেছে নেতারা।

বিগত সময়ে সরকার হটানোর সহিংস ও অহিংস সব ধরনের চেষ্টায় ব্যর্থতার বোঝা বহন করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এর ওপর সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে দলের শীর্ষ, মধ্যম ও তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর নামে চলছে মামলা। যেগুলোর বেশির ভাগই সহিংস হামলার অভিযোগে দায়ের করা। এসব মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ এখনো দলের অন্তত এক ডজন কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে।

অন্যদিকে দলের শীর্ষনেতাদের দাবি, তাদের ওপর সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমন-পীড়ন বাড়ছেই। আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী।

এমনি পরিস্থিতিতে মাস কয়েক আগে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। ধারণা করা হয়েছিল, কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব রদবদলে দলে ফিরবে প্রাণ। কিন্তু তাতে তেমন ফল মেলেনি। একেবারে না হলেও বেশ কয়েক দফায় ঘোষণা করা হয়েছে নতুন কমিটি। বেশ বড় পরিসরের এই কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন রাজপথে থাকা অনেক সিনিয়র নেতা-নেত্রী। 

বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, বিগত দিনের নিষ্ফল আন্দোলন, দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অসংখ্য সিনিয়র নেতার হঠাৎ নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খোদ দলীয় প্রধান। সর্বশেষ আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি দলটি। 

এই যখন অবস্থা, তখন বিএনপির পরবর্তী করণীয় নিয়ে দলের ভেতরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং বারবার কর্মকৌশল পরিবর্তন করা হচ্ছে। আর বারবার কর্মকৌশল পরিবর্তনে হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে দলের তৃণমূল পর্যায়ে। তবে সেই হতাশার মেজাজ না বুঝেই অব্যাহত রয়েছে কর্মকৌশল নিয়ে ভাবনা। তবে এবারের ভাবনাটা নির্বাচন কেন্দ্রিক। 

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের দলের তৃণমূল পর্যায়ে কোনো হতাশা নেই। ইতিপূর্বে নানা কারণে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা কেটে গেছে। বর্তমানে তৃণমূলের নেতারা আগের মতো আবারও সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছেন। 

খন্দকার মাহবুব বলেন, তবে এটা ঠিক, বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলে কর্মকৌশল থাকবে এবং সেই কর্মকৌশল প্রয়োজনে বারবার পরিবর্তন হবে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেহেতু বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক বড় রাজনৈতিক দল, তাই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কর্মকৌশলকে স্বাগত জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। 

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে একটি গণজাগরণ সৃষ্টি করা হবে। সেই গণজাগরণে আগামী নতুন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের ব্যাপারে রূপরেখা পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

এদিকে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ মুহূর্তে এমন কিছু করবে না বিএনপি, যাতে পুনরায় হোঁচট খেতে হয়। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়মী লীগ সরকারের সঙ্গে এক ধরনের কৌশলী সম্পর্ক রেখে ধীরস্থিরভাবে মাঠে থাকার পথ বেছে নিয়েছে দলটি। তবে দেশে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ‘নির্বাচন কমিশনকে’ নিরপেক্ষ করার একটা শক্ত কর্মসূচি নেয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এই ইস্যুতে ভেতরে ভেতরে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও সরকারের একজন সাবেক আমলা এ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত দিনের সহিংসতার পথ ছেড়ে এখন অনেকটাই নমনীয়ভাবে রাজনীতির মাঠে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। কার্যত বর্তমান সরকারের সঙ্গে একটি ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে’ যেতে চায় বিএনপি এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়।

দলের চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা আরো বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। সরকারকে খেপিয়ে নয়। এ ক্ষেত্রে বিএনপি সময়োপযোগী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফিরতে চায়।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!