• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টিকিট পেতে আ.লীগে দৌড়ঝাঁপ


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৩, ২০১৬, ১০:২৭ এএম
টিকিট পেতে আ.লীগে দৌড়ঝাঁপ

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে। তাই এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই বললেই চলে। এর ওপর জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই সরকারি দল আওয়ামী লীগের হওয়ায় নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও দীর্ঘ সময় দেশ শাসন করা দল বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে এই ভোট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যা-ই বলি না কেন তার সবটাই চলছে আওয়ামী লীগেই। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চলছে নানা তৎপরতা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক অতীতে হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সহিংস অভিজ্ঞতায় প্রার্থী বাছাইয়ে এবার অনেকটাই সতর্ক হাইকমান্ড। মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরাও বসে নেই।

এরই মধ্যে দলের টিকিট পেতে হাইকমান্ডে দৌড়ঝাঁপ, যোগাযোগ, গ্রুপিং, লবিং শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের আগ্রহী প্রার্থীরা। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকেই তারা বিজয়ী করে জেলা পরিষদের দায়িত্ব দেবেন। আর এ কারণেই তফসিল ঘোষণার পর পরই আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তদবির করছেন প্রভাবশালী নেতাদের বাসা-বাড়িতে গিয়েও।

ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ প্রতিনিধিই এখন সরকারি দলের। এই বাস্তবতায় বিএনপি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছেন, তার দল জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন অর্থহীন। ফলাফল কী হবে তা আমরা জানি।’

ফলে দলীয় সমর্থন পেলেই জয় নিশ্চিত বলে ভাবছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে প্রার্থী হতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে দলের সমর্থন পেতে আবেদন করেছেন ৭০০ জন। এই বিপুলসংখ্যক নেতা আগ্রহ দেখানোয় গত ইউপি নির্বাচনের মতো আবার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শঙ্কা তৈরি হয়েছে দলটিতে।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় মোট ৬৫ হাজার জনপ্রতিনিধি ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে। এই হিসাবে প্রতি জেলায় ১৫টি করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। অর্থাৎ সারা দেশে ৯১৫টি ভোটকেন্দ্রে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সমর্থন মানেই জয় অনেকটা নিশ্চিত। এ জন্যই জেলা পর্যায়ের নেতারা দলীয় সমর্থন পেতে বেশ তোড়জোড় শুরু করেছেন। এ জন্য কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি হলে টাকার ছড়াছড়ি হওয়ারও সম্ভাবনা থেকে যায়। আছে হানাহানির আশঙ্কা, যা গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়। এ কারণে একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্য নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের কার কী অবস্থান তা জানতে একাধিক সমীক্ষা চালিয়েছেন। এসব সমীক্ষার প্রতিবেদন তার হাতে আছে। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের গত শুক্রবারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ‘দলমত’ জরিপে যিনি এগিয়ে থাকবেন, তাকেই দলের সমর্থন দেয়া হবে।

অন্যদিকে জেলা পরিষদের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি নেয়ার লক্ষ্যে গত রবিবার আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক নেতা জানান, সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে নিজ নিজ বিভাগের আগ্রহী প্রার্থীদের তালিকা দেয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে মতামত দেবেন। শিগগিরই দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৯ সদস্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রতিটি জেলার জন্য একজন করে প্রার্থী ঠিক করা হবে। এর বাইরে দল থেকে আর কেউ যাতে প্রার্থী না হতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের চেষ্টা থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় এবং এতে দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। তবে দল একজন করে প্রার্থীকে সমর্থন দেবে। আগ্রহী প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা ও দলের প্রতি অঙ্গীকার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার মতে, যোগ্য লোককে সমর্থন দেয়া হলে অন্য আগ্রহী প্রার্থীরা মেনে নেবেন।

এবারই প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকলেও জেলা পরিষদে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই। পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পরোক্ষ ভোটে। ভোট দেবেন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তাদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত ৫ জন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। রবিবার জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে।

দলীয় সমর্থনের জন্য আবেদন

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সমর্থন পেতে সর্বাধিক ২৯টি আবেদন পড়েছে পাবনা জেলা থেকে। এরপর শেরপুর থেকে ২৫টি, নোয়াখালীতে ২৩টি, চাঁদপুর ও পঞ্চগড় থেকে ২২টি করে আবেদন পড়েছে। বিভাগ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি, ১৩৩টি পড়েছে খুলনা বিভাগ থেকে। এর পরই চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১২৮টি আবেদন পড়েছে। সবচেয়ে কম ৩২টি আবেদন পড়েছে সিলেট বিভাগ থেকে।

দেশে ৬৪ জেলার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জন্য আলাদা আইন থাকায় সেখানে এ নির্বাচন হবে না। বাকি ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। বর্তমানে এসব পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রতিটি জেলা পরিষদকে ১৫টি সাধারণ ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্তিকরণের জন্য গত ৬ অক্টোবর সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকরা জেলার সীমানা বিন্যাস করেন। জেলা পরিষদ আইন-২০০০-এর ধারা ১৯-এর দফা ১৯ অনুসারে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গত ২৪ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করে।

ভোটার ও ভোটকেন্দ্র

৬১ জেলায় ৯১৫টি ভোটকেন্দ্রে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে। এই হিসেবে প্রতি জেলায় ১৫টি করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। মোট ৬৫ হাজার নির্বাচকমণ্ডলী (জনপ্রতিনিধি) ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তিন পার্বত্য জেলা বাদে সারা দেশের ৬১ জেলার ৪টি পরিষদে প্রায় ৬৫ হাজার জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদে। প্রতিটি ইউপিতে জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ ভোটার ১৩ জন। এর মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের তিনজন সদস্য রয়েছেন। এই হিসেবে সাড়ে চার হাজার ইউপির ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৫০০। এ ছাড়া ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে তিনজন করে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।

প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল

জেলা পরিষদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সরাসরি বা অনলাইনে দাখিল করা যাবে। অনলাইনে যেকোনো প্রার্থী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী প্রথমে ইসি সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে নির্ধারিত লিংকে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম এন্ট্রি করে নিবন্ধন করবেন। নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর প্রার্থী সঙ্গে সঙ্গেই একটি ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড পাবেন। প্রাপ্ত ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার পর সংশ্লিষ্ট যেকোনো পদের মনোনয়ন ফরম পাওয়া যাবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!