• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টিকিটের লাইনে দাঁড় করানো হয় স্ত্রী, মা ও শাশুড়িকে!


নিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ১২, ২০১৭, ০৭:০৭ পিএম
টিকিটের লাইনে দাঁড় করানো হয় স্ত্রী, মা ও শাশুড়িকে!

ঢাকা: সকাল ৮টা, মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটে অসংখ্য মানুষের লম্বা লাইন। একাডেমি ভবনের টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইনের ঠিক শুরুতেই ২০ থেকে ২৫ জন নারী জটলা বেঁধেছে। তাদের মধ্যে কারো কারো বয়স ৬০ কিংবা ৬৫ তো হবেই।

দেশ এখনো সেইভাবে ক্রিকেটের জোয়ারে ভেসে যায়নি যে এত বয়সে তাও শীতের সকালে তারা ভিড় করবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) টিকিটের জন্য।

তাহলে কারণ কি? কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই বেশ কয়েকজন আচলে মুখ ঢাকলেন। কোন ম্যাচের টিকিট কিনছেন জানতে চাইলেও নির্বাক।

এর মধ্যে দু্‌ই একজন জানালেন তাদের লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে টিকিটের জন্য। কিন্তু কোন ম্যাচের টিকিট বিক্রি হচ্ছে তা তারা জানেন না। তাহলে ঘটনার অন্তরালে কী!

অনুসন্ধানে জানা গেল কলোবাজারিরা সহজেই টিকিট পেতে স্ত্রী, বোন, এমনকি মা ও শাশুড়িকেও লাইনে দাঁড় করিয়েছেন। যারা আপনজনকে আনতে পারেনি তারা টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে এনেছেন প্রতিবেশী বয়স্ক নারীদেরও।

বৃদ্ধ নারীদের মধ্যে হালিমা খাতুন নামে একজন দ্রুত লাইন ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। তারই সঙ্গে কথা বলে জানা গেল টিকিট কালোবাজারির এমন রহস্য।

তিনি বলেন, ‘আমার পুঁতে (ছেলে) লগে (সাথে) টিকিট ব্যবসা করবো। তাই আমারে সকাল থেকে এখানে লাইনে রাখছে। আর পারতাছিনা, আজকে মনে হয় টিকিট ছাড়বো না।’

আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএল’র প্লে অফ রাউন্ড। এখানে নিশ্চিত হবে ফাইনালের দুই দল। যে কারণে টিকিট পেতেই এক নম্বর গেট সংলগ্ন টিকিট কাউন্টারে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে দর্শকরা টিকিটের আশায়। কিন্তু সত্যিকারের দর্শকদের টিকিট কেনার সুযোগ কোথায়, ইনডোর স্টেডিয়ামের গেটেও কালোবাজারীদের ভিড়। সেখানেও লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক মধ্যবয়স্ক নারী। তাদের বেশির ভাগই বস্তিবাসী। সংসারে পুরুষদের চাপেই তাদের টিকিটের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে।

এমনই একজন সুফিয়া বেগম জানালেন তার স্বামী নেশা করে। সংসার চালাতে ভাইদের উপরই নির্ভর করতে হয়। তাই ছোটভাইয়ের অনুরোধে এসেছেন। সেই সঙ্গে জানালেন এত টাকা কোথায় পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই ৩০ হাজার টাকা নিছে আমার কাছ থেকে বলছে টিকিটে অনেক লাভ। আমারে বেশকিছু টাকাও দিছে। এখন বলছে ফাইনালে অনেক লাভ তাই আমার টাকা আর ছোটভাই সুদে ২০ হাজার টাকা নিয়ে আসছে।’

এক সঙ্গেতো অনেক টিকিট কেনার সুযোগ নেই তাহলে কিভাবে টিকিট কিনছে! এ নিয়ে সুফিয়া বলেন, ‘আমি, আমার ছোট বোন, আমার শাশুড়িও আছে লাইনে। এছাড়া অন্য যারা আছে তাদের কাছ থেকে নগদ ৫০ টাকা বেশি দিয়ে কিনে নেই।’

বিপিএলকে কেন্দ্র করে টিকিট কালোবাজারিতে জড়িয়ে পড়েছে মিরপুরের ৫০ থেকে ৬০ জন কিশোর ও তরুণ। এরা আবার নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র অঙ্গসংগঠনেরও সদস্য বলে পরিচয় দেয়। তারা এতটাই বেপোয়ারা যে কেউ সাহস পায় না তাদের ঠেকানোর। তারা প্রত্যেকেই বাসা থেকে না পারলে ধার করে টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে টিকিট কিনতে। কাউন্টারেতো এত টিকিট পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে আসছে টিকিট?

স্টেডিয়ামের ৩ নম্বর গেটের বিপরীত দিকে রয়েছে লাভ রোড। সেখানে মামুন চত্বরে বসে বসে তাদের টিকিট সংগ্রহের ভয়াবহ নমুনা দেখা গেল। ৮/৯ জনের একটি কিশোর দল সর্বক্ষণই কথা বলে যাচ্ছে টিকিট নিয়ে। সেখানে যার সঙ্গে যোগাযোগ করে টিকিট নেয়া যায় তাদের সঙ্গেই কথা বলছিল। এমনকি তারা নিজেরাই বেশি টাকায় টিকিট কিনছিল। তাদের সঙ্গে নাকি আছে বিসিবি’র ভিতরের লোক!

এক কিশোরকে প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘আমার মামা আছে স্টেডিয়ামে কাজ করে।’ এ কথা বলতেই পরক্ষণেই বাকিরা তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এদেরই একজন বলে উঠে টিকিট লাগলেন নেন, এত কথা বলেন কেন? শুধু তাই নয়, তারা পুলিশের কাছ থেকেও টিকিট পায় বলে দাবি করছিল এক কিশোর!

প্রশ্ন হচ্ছে- টিকিট বিক্রি করে কত লাভ? নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণ জানালেন, ‘আমাদের আজকের টিকিট ৩০০ টাকার টা ৯০০ টাকা।’ অনুমান করতে বাকি থাকে না কেন টিকিট নিয়ে মরিয়া তারা। তবে প্রশাসনের নাকের ডগাতে কীভাবে হচ্ছে এসব? উত্তর সব সময়ের মতোই ধোঁয়াটে।-মানবজমিন।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!