• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টিভি উপস্থাপিকা ধর্ষণ: নান্টুকে খুঁজছে পুলিশ


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০২:০৬ পিএম
টিভি উপস্থাপিকা ধর্ষণ: নান্টুকে খুঁজছে পুলিশ

ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী অনিকা (ছদ্মনাম)। টেলিভিশনে উপস্থাপনার পাশাপাশি নাটকে অভিনয় করেন তিনি। এই সূত্রে ২৭ মার্চ অভিনেতা শরিফুল ইসলাম নান্টুর সঙ্গে পূর্বাচল শুটিং স্পটে তার পরিচয় হয়।

এরপর কয়েকটি নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেন তারা। পাশাপাশি দু’জন মিলে ফ্যাশন শো ও মিউজিক ভিডিও করেন। এক পর্যায়ে তারা একে-অপরের প্রেমে পড়েন। কারও সঙ্গে কেউ প্রতারণা করবে না- এই মর্মে আজমীর শরীফে গিয়ে শপথ নেন।

ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায় পৌঁছে যে, নিজের মোবাইল ফোন এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নান্টুর কাছে দিয়ে রাখে অনিকা। আর এসবই কাল হয়েছে তার জন্য। শপথ নেয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা দেয় বিপত্তি। শপথের সুযোগ নিয়ে অনিকাকে ধর্ষণ করে নান্টু। আর ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয় ফেসবুকে।

বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার নান্টুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় মামলা করেছেন অনিকা। নান্টুকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে কদমতলী থানা পুলিশ।

কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। এসআই ছাইদুল ইসলামকে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে।

এসআই ছাইদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আসামিকে গ্রেপ্তারে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা জোরালো অভিযান চালাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নান্টু বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। স্ত্রী-সন্তানের কথা গোপন করে অনিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সে। নান্টু রাজধানীর দক্ষিণখানের ৯৯৯ নম্বর রাস্তার ৩৯৮ নম্বর বাড়িতে থাকে। তার বাবার নাম এরেং মিয়া। আর অনিকা থাকেন কদমতলী থানাধীন তার বোনের বাড়িতে।

অনিকা বলেন, ‘পরিচয়ের পর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নান্টু আমার প্রতি ভীষণ কেয়ারিং হয়। তার দুটি মোবাইল নম্বর থেকে আমার দু’টি নম্বরে ফোন করে প্রায়ই খোঁজ-খবর নিত। আমাকে অভিভাবকের মতো দেখাশোনা করত।

এরই ধারাবাহিতকায় দু’জনের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সরল বিশ্বাসে আমি আমার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ডও নান্টুকে দিই। আমার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরও থাকত তার কাছে। সেই সুবাদে আমার আত্মীয়স্বজনের নম্বরও জানা ছিল তার।’

মামলার এজাহারে অনিকা উল্লেখ করেন, ‘অভিনয় এবং ফ্যাশন শোর কাজে নান্টু এবং আমিসহ কয়েক শিল্পী সম্প্রতি ভারতে যাই। কাজ শেষ করে নান্টুর সঙ্গে আজমীর শরীফে যাই। আজমীর শরীফ স্পর্শ করে নান্টু এই মর্মে ওয়াদাবদ্ধ হয় যে, সে একজন অবিবাহিত পুরুষ। জীবনে আমার সঙ্গে কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।

আমার সঙ্গে প্রতারণাও করবে না। পাশাপাশি দেশে ফিরেই সে আমাকে বিয়ে করবে। দেশে ফিরে অবশ্য সে আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আমি তার এবং আমার পরিবারের অভিভাবকদের কাছে প্রস্তাব দেয়ার অনুরোধ করলে সে বেঁকে বসে।’

উপস্থাপিকা অনিকা এজাহারে আরও বলেন, ‘জরুরি কাজের কথা বলে ২ আগস্ট দুপুরে নান্টু আমার বাসায় আসে। এ সময় আমার দুলাভাই ব্যবসায়িক কাজে এবং বাচ্চাদের নিয়ে বোন বাসার বাইরে ছিলেন। নান্টু আমার বাসায় আসার পর তাকে ড্রয়িংরুমে বসতে দিয়ে চা বানাতে রান্নাঘরে যাই।

চা নিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে। পরে জোর করে বিছানায় নিয়ে ধর্ষণ করে। আমি চিৎকার করতে চাইলে জানায়, ‘দু’দিন পরে তো সে আমাকে বিয়েই করবে।’

অভিনেত্রী অনিকা বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পর অমি নান্টুর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। এ কারণে সে আমাকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে নানা ধরনের হুমকি দেয়। সে জানায়, ঘটনার দিন আমি যখন চা বানাতে রান্নাঘরে গিয়েছিলাম, তখন সে ওই ঘরে (ধর্ষণের স্থান) গোপন ভিডিও সেট করে রেখেছিল।

তার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলে সে ধর্ষণের ওই ভিডিও ও স্থিরচিত্র ফেসবুক এবং ইমুর মাধ্যমে প্রকাশ করে দেবে। এরই মধ্যে আমি জানতে পারি নান্টু বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী অনিকা আরও বলেন, ‘ওই ভিডিও প্রকাশ না করতে নান্টুকে আমি বারবার অনুরোধ করি। আমার বোনও নান্টুর কাছে একই ধরনের অনুরোধ করেন। তারপরও নান্টু ৮ আগস্ট আমার ফেসবুক ইনবক্সে ওইদিনের আপত্তিকর ভিডিও পোস্ট করে।

এছাড়া একটি ইমু অ্যাকাউন্ট খুলে ওইসব ছবি ও ভিডিও আমার বোনসহ আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠায়। পাশাপাশি আরও আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় নান্টু।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!