• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা


নাহিদ আল মালেক, বগুড়া জুন ৮, ২০১৮, ০৩:৫১ পিএম
টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা

বগুড়া : জেলার শেরপুর ও ধুনট উপজেলার গ্রামীণ নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন জালি টুপি তৈরি করে। এই দুই উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক নারী ও কন্যা শিশুরা এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

ঈদকে সামনে রেখে গ্রামীণ নারীদের টুপি তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। এক সময়ে যেসব গ্রামীণ নারীরা সংসারের কাজ কর্ম সেরে দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরে বসে থাকত। কিংবা পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প গুজবে সময় কাটাতো। এখন তারা টুপি তৈরির কাজে এতটাই ব্যস্ত যে কারো সঙ্গে কথা বলার সময়টুকুও নেই। তবে এই ব্যস্ততা ঈদের আগে আরও বেড়ে গেছে। টুপি তৈরির কাজে শুধু গৃহবধূরাই ব্যস্ত নয়। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরাও টুপি তৈরির কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।

বগুড়া জেলা জালিটুপি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. জুয়েল আকন্দ জানান, প্রায় বিশ বছর পূর্বে শেরপুর উপজেলার চককল্যাণী গ্রাম থেকে বিশেষ এই জালি টুপি তৈরি হয়। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের নারীরা বাড়তি উপার্জন করতে এই টুপি তৈরি করছে। ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে শুধুমাত্র শ্রম দিয়েই তারা আজ স্বাবলম্বী হচ্ছে।

ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী গ্রামের গৃহবধূ মোমেনা খাতুন জানায়, ছেলের বাবার একলার কামাই দিয়া আগে আমাগোরে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর আমাগোরে তেমন কোনো কষ্ট করতে হচ্ছে না। মোমেনা খাতুন ৫/৬ বছর আগে থেকে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেছে। ঘর গৃহস্থের কাজ শেষে দিনের যেটুকু সময় পায় সেই সময়েই দৈনিক ৩/৪টা টুপি সেলাই করতে পারে। সে জানায় টুপি বিক্রি করতে কোনো হাটে বাজারে যেতে হয় না। বাড়ি থেকেই পাইকাররা এসে প্রতি সপ্তাহে টুপি কিনে নিয়ে যায়। সব খরচ বাদে তার প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়।

শুধু মোমেনা খাতুনই নয় তার মতো ওই গ্রামের গৃহবধূ লাকি, সনি, কুলসুম, রানু, পারুলসহ আরও অনেকেই টুপি সেলাই ও বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে।

গোপালনগর ইউনিয়নের মহিশুরা ইউএকে উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সমাপ্তী খাতুন ও জেসমিন আকতার। তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়ের কাছে টুপি তৈরির করার কাজ শিখে ৩য় শ্রেণি থেকে টুপি তৈরি করছে। তারা প্রতি মাসে টুপি বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করে। তাদের লেখাপড়ার খরচ বাবা-মার কাছ থেকে আর নিতে হয় না।

টুপি সেলাই কাজে ব্যস্ত নারীরা জানায়, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়ে টুপির চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে ঈদের আগে থেকেই তারা টুপি সেলাইয়ের কাজে বেশিখ সময় ব্যয় করছে।

গ্রামের নারীদের টুপি সেলাইয়ের কাজে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় সুতা ও ক্রুস কাটা। সুতা ও ক্রুস কাটা পাইকাররা সরবরাহ করে থাকে। পাইকাররা ২৫ টাকায় ক্রুস কাটা এবং ৫০ থেকে ১০০ টাকার সুতার ডলার সরবরাহ করে। কারো টাকা না থাকলেও বাকিতে ওই সব কাঁচামাল যোগান দেয় তারা। পরবর্তীতে টুপি ক্রয় করার সময় সময় ক্রুসকাটা ও ডলারের দাম কেটে রেখে বাকী টাকা দেয়।

পাইকারি টুপি ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া জানান, প্রতি সপ্তাহে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সুতা ও ক্রুসকাটা সরবরাহ করতে হয়। পরের সপ্তাহে সেলাই করা টুপি কিনে আনি। প্রতিটি টুপির দাম প্রকার ভেদে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি আরও জানান, আগে শুধু এক ডিজাইনের টুপি তৈরি হতো। কিন্তু এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে পোশাকের যেমন বাহারী নাম করণ হয়েছে। তেমনি টুপিরও বাহারী নাম ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে।

যেমন নব্বইফুল, কলারফুল, বকুলফুল, তালাচাবি, স্টার, গুটি, বিস্কুট, আনারস, মৌচাক ও মাকড়াশার জাল। ডিজাইন ভেদে সবচেয়ে বেশি দাম নব্বই ফুল ও আনারস টুপির। নব্বই ফুল টুপির দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা, আনারস টুপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মৌচাক ২৮ থেকে ৩০ টাকা, মাকড়াশার জাল ২০ থেকে ২৫ টাকা, বিস্কুট ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

স্থানীয় এসব ব্যবসায়ীরা গ্রামের নারীদের সেলাই করা টুপি কিনে নিয়ে ঢাকার চকবাজার, বাইতুল মোকারম মসজিদ মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করেন। সেখান থেকে গ্রামের নারীদের তৈরি করা টুপি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!