• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাক ড্রাইভার থেকে ‘রক এন্ড রোল’-এর রাজা


বিনোদন ডেস্ক জানুয়ারি ৮, ২০১৭, ০৬:০০ পিএম
ট্রাক ড্রাইভার থেকে ‘রক এন্ড রোল’-এর রাজা

ঢাকা: এলভিস প্রিসলি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের মধ্যে একজন । তিনি তার ডাকনাম এলভিস নামেও বহুল পরিচিত। তাকে বলা হয় 'কিং অব রক এন্ড রোল ' অথবা শুধু 'দ্য কিং'। শুধু আমেরিকাতেই নয়, সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা এলভিস প্রিসলি। বিংশ শতাব্দীর খুবই আলোচিত সাংস্কৃতিক আইকন বলা হয় তাকে। আরও বলা হয় রক অ্যান্ড রোলের রাজা। এল্‌ভিস প্রেস্‌লি (Elvis Presley) (জানুয়ারি ৮, ১৯৩৫ – আগস্ট ১৬, ১৯৭৭), কিংবদন্তিতুল্য মার্কিন রক্‌ সঙ্গীত শিল্পী। ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বহুল বিক্রিত এলবামের সঙ্গীত শিল্পীদের তিনি অন্যতম।

জন্ম ও পরিবার:
এলভিস প্রিসলিকে বলা হয় মিসিসিপির গর্ব। কারণ ১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি এ মিসিসিপির টুপেলোতেই জন্মগ্রহণ করেন ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবামের সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী এলভিস প্রিসলি। তার পুরো নাম এলভিস অ্যারন প্রিসলি। এলভিস প্রিসলির যমজ ভাই জেসি গ্যারন প্রিসলি, যিনি প্রিসলির ৩৫ মিনিট আগে জন্মেছিলেন। প্রিসলির বাবার নাম ভেরনন এলভিস প্রিসলি এবং মায়ের নাম গ্ল্যাডিজ লভ। মা-বাবা দু’জনের প্রতিই এলভিসের দুর্বলতা থাকলেও মায়ের সান্নিধ্যেই বাল্যকাল কেটেছে তার।

সংগীতে হাতেখড়ি: 
জন্মগতভাবেই প্রিসলির গানের প্রতি ছিল প্রবল আকর্ষণ। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা প্রিসলির ভাগ্যে সংগীতচর্চার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জোটেনি। তারপরও ছেলের প্রতিভা দেখে বাবা খুবই কম দামি একটি খেলনা গিটার কিনে দেন প্রিসলিকে। একে তো কাজের সন্ধানে তাদের পরিবার খুব বেশিদিন এক জায়গায় থাকতে পারত না, তার ওপর তার মা-বাবা অনুভব করেন মিসিসিপিতে থাকলে প্রিসলি খুব বেশি এগোতে পারবেন না। সেই ভাবনা থেকেই প্রিসলির বয়স যখন ১৩ বছর তখন তারা সপরিবারে চলে যান টেনেসি রাজ্যের মেমফিস শহরে। সেখানে যাওয়ার পর প্রিসলিকে তার মা-বাবা স্কুলে ভর্তি করে দেন। এ স্কুলেই মিউজিকের ওপর কোর্স শুরু করেন প্রিসলি। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গানের চর্চাও চলতে থাকে। এভাবেই একসময় স্কুল, চার্চ ও পাড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ হয় এলভিস প্রিসলির।

গ্র্যাজুয়েট ট্রাক ড্রাইভার: 
১৯৫৩ সালে তিনি মেমফিসের এলসি হিউমস হাই স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। পড়াশোনা শেষে কিছুদিন কাজ করেন একটি সিনেমা হলে। এরপরই তিনি স্থানীয় একটি ইলেকট্রিক কোম্পানির ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কারণ তার প্রথম অ্যালবামের রেকর্ডিংয়ের খরচ লাগবে। প্রায় এক বছরের মাথায় সান রেকর্ডস থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বাণিজ্যিক অ্যালবাম ‘দ্যাটস অল রাইট মামা’। বিক্রি হয় কুড়ি হাজার কপি।

সঙ্গীত পেশা: 
১৯ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে পেশাদার সংগীত জীবনের শুরু হয় এলভিস প্রিসলির। প্রথমে কান্ট্রি পরে রিদম অ্যান্ড ব্লজ ইত্যাদি চেষ্টা করলেও, দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে একেবারে ভিন্ন মাত্রার সুরে ডুব দেন তিনি। ভেসে যান রক অ্যান্ড রোলের ছন্দ ও মূর্ছনায়। ‘লাভ মি টেন্ডার’ গানটি দিয়ে রক অ্যান্ড রোলকে বিশ্ব দরবারে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন এলভিস প্রিসলি। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় এলভিস প্রিসলির ‘হার্ট ব্রেক হোটেল’। মুক্তির পরপরই বদলে যায় তার জীবন। গানটি আমেরিকার টপ চার্টের শীর্ষ স্থানটি দখল করে নেয়। এরপর শুরু করেন টেলিভিশনে গান গাওয়া। এখানেও শীর্ষে পৌঁছতে খুব বেশিদিন লাগেনি। তার গাওয়া গান দখল করে জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্থানটি। একই সঙ্গে সেই সময়ের সেরা গায়কের অবস্থানটিও নিজের করে নেন প্রিসলি। তার নিজস্ব একটি ব্যান্ড দলও ছিল। দলটির নাম ছিল ‘দ্য ব্লু মুন বয়েজ’। স্কটি মুর ও বিল ব্ল্যাককে নিয়ে প্রিসলির এ দলের অন্ধভক্ত হয়ে পড়ল সমসাময়িক টিনএজাররা। বিশেষ করে প্রিসলির কোমর দোলানো নাচ খুবই পছন্দ ছিল তরুণীদের। আর এ কারণেই তার অন্য নাম হয়েছিল ‘এলভিস দ্য পেলভিস’। এত বেশি গান তিনি করেছিলেন যে, মৃত্যুর আগেই তার গাওয়া ‘সলো’ এবং অ্যালবাম গানের বিক্রি সংখ্যা ছিল ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি।

অভিনেতা প্রিসলি:
গানের পাশাপাশি অভিনয় অঙ্গনেও পদচারণা ছিল এলভিস প্রিসলির। তার অভিনীত প্রথম ছবিটি ছিল ‘লাভ মি টেন্ডার’। এটি মুক্তি পায় ১৯৬৫ সালের নভেম্বরে। সব মিলিয়ে ৩৩টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। সমালোচকরা নাক সিঁটকালেও তার অভিনীত প্রতিটি মুভিই বক্স অফিসে সাড়া জাগিয়েছিল। ১৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছিল তার মুভিগুলো। সে সময়ে সব বিখ্যাত অভিনেতার সঙ্গেই অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিল প্রিসলির। 

অন্যসব প্রতিভা: 
সঙ্গীত ও অভিনয় জীবনের বাইরেও প্রিসলির আরও অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা ছিল। কারাতেতে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছিলেন ১৯৬০ সালে। জীবনের কিছুটা সময় সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবেও কাজ করতে হয়েছিল প্রিসলিকে। তবে সেটা স্বেচ্ছায় নয়। বাধ্যতামূলকভাবে ১৯৫৮ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করার পর নাড়ির টানে আবার ফিরে আসেন সংগীতে। কিছুদিন মঞ্চে গান গাওয়ার পর ১৯৬০ সালে তিনি হলিউডে মুভি নির্মাণের কাজে হাত দেন। পাশাপাশি সংগীত পরিচালনার কাজও করেন।

প্রেম ও বিয়ে:
প্রিসলির অনিচ্ছাকৃত হলেও এ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার কারণেই দেখা পান জীবনের পরম বন্ধুর। সেনাবাহিনীর সৈন্য হিসেবে জার্মানিতে অবস্থানের সময় চৌদ্দ বছর বয়সী প্রিসিলা অ্যান ওয়াগনারের প্রেমে পড়েন তিনি। দীর্ঘদিন প্রেম পর্ব শেষে ১৯৬৭ সালের ১ মে তারা বিয়ে করেন। প্রিসলি-প্রিসিলার সংসারে আসে একমাত্র কন্যা লিসা ম্যারি প্রিসলি।

কনসার্টে বিশ্ব বাজিমাত: 
১৯৭০ সাল থেকে লাইভ কনসার্টে মেতে ওঠেন প্রিসলি। তার কনসার্টগুলোর সব টিকিটই অগ্রিম বিক্রি হয়ে যেত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক স্টেজ শোতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। জীবনে প্রচুর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, শুধু গসপেল মিউজিকের জন্যই তিনবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন।

অ্যালবাম ও সিঙ্গেলস:
এলভিস প্রিসলির উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে- লাভিং ইউ, সামথিং ফর এভরিবডি, ব্লু হাওয়াই, পট লাক, ফ্রম এলভিস ইন মেমফিস, মুডি ব্লু, ইফ আই ক্যান ড্রিম ইত্যাদি। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য সিঙ্গেলসগুলোর মধ্যে রয়েছে- আই ফরগট টু রিমেমবার টু ফরগেট, হার্টব্রেক হোটেল, আই ওয়ান্ট ইউ, ডোন্ট বি ক্রুয়েল, হাউন্ড ডগ, লাভ মি টেন্ডার, অল শুক আপ, জেলহাউস রক, স্টাক অন ইউ, ইটস নাও অর নেভার, রিটার্ন টু সেন্ডার, সাসপিশিয়াস মাইন্ড, মুডি ব্লু, আ লিটল লেস কনভারসেশন ইত্যাদি।

বিয়ে বিচ্ছেদ: 
খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি প্রিসলি-প্রিসিলার সংসার। মাত্র ৬ বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে ডিভোর্স হয়ে যায় তাদের। এ সময় আমেরিকা জুড়ে ছিল এলভিস প্রিসলির চাহিদা। স্টেজ প্রোগ্রাম করার জন্য তাকে বিভিন্ন শহরে ছুটে বেড়াতে হতো। তাই একদিকে বিয়ে বিচ্ছেদ ও অন্যদিকে ছোটাছুটি এবং শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া- সব মিলিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। এ সময়েই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

তার চলে যাওয়া: 
১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট ৪২ বছর বয়সে বিশ্বের সংগীতভক্তদের কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেন এলভিস প্রিসলি। বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাকে। তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় অতিরিক্ত মাদক গ্রহণকেই..

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!