• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাফিক পুলিশের ‘ভিডিও কেস’ ফর্মুলা!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৯, ২০১৭, ০৬:২০ পিএম
ট্রাফিক পুলিশের ‘ভিডিও কেস’ ফর্মুলা!

ঢাকা: প্রতিদিনের মতো বিকেল ৫টায় অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলেন ইকবাল চৌধুরী। পথে তার চালক জানালেন, গাড়িতে জ্বালানি নেই। তাই উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় নেমে রিকশায় করেই ৬ নম্বর সেক্টরের বাসায় রওনা হন ইকবাল। চালক চলে যান জ্বালানি আনতে।

এ ঘটনার তিনদিন পর ইকবাল চৌধুরীকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে চিঠি পাঠিয়ে ডাকা হয়। উত্তরার ট্রাফিক বিভাগের ডিসি অফিসে গিয়ে তার গাড়ির উল্টোপথে চলাচলের ভিডিওচিত্র দেখে তিনি অবাক হয়ে যান!

একপর্যায়ে ইকবাল চৌধুরী বুঝতে পারেন, সেদিন তার চালক জ্বালানি আনতে গিয়ে উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরেছিলেন। চালক যখন উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা তখন সেই দৃশ্য ভিডিওচিত্রে ধারণ করছিলেন।

ঘটনাস্থলে চালককে আটকানো হয়নি কিংবা জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়নি। চালক ‘নিরাপদেই’ আইন ভঙ্গ করেন। কিন্তু জরিমানা থেকে রেহাই কি পেলেন? অগত্যা চালকের দোষে ১৬শ’ টাকা জরিমানা গুণলেন গাড়ির মালিক ইকবাল চৌধুরী।

আইন ভঙ্গ করে এমন জরিমানা শুধু ইকবাল চৌধুরীকেই গুণতে হয়নি, আছেন রাজধানীর আরো হাজার হাজার গাড়ির মালিক। এটি মূলত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের নতুন সংযোজন। এই প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়েছে ভিডিও কেইস বা সচিত্র মামলা।

উন্নত বিশ্বের আদলে গত একবছর ধরে রাজধানীর ট্রাফিক বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে ‘ভিডিও কেস’ ফর্মুলা। আর তাতে সফলতাও পাচ্ছে পুলিশ। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে গেলেই তা ভিডিও করা হচ্ছে। ভিডিও দেখে নোটিশ পৌঁছে যাচ্ছে গাড়ির মালিকের ঠিকানায়। পরে গাড়ির মালিককে ট্রাফিক জোনে সাত দিনের মধ্যে ডেকে এনে ভিডিও দেখিয়ে করা হচ্ছে জরিমানা ও জব্দ করা হচ্ছে গাড়ির ব্লু-বুক।

সচিত্র মামলার বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ট্রাফিকে নতুন এই সেবাটি বেশ কাজে দিচ্ছে। এই সার্ভিস চালুর পর থেকে উত্তরা জোনে গাড়ি চালকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

আর এই ভীতির কারণেই এখন উত্তরার চালকদের মধ্যে আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা অনেকটা কমে গেছে। ট্রাফিকের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ জোনে কথা বলে জানা গেছে, নতুন এই ‘ভিডিও কেস’ ফর্মুলার কারণে এখন সড়কে চালকদের আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের তথ্যানুয়াযী, ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রাফিকের পশ্চিম ও উত্তরা জোনে এই সার্ভিসটি চালু হয়। ওই বছর ৬ হাজার ৭৪৯টি গাড়িকে ‘ভিডিও কেস’ ফর্মুলায় জরিমানা করা হয়। আর চলতি বছরের শুরুতে চারটি জোনেই একযোগে এই সার্ভিস চালুর মধ্যদিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে ভিডিও কেস কার্যক্রম শুরু করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।

ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে উল্টোপথে চলাচল, সিগন্যাল অমান্য ও যত্রতত্রভাবে পার্কিং করা থেকে গাড়ি মালিকদের বিরত রাখতে এই সার্ভিসটি চালু করে ট্রাফিক বিভাগ। এই সার্ভিসের আওতায় প্রতিটি ট্রাফিক জোনে একটি করে টিম রয়েছে। টিমে একজন অফিসার এবং তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে আরো ৬ জন ট্রাফিক সদস্য।

তথ্যানুযায়ী, রুটিন করে ভিডিও টিমগুলো একেক দিন একেকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করেন। এ সময় যেসব গাড়ি উল্টো পথে চলাচল করে, সিগন্যাল অমান্য করে বা যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা গাড়িসমূহের ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ওই ভিডিও থেকে গাড়ির নম্বর সংগ্রহ করে পাঠানো হয় বিআরটিএ-তে। সেখান থেকে গাড়ির মালিকের ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়।

পরে গাড়ির মালিকের বাসায় একটি নোটিশ পাঠিয়ে তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাফিকের সংশ্লিষ্ট উপকমিশনার (ডিসি) অফিসে হাজির হতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, অভিযুক্ত গাড়ির মালিক ডিসি অফিসে হাজির হলে তাকে আইন ভঙ্গের ভিডিওটি দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ্ উদ্দীন আহমদ বলেন, রাজধানীতে গাড়ির চাপ বেশি। সে তুলনায় ট্রাফিক সদস্য নগন্য। রাস্তার সিগন্যাল সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। আর এই সুযোগে চালকরা উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু চালক যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

তারা মনে করে, তাদের না পেলে মামলা দিতে পারবে না পুলিশ। এসব সমস্যা সমাধানে উন্নত দেশগুলোতে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগিয়ে আইন ভঙ্গ করা গাড়ির ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ওইসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরাও সেই ফর্মুলাতে কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে প্রাথমিকভাবে ম্যানুয়ালি ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে মোড়ে মোড়ে ইন্টারসেকশনে ক্যামেরা স্থাপন করে সেখান থেকে ভিডিও সংগ্রহ করার। এই সার্ভিসটি চালু করার পরে এখন উল্টোপথে যানবাহন চলাচলের হার অনেকটাই কমে এসেছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মামলার সংখ্যা, জরিমানা ও রেকারিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। রাস্তাকে সচল রাখা ও যানবাহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২০১৬ সালে এক লাখ ৭০ হাজার ৮২৩টি গাড়িকে রেকার করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।

একই সময়ে সাড়ে ১০ লাখ গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ৩৭ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার ২২৬ টাকা। এর আগের বছর অন্তত ২০১৫ সালেও এই সংখ্যা ছিলো অর্ধেকেরও কম।

এদিকে রাজধানীতে যান চলাচল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন চিহ্নিত করে ৯২টিতে অটোমেটিক এবং রিমোর্ট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় এ প্রকল্পটি চালু হচ্ছে শিগগিরই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!