• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প-হিলারিকে নিয়ে ক্ষুব্ধ মার্কিনীরা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ১, ২০১৬, ০৫:৪০ পিএম
ট্রাম্প-হিলারিকে নিয়ে ক্ষুব্ধ মার্কিনীরা

ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই পড়েছেন মার্কিনীদের ক্ষোভের মুখে। দুজনের কেউই জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আমলে নেননি। দুই রাজনৈতিক দলই জনগণের আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রার্থীদের প্রতি মার্কিনীদের এই আস্থাহীনতা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। তাই ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই প্রার্থীকে নিয়েই চরম হতাশ বেশিরভাগ মার্কিন জনগণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে পরিচালিত সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপে এভাবে নাগরিকদের তীব্র হতাশা আর ভয়াবহ ক্ষোভের আভাস মিলেছে। জরিপের ফলাফল বলছে, অধিকাংশ মার্কিন জনগণ তাদের দুজনকেই ভয়ঙ্কর হিসেবে দেখছে।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান দুই প্রার্থীর প্রতি জনগণের এই অনাস্থাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছে। প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বার্নি স্যান্ডার্সের মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে জনগণের হতাশার কথাও উঠে এসেছে জরিপের ফলাফলে।

মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাবলিক রিলিজিয়ন রিসার্স ইনস্টিটিউট (পিআরআরআই), শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল অপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার-এনওআরসি এবং পিউ রিসার্চ এসব জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপের চূড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে, অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান এখন আর ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান কোনো দলের প্রতিই আস্থা রাখতে পারছেন না।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা নির্বাচন নিয়ে মার্কিন জনতার এই অবস্থানের বিপরীতে সেখানকার সমাজের বিরাজমান বিভক্তিকে দুষছেন। দুষছেন অর্থনৈতিক বৈষম্যকে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিচুতলার মানুষের অংশগ্রহণ না থাকাকেও অনাস্থার কারণ মনে করছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে বৈষম্যের বিস্তৃতি, খাদ্য সংকট, কর্মসংস্থানের অভাব, জাতীয় ঋণ বেড়ে যাওয়া, বর্ণবাদের বিস্তৃতি, বীমা করার অক্ষমতা, নিত্যব্যবহার্য পণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি দুই দলের প্রতি আস্থাহীন করে তুলেছে সে দেশের নাগরিকদের। আর খোদ প্রার্থীদের প্রতি ঐতিহাসিক অনাস্থার ক্ষেত্রে হিলারির ফাঁস হওয়া ইমেইল তথ্য এবং ট্রাম্পের ভয়াবহ বর্ণবাদী-সহিংস ভাষ্য ও নারীবিরোধী অবস্থানকে কারণ বিবেচনা করা হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে নমুনায়নের দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ২ হাজার ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এক জরিপ পরিচালনা করে পিআরআরআই। আরেকটি জরিপ পরিচালিত হয় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ওপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার এনওআরসি-এর তহবিলে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ ওই জরিপটি পরিচালনা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার  এক হাজার ৬০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু, জনমত ও ডেমোগ্রাফিক তথ্য নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার সেপ্টেম্বরে আরেকটি জরিপ সম্পন্ন করে।

পিআরআরআই-এর জরিপের আভাস অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির প্রতি মার্কিনদের অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। এখন ৬১ শতাংশ মার্কিন নির্বাচন নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। প্রতি ১০ জনে ৬ জনেরও বেশি মার্কিন মনে করেন, প্রধান দুই দলের কোনোটিই মার্কিনদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারে না।

মার্কিন জনগণের কাছে এবারের নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এতো কম হওয়ার বিষয়টিও ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জরিপে আভাস মিলেছে, ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুই দলের প্রতি মার্কিনদের অসন্তোষ তীব্রভাবে বাড়ছে ১৯৯০ সাল থেকেই। সে সময়ের জরিপে দেখা যায়, দুই দলের কেউই জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে সমর্থ হয় না বলে মনে করতেন মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কম মার্কিনী। তবে ২০১৬ সালে এসে অর্ধেকেরও বেশি মার্কিনী মনে করেন, দুই দলের কেউই এখন আর তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের জরিপের ফলাফলেও এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ৭০ শতাংশ মার্কিনকে হতাশা বোধ করতে দেখা গেছে। জরিপ বলছে, নির্বাচন নিয়ে অর্ধেকেরও বেশি মার্কিন অসহায় বোধ করছেন। সমানসংখ্যক মানুষের মনে নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। দেশের রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে প্রতি ১০ জনে ৯ জন আমেরিকানেরই। আর রাজনৈতিক বিভক্তির বাস্তবতায় নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থাহীনতার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকানদের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই।

রাজনৈতিক দল, মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দুই দলের অধিকাংশ সমর্থকই আস্থা রাখতে পারেন না। সব মিলিয়ে জরিপের আভাস অনুযায়ী রিপাবলিকান কিংবা ডেমোক্র্যাট কেউই নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটাতে পারছেন না বলে মনে করছেন অধিকাংশ আমেরিকান। তারা কোনো সুযোগ্য নেতৃত্বও পাচ্ছেন না, যারা তাদের সামনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করবেন।

জরিপের ফলাফল বলছে, বার্নি স্যান্ডার্সকে নেতা হিসেবে পছন্দই করেছিলেন আমেরিকানরা। তারা মনে করছেন, রিপাবলিকান পার্টির হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি তার দলের জন্য যতটা না ভালো হয়েছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতা প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্সকে মনোনয়ন দেয়া হলে সেটি তার (স্যান্ডার্স) দলের জন্য আরো বেশি ভালো হতো।

এদিকে, ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনই ধারাবাহিকভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা মেইলে হিলারির বিরুদ্ধে বার্নি স্যান্ডার্সকে জোর করে হারানো, ইমেইল কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচতে ঘনিষ্ঠদের অর্থপ্রদান, লিবিয়ায় অন্যায্য আগ্রাসন, আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। বিপরীতে ট্রাম্প মুসলমান ও নারীবিরোধিতাসহ বিভিন্ন স্ববিরোধী মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল না মানারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

পিআরআরআইয়ের জরিপে তাই দেখা গেছে, দুই প্রার্থীর কেউই তাদের প্রতি জনগণের ইতিবাচক মনোভাব অর্জনের হার ৫০ শতাংশ টপকাতে পারেননি। একে ‘ঐতিহাসিক অনাস্থা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী হিলারিকে ইতিবাচকভাবে দেখেন ৪১ শতাংশ মানুষ আর ট্রাম্পকে ইতিবাচকভাবে দেখেন ৩৩ শতাংশ মানুষ। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ে হিলারির জনপ্রিয়তা কম। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জনপ্রিয়তার হার ৪৯ শতাংশ হলেও হিলারির ক্ষেত্রে তা ৪১ শতাংশ। নির্বাচনের ভোট গণনা সুষ্ঠু হবে কি না সে ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ৪৩ শতাংশ মানুষের। ৩৮ শতাংশ ভোটারের এ ব্যাপারে সামান্য আস্থা রয়েছে। আর ১৭ শতাংশ ভোটারের এ ব্যাপারে কোনো আস্থা নেই বললেই চলে।

পিআরআরআইয়ের প্রধান নির্বাহী রবার্ট জোন্স বলেন, ‘মার্কিনদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য একটি গণভোটের রূপ ধারণ করেছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ১৯৫০-এর দশকের সময়গুলো নিয়ে স্মৃতিকাতর হন। ওই সময় দেশে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টানদের অনেক বেশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষমতা ছিল। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের সমর্থকরা কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে যে বড় ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়েছে, তাতে খুশি।’

এথিকস অ্যান্ড পাবলিক পলিসি সেন্টারের কর্মকর্তা হেনরি অলসেন বলেন, ‘এটা নির্ভর করে আপনি সমাজের স্বর কতটা শুনতে পারছেন তার ওপর। মানুষ যখন সমাজের স্বাভাবিকতা সাপেক্ষে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে, তখন তারা সমাজে নিজেদের সংযুক্তির প্রশ্নে মরিয়া হয়ে চরমপন্থাকেই অস্ত্র করে তোলে।’ তিনি মনে করেন, সমাজেই চরমপন্থার বাস্তবতা হাজির রয়েছে। (সূত্র: বিদেশি পত্রিকা) 

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!