• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পকে নসিয়ত দিলেন আহমেদিনেজাদ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭, ১১:১০ পিএম
ট্রাম্পকে নসিয়ত দিলেন আহমেদিনেজাদ

ঢাকা: নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ কীভাবে ঠেকাবেন তা নিয়ে অনেকটা ঘোরের মধ্যে আছেন মার্কিনিরা। প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন সংকটে ফেলে দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, অভিবাসন ইস্যু, নারী কেলেঙ্কারি ও জাতিসংঘের মতো স্পর্শকাতর বিষয়, একই সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ে একপ্রকার নসিয়তই দিলেন ক্লিন ইমেজধারী বিশ্বনেতা ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ।

সাড়ে তিন হাজার শব্দের এক দীর্ঘ চিঠিতে আহমেদিনেজাদ এই নসিয়ত পেশ করেছেন ট্রাম্পকে। চিঠিটি নিজের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছেন ইংরেজি ও ফার্সি ভাষায়। যে চিঠি এখন বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনার ঢেউ তুলছে।

মূলত কিছুটা উপদেশ ও কয়েকটি বিষয়ে বিচক্ষণ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মার্জিত ভাষায় লেখা হয়েছে ওই চিঠি। প্রথমেই চিঠিতে ট্রাম্পকে রাজকীয় সম্ভাষণ জানান আহমেদিনেজাদ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাধারণত হুট করেই পররাষ্ট্রনীতি বদলায় না। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় গিয়েই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করেছেন কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই। যেগুলো নির্বাচনের আগেই জন্ম দিয়েছিল বিতর্কের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- অভিবাসন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, রাশিয়ার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন ও চীন সাগর দখল। ক্ষমতায় বসেই মাস খানেকের মধ্যে এসব বিতকির্ত ইস্যু সামনে এনেছেন। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ব কূটনীতি ও দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের ওপরও ক্ষুব্ধ। অনেকেই এ আচরণকে দেখছেন ট্রাম্পের ক্ষমতার বড়াই হিসেবে।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইরানের সাবেক এ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্মরণ করে দিয়েছেন, ‘ক্ষমতার চার বছর অনেক বড় সময়। কিন্তু খুব দ্রুত গতিতে শেষ হয়। সুযোগকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়িত করতে হয়, প্রতিটি মুহূর্তকে সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।’ এসময়ে জাতিগত বৈচিত্রের প্রতি সম্মান ও গুরুত্ব দেয়ার জন্যও ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।

আর সেই নসিয়তনামা এমন সময়ে লেখা হলো যখন সাত মুসলিমপ্রধান দেশের অধিবাসীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে বাস করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। যে আদেশ আবার আদালতের পাল্টা নির্দেশে স্থগিত করাও হয়। যে নিষিদ্ধের তালিকায় ছিল আহমেদিনেজাদের ইরানও।

এ প্রসঙ্গে ইরানের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ট্রাম্পের ভেতরে আমি স্বজাতিপ্রীতি দেখেছি। আমেরিকার উন্নয়নে অভিবাসীদের অবদান কম নয়। বিশেষ করে অধিবাসীদের মধ্যে অনেক নামকরা বিজ্ঞানী রয়েছেন। বিজ্ঞানসহ অনেক ক্ষেত্রে ইরানিদের অনেক অবদান রয়েছে। আমেরিকা সবার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকায় বসবাসরত জাতিগত বৈচিত্রের প্রতি সম্মান ও গুরুত্ব দিতে হবে ট্রাম্পকে।’

এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই নারী সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়েছেন। ট্রাম্প ব্যবসায়ী, টাকার কুমির। রয়েছে আলিশান বিলাসবহুল বাড়ি, হোটেল, বিমান। তাই পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে জড়িয়ে পড়েছেন নারী কেলেঙ্কারীতে। ব্যক্তিগত জীবনে তার নারী কেলেঙ্কারী ও নারীদের নিয়ে বিকৃত মন্তব্য খোদ রিপাবলিকানদেরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এ প্রসঙ্গে আহমেদিনেজাদ লিখেছেন, ‘ইতিহাসের সকল মহান ব্যক্তি নারীর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। আল্লাহ প্রদ্ত্ত নারীদের বিশেষ গুণের স্বীকৃতি দিয়েছেন তারা। তাদের উপযুক্ত জায়গায় রেখেছেন।’

আহমেদিনেজাদের বক্তব্যে বাদ যায়নি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর কথা। সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে যুদ্ধের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধন ও প্রকাশ্য অংশগ্রহণ দেখেছে বিশ্ব। যেখানে জাতিসংঘ ছিল অসহায়। সেই নীতির কঠোর সমালোচনা করে আহমেদিনেজাদ বলেন, ‘অতীতে জাতিসংঘের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত খবরদারির কারণে বিশ্বে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, যুদ্ধ, বিভাজন, হত্যাযজ্ঞ ও জাতিগত বৈষম্যর সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বকে যুদ্ধ দেখতে হয়েছে। নতুন আমেরিকাকে এ পথ থেকে বের হতে পারলে লাভবান হবে মানবজাতি।’

ইরানের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়েও লিখেছেন। বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত ও জনবিরোধী।’ ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, ‘আগের প্রেসিডেন্টদের মতো যেন পশ্চিম এশিয়ায় নানা বিষয়ে নাক গলিয়ে দাম্ভিকতার পরিচয় না দেন।’

আহমাদিনেজাদের এই চিঠি ইরানের সুইস অ্যাম্বাসিকে দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। ইরানে মাকির্ন দূতাবাস নেই। তেহরানের সুইস অ্যাম্বাসিই মার্কিনকে প্রতিনিধিত্ব করে।

আহমেদিনেজাদ ইতোপূর্বে বিশ্বের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ও ব্যক্তিকে চিঠি লিখেছেন। তার মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও পোপ উল্লেখযোগ্য।

এর আগে ইরানের জনপ্রিয় এই সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশ্ব ব্যবস্থার পুনর্গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করে নতুন ধারনার কথা বলেছিলেন। তার নতুন ধারনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজে লাগাতে ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছিলেন।

ইরানে অনেকেই ট্রাম্প ও আহমেদিনেজাদের মধ্যে মিল খুঁজে পান। দুই জনের পোশাকের ধরনের মধ্যে মিল রয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ইরানের রাজনীতিতে ২০০৫ সালে উল্কারগতিতে উত্থান হয় আহমেদিনেজাদের। প্রেসিডেন্ট হয়েও সাবলীল চলাফেরা, সাধারণ মানুষের মতো সাদা-মাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। এই চলন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা এনে দেয় তাকে। ক্ষমতায় থাকলেও কোনো দাম্ভিকতা ছিল না। কিন্তু ইরান পরিচালনায় অত্যন্ত দাপট দেখিয়েছেন। কঠোর হুমকি উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশকে কূটনীতিতে সামাল দিয়ে পরমাণু গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন। তার সময়ে অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও আনা হয় বিরাট পরিবর্তন। সেই আহমাদিনেজাদ ফের আলোচনায় এলেন।

সোনালীনিউজডটকম/আতা

Wordbridge School
Link copied!