• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট করে বিপাকে রিপাবলিকান পার্টি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৭, ০৭:০৬ পিএম
ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট করে বিপাকে রিপাবলিকান পার্টি

ঢাকা: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েই বিতর্কিত হয়ে পড়ছেন ট্রাম্প। তার সিদ্ধান্ত ও নেয়ার প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে দিয়েছে। রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করায় এবার দলটির মেধ্যেও ট্রাম্পকে আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছে না রিপাবলিকান।

ফলে প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে ট্রাম্প বিরোধীরা ফের সরব হয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টির নীতি নির্ধারকরাও ট্রাম্পকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। 

মেক্সিকো সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র দেয়াল নির্মাণ করবে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তেই বির্তকের সূচনা হয়। এই দেয়াল নির্মাণ নিয়ে নিজ দলেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিন দিন এই দেয়ালের বিপক্ষে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তারা এই দেয়ালের খরচ ও বাস্তব উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই দেয়াল নির্মাণের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে তহবিল গঠন করা ট্রাম্পের জন্য বেশ কঠিন হবে।

কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা সিএনএনকে স্পষ্ট করে বলেছেন, ট্রাম্প যদি ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে এই দেয়ালের খরচ মেটাতে না পারেন, তাহলে তারা ট্রাম্পের বিপক্ষে যাবেন। আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন সত্যিই কি এই দেয়াল সীমান্তের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করতে পারবে?

সিনেটর লিসা মুরকোস্কি বলেন, আপনি যদি এত বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করতে যান, তাহলে আপনাকে এ অর্থের উৎস কী, তাও দেখাতে হবে। এই নির্মাণ খরচ কোথা থেকে আসবে, তা না দেখিয়ে আপনি কীভাবে কংগ্রেসের মাধ্যমে এই বিল পাস করাবেন, তা আমার বোধগম্য নয়। ট্রাম্পের এ আদেশের পর এরই মধ্যে আইনি জটিলতার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, হয়তো ভবিষ্যতে তা সীমান্তে অনেক ধরনের মামলার জন্ম দেবে। কংগ্রেস যদি এই দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ পাস না করে, তাহলে ট্রাম্পের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

পল রায়ানমিচ ম্যাককনেলহাউস স্পিকার পল রায়ান ও সিনেট মেজরটি লিডার মিচ ম্যাককনেল গত সপ্তাহে বলেছেন, এই দেয়াল নির্মাণে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার খরচ হবে। তবে রায়ান পরামর্শ দিয়েছেন, ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে হয়তো এ দেয়ালের নির্মাণ খরচ পুরোপুরি উঠে আসবে না। তবে মনে রাখতে হবে, এ দেয়াল জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অগ্রাধিকারযোগ্য।

মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী অঙ্গরাজ্য টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর জন ক্রোনেন এই দেয়াল অবৈধভাবে অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে যথেষ্ট হবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, লোকজন নানা উপায়েই আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন। সিনেটর জন ক্রোনেনক্রোনেন বলেন, ব্যয় সংকোচনের পরও যদি বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়, তাহলে ঋণ বাড়বে। এ নিয়ে আমি বেশ উদ্বিগ্ন। 

ট্রাম্প বারবারই বলে যাচ্ছেন, আপাতত দেয়াল নির্মাণের খরচ কংগ্রেস দেবে। পরে মেক্সিকোর কাছ থেকে তা পুরোপুরি আদায় করা হবে। কিন্তু মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নেইতো স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তাঁরা এ ধরনের কোনো খরচ দেবেন না। মেক্সিকো তো দূরের কথা, রিপাবলিকান অনেক শীর্ষ নেতাও এমনটা হবে বলে মনে করেন না। 

জন ম্যাককেইনআরিজোনা অঙ্গরাজ্যের বর্ষীয়ান সিনেটর জন ম্যাককেইন স্পষ্ট বলেন, না। মেক্সিকো এই অর্থ দেবে না। আমি মনে করি না এটি কোনো “জুতসই বিকল্প”।’ তিনি আরও বলেন, আপনি যদি প্রযুক্তি,...ড্রোন ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া শুধু একটি দেয়াল নির্মাণ করেন, তা শুধু একটি দেয়ালই হবে।...তার মানে আপনি এর মধ্য দিয়ে সীমান্তকে সুরক্ষিত করতে পারবেন না। এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এই দেয়ালের পক্ষে সমর্থন আদায়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক মন্ত্রী জন কেলি চলতি সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। কিন্তু সিনেটররা জানিয়েছেন, সেখানে দেয়ালের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

তবে ট্রাম্প দ্রুত এ দেয়াল নির্মাণের পক্ষে। পারলে বছরের প্রথম তিন মাসে। ট্রাম্প ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে দেয়ালের নির্মাণ খরচ মেটাতে পারলেও প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) ও সিনেটের চালনা কমিটি মনে করে, বছরের মাঝামাঝি সময়ে অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার কাটছাঁট করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

টেনেসি অঙ্গরাজ্যের সিনেটর বব কোরকার বলেন, যার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই, তার জন্য আমি কোনো ধরনের ব্যয়, অতিরিক্ত ব্যয় কোনোটাই করতে রাজি না। বর্তমানে আমাদের অনেকগুলো অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে। যেমন এখন দেশটির ঋণের বোঝা ২০ দশমিক ৩৫৫ ট্রিলিয়ন ডলার (১ ট্রিলিয়ন = ১০ হাজার কোটি)। এর সঙ্গে আগামী ১০ বছরে আরও ৯ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন যুক্ত হতে যাচ্ছে। এমনকি দেশটিতে এখন রাজস্বও কমতির দিকে। তাই দেয়াল নির্মাণের এ প্রস্তাব “দুর্যোগের একটা রেসিপি”।

সিনেটর জেমস ল্যাংকফোর্ডওকলাহামার সিনেটর জেমস ল্যাংকফোর্ড বলেন, নিজ দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রতিটি জাতির দায়িত্ব। তাই মেক্সিকো আমাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যয় করবে—এটা আমি মনে করি না। তবে ট্রাম্পের হাতে এখনো দলের নেতাদের বোঝানোর জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে। বিশেষ করে তার পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের পক্ষে তিনি রিপাবলিকানদের টানতে পারেন। যেমন রন জনসনের মতো কয়েকজন সিনেটর বলেছেন, ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে এ দেয়াল নির্মাণ করা না গেলে তারা অর্থ দিতে প্রস্তুত।

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যকার এ সীমান্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ মাইল। যার মধ্যে অনেক এলাকা খালি, ধুলোময় মরুভূমি, ঘন সবুজ ঝোপঝাড়, রিও গ্রেনেড নদীকে ঘিরে উঁচুনিচু পথ। তবে দীর্ঘ এই সীমান্তের মধ্যে এখন প্রায় ৬৫০ মাইল জায়গায় ছাড়া-ছাড়া অবস্থায় বেড়া দেওয়া আছে। কোথাও কোথাও আবার কংক্রিটের স্ল্যাব ও অন্যান্য অবকাঠামো দিয়ে ঘেরা। ট্রাম্প বলেছেন, এক হাজার মাইলজুড়ে হবে এ দেয়াল। আর বাকিটা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নিরাপদ থাকবে। 

ট্রাম্পের নমিনেশন নিয়েও রিপাবলিকান শিবিরেও বিরোধিতা ছিল কিন্তু সবাইকে পেছনে ফেলে তিনিই আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অন্যরা আউট সাইডার।সূত্র:সিএনএন

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!