• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের পরিবেশ উপদেষ্টা কি বিজ্ঞানে মুর্খ?


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মার্চ ১০, ২০১৭, ০৯:১৩ পিএম
ট্রাম্পের পরিবেশ উপদেষ্টা কি বিজ্ঞানে মুর্খ?

ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবেশ উপদেষ্টা স্কট প্রুইট কি বিজ্ঞানে মুর্খ? এমন প্রশ্ন উঠেছে মার্কিন মুল্লুকসহ গোটা বিশ্বেই। মার্কিন সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন একজন ব্যক্তিকে যিনি কি না বিজ্ঞান বোঝেন না। এরকম নেতিবাচক আলোচনা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ঘটা এক ঘটনা থেকে।

বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও সূত্রমতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গমন। বৃহস্পতিবার একটি সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ট্রাম্পের পরিবেশ উপদেষ্টা প্রুইট কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘কে বলল, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসই বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ? এ সব বুজরুকি আমি আদৌ বিশ্বাস করি না। আদৌ মনে করি না, বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের মাত্রা বাড়ছে বলেই পৃথিবীর তাপমাত্রার পারদ উঠছে চড়চড়িয়ে।’

প্রুইট আরো বলেন, ‘এটাও নিখুঁত ভাবে বলা সম্ভব নয়, মানবসভ্যতার জন্যই বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে। আর তার দৌলতে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। তাই আমি মনে করি না কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বাড়াটাই বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ।’

ট্রাম্পের পরিবেশ উপদেষ্টার এমন ধারা কথা শুনে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা থ’ হয়ে গিয়েছেন! বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেলে বিশ্বের বিজ্ঞানীকুল একে অন্যের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, তা হলে এত দিন তারা কী গবেষণাটা করলেন! আর এ ব্যাপারে গোটা বিশ্বের সব গবেষণার ফলাফলই তা হলে একেবারে ভুল?
 
শুধু কি তাই? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পছন্দের উপদেষ্টা স্কট প্রুইট এখন যে সরকারি সংস্থার কর্ণধার, সেই এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) ওয়েবসাইটের বক্তব্যই তার নতুন প্রধানের প্রকাশ্য মন্তব্যের বিরোধিতা করছে। ইপিএ-র ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, ‘কার্বন ডাইঅক্সাইডই প্রধানতম গ্রিনহাউস গ্যাস, যার জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। আবহাওয়া বদলাচ্ছে। পরিবেশ বদলাচ্ছে।’

অন্যদিকে, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, ‘সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ, সেটা কার্বন ডাইঅক্সাইডই।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিবেশ উপদেষ্টা প্রুইট জোর দিয়েই বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, এটা ঠিক নয়। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসই যে পরিবেশ বিষিয়ে দিচ্ছে আর তা মানবসভ্যতার জন্যই হচ্ছে, একেবারে নিখুঁত ভাবে তো তা বলা যায় না। আমি বলব, এটা নিয়ে আরো আলোচনা হোক। আরো খতিয়ে দেখা হোক। যা বলা হচ্ছে, সেটাকেই ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেব কেন?’

প্রুইটের যা বিশ্বাস, বিজ্ঞানীরা তাকে বিশ্বাস বলে মানতে রাজি নন। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বিজ্ঞান কোনো বিশ্বাসে বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে প্রমাণে।

প্রুইটের আগে যিনি ইপিএ-র প্রধান ছিলেন, সেই বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী জিনা ম্যাকার্থি বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বের বিজ্ঞান শুধুই অঙ্ক, পরিসংখ্যান আর তথ্যে বিশ্বাস করে। কোনো বিশ্বাসে বিশ্বাস করে না। ১৯৫০ সাল থেকে পরিসংখ্যান আমাদের হাতে আছে। আর সেই তথ্যপ্রমাণ, পরিসংখ্যান বলছে, বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও প্রশাসনিক উদাসীনতা আর অপদার্থতাই সমস্যাটাকে বাড়িয়ে তুলেছে। আরো বাড়িয়ে তুলছে উত্তরোত্তর। আর কী কী করলে আমরা ওর (প্রুইট) মতো মানুষদের বোঝাতে পারব কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বাড়ার জন্যই বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন।’

আরেক কদম এগিয়ে বলেছেন ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্চের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট কেভিন ট্রেনবার্থ। তার কথায়, ‘প্রুইট বুঝিয়ে দিলেন, তিনি যে সংস্থার শীর্ষ পদে রয়েছেন, সেই পদে থাকার কোনো যোগ্যতাই তার নেই। এটা নিয়ে কোনো শিক্ষিত মানুষেরই কোনো সংশয় থাকতে পারে না যে, পৃথিবীর গায়ের জ্বর বাড়ছে হু হু করে আর তা বাড়ছে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বলে। প্রুইটের ‘প্রজ্ঞা’য় আপাতত প্রমাদ গুণছেন বিশ্বের তাবৎ বিজ্ঞানীরা!

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!