• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের যৌনফাঁদে পড়েছেন যেসব নারী


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ১৭, ২০১৬, ০৭:৫০ পিএম
ট্রাম্পের যৌনফাঁদে পড়েছেন যেসব নারী

ঢাকা: ট্রাম্পের ফাঁদে পড়া নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ মুখ খুলছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ তুলছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। দাবি করছেন, তিনি নাকি ‘নোংরা রাজনীতির শিকার’। তবে কথা তো আর বসে থাকে না। অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলা নারীদের পেছনে দৌড়াচ্ছে আবার গণমাধ্যম। এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির যেসব অভিযোগ এসেছে তা তুলে ধরা হলো।

ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসন: ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ম্যানহটনের একটি নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন। তিনি একটি সোফায় বসেছিলেন। ক্রিস্টিনের দাবি, হঠাৎ করেই তিনি বুঝতে পারেন যে, ট্রাম্প তার স্কার্টের নিচ দিয়ে যৌনাঙ্গ স্পর্শ করেন। এই ঘটনায় তিনি এবং তার বন্ধুরা খুবই কষ্ট পান।

সামার জারভস: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সামার জারভসকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মানবাধিকার আইনজীবী গ্লোরিয়া অ্যালারড। সেই সংবাদ সম্মেলনে জারভস বলেন, মার্কিন টেলিভিশনে ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামে একটি রিয়ালিটি শো চালাতেন ট্রাম্প। ওই অনুষ্ঠানে পঞ্চম সেশনের প্রতিযোগী ছিলেন সামার জারভস। ওই সময়ে ঘটনা তুলে ধরে জারভস বলেন, ‘চাকরির সুযোগ দেয়ার কথা বলে ট্রাম্প আমাকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। ২০০৭ সালে বেভারলি হোটেলের একটি বাংলোতে আমি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাই। যেখানে তিনি আমার অনুমতি ছাড়াই জোর করে ঠোঁটে চুমু খান।’

জারভস আরো অভিযোগ করেন, ‘ট্রাম্প পাশের সোফায় বসতে বলে আমার ঘাড় জড়িয়ে ধরে আরো জোরালোভাবে চুম্বন করতে থাকেন এবং তার হাত আমার স্তনের ওপর রাখেন। বাধা দেয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প আমাকে জোর করে তার শয়নকক্ষে নেয়ার চেষ্টা করেন এবং আমার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করেন।’ তিনি তখন সেখান থেকে চলে আসেন।

ট্রাম্পের প্রচারনা শিবির থেকে সামার জারভস এবং ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসনের অভিযোগকে ‘ভয়ঙ্কর মিথ্যা’ বলে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ট্রাম্পের মুখপাত্র হোপ হিকস ওয়াশিংটন পোস্টকে এক ইমেইল বার্তায় জানিয়েছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব মিথ্যা অভিযোগ খুব দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই বিনামূল্যে প্রচারণা পেতে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের কুৎসা ছড়াচ্ছে।’

মিন্ডি ম্যাকগিলিভরে: ৩৬ বছর বয়সী মিন্ডি পাম বিচ পোস্ট পত্রিকার কাছে অভিযোগ করেন, ২০০৩ সালে তিনি যখন ট্রাম্পের মার-আ-ল্যাগো এস্টেটে অনুষ্ঠিত একটি কনসার্টে যোগ দিতে সেখানে যান, তখন তিনি যৌন হয়রানির শিকার হন। এক বন্ধুকে ফটোগ্রাফিতে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। মিন্ডির অভিযোগ, ‘হঠাৎ করেই মনে হলো কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। ফিরে দেখি সেখানে ট্রাম্প দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি সেখান থেকে দ্রুত সরে আসি।’ ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, তার আইনজীবী ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে।

জেসিকা লিডস: মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে ৩০ বছরেরও পুরনো একটি যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেন জেসিকা লিডস। জেসিকার দাবি, আশির দশকের গোড়ার দিকে তিনি একটি ফ্লাইটে করে নিউ ইয়র্কে যাচ্ছিলেন। তার পাশের সিটেই বসা ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একপর্যায়ে ট্রাম্প ‘আর্মরেস্ট’ বা হাত রাখার হ্যান্ডেলটা উঠিয়ে রাখেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরেন। জেসিকার অভিযোগ, ট্রাম্প তাকে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ছিলেন। ‘তার হাত আমার পুরো শরীর স্পর্শ করছিল।’ ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার এক আইনজীবী দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশনা বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন।

ক্যাথি হেলার: এখন তার বয়স ৬৩ বছর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে ক্যাথি অভিযোগ করেন, ১৯৯৭ সালের দিকে তিনি স্বামী, সন্তান ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ট্রাম্পের মালিকানাধীন মার-আ-ল্যাগো এস্টেটে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে ট্রাম্প তাকে জড়িয়ে ধরেন। সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ট্রাম্প জোর করে মুখের পাশে চুমু দিয়েছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে ক্যাথির দাবি। তবে এর বিপরীতে ট্রাম্পের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

র‌্যাচেল ক্রুকস: র‌্যাচেল ক্রুকসের অভিযোগ, ২০০৫ সালে তিনি ম্যানহাটানে ট্রাম্প টাওয়ারে অবস্থিত বেরুক গ্রুপের একজন রিসিপশনিস্ট ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। একদিন লিফটের ভেতর ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। তিনি জানতেন তার কোম্পানি ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবসা করে। তাই তিনি নিজেই ট্রাম্পের কাছে পরিচয় দেন। তারা হ্যান্ডশেক করেন। কিন্তু ট্রাম্প সেখানেই থেমে গেলেন না। র‌্যাচেল ক্রুকসের দাবি, ট্রাম্প তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে শুরু করলেন।
ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নাতাশা স্টয়নফ: নাতাশা পেশায় একজন সাংবাদিক। তার দাবি, ২০০৫ সালে ট্রাম্প ও মেলানিয়ার বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে একটা নিবন্ধ লেখার উদ্দেশ্যে তিনি ট্রাম্প-মেলানিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে যান পামবিচের বাড়িতে। সেখানেই যৌন হয়রানির শিকার হন তিনি। নাতাশার অভিযোগ, ট্রাম্প সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তাকে দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে চুমু দিতে শুরু করেন। তখন ট্রাম্পের এক সহযোগী সেখানে চলে আসায় ট্রাম্প তাকে ছেড়ে দেন বলেও নাতাশা উল্লেখ করেন। ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করে নাতাশাকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার স্ত্রী মেলানিয়ার দাবি, নাতাশার এসব লেখা মিথ্যা এবং একেবারেই কল্পনাপ্রসূত।

টেম্পল তাগার্ট: ১৯৯৭ সালে মিস ইউএসএ সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন মিস উতাহ হয়েছিলেন টেম্পল তাগার্ট ম্যাকডোয়েল। তখন তার বয়স ছিল ২১ বছর। সেসময় একাধিকবার তার ঠোঁটে জোর করে চুমু খেয়েছেন বলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসির কাছে দাবি করেছেন, তিনি এমন কিছু করেননি।

ক্যাসান্ড্রা সারলেস: ২০১৩ সালের মিস ওয়াশিংটন ক্যাসান্ড্রা সারলেস ফেসবুকে তার সহপ্রতিযোগীদের একটি ছবি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ট্রাম্পের দিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘তোমাদের কি মনে আছে, একসময় স্টেজে আমাদের নির্দেশ শুনে কাজ করতে হতো, কিন্তু সেই লোক আমাদের গরু-ছাগলের মতো খাটাতো? তোমাদের কি মনে আছে, ওই লোক আমাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে নিজের সম্পত্তির মতো আমাদের দেখত?’ এই পোস্টে ক্যাসান্ড্রা আরো মন্তব্য করেন, ‘ওই লোক আমাকে তার কাছে টানার জন্য তার হোটেলের রুমে আমন্ত্রণ জানাতো।’

জেনিফার মারফি: ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামে একটি রিয়ালিটি শো’র চতুর্থ সেশনের প্রতিযোগী জেনিফার মারফির দাবি, চাকরির সুযোগ দেয়ার কথা বলে ট্রাম্প তাকে যৌন হয়রানি করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৫ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাকে চুমু দিতে শুরু করেন। এ সম্পর্কে এখনো ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করেননি।

জেন ডো: চলতি বছরের জুনে ‘জেন ডো’ নামে ক্যালিফোর্নিয়ার এক নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৪ সালে জেনের যখন ১৩ বছর বয়স, তখন ট্রাম্প তাকে ধর্ষণ করেন। ওই মামলার শুনানির বিষয়ে ডিসেম্বরে আলোচনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

ট্রাম্প এই অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটাতেই এমনটা করা হয়েছে।

জিল হার্থ: ৩৪ বছরের জিল হার্থ অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আমেরিকান ড্রিম ক্যালেন্ডার গার্লস নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। তবে ১৯৯৩ সালের ওই ঘটনায় পর ১৯৯৭ সালে ট্রাম্প ‘অনুমতি’ ছাড়াই তাকে স্পর্শ করেছিলেন বলে হার্থ যৌন হয়রানির মামলা দায়ের করেন। ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, হার্থ তাকে ধোঁকা দিয়েছেন।

ইভানা ট্রাম্প: ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প ১৯৯২ সালে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করে বলেন, তার তখনকার স্বামী ট্রাম্প তার সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে, স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবেই দেখা হয়। এই তথ্য প্রথম সামনে আসে ১৯৯৩ সালে, ট্রাম্পের জীবনী ‘লস্ট টাইকুন : দ্য ম্যানি লাইভস অব ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প’-এ। পরে অবশ্য ইভানা তার অভিযোগ থেকে সরে আসেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের মধ্যে যে ভালোবাসা ও আবেগ তিনি দেখতে পেতেন, সেই রাতে তা অনুপস্থিত ছিল। ট্রাম্প ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘এমন কিছুই ঘটেনি।’

সম্প্রতি ১১ বছর আগে দেয়া একটি নারীবিদ্বেষী বক্তব্য ফাঁস হওয়ার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। ২০০৫ সালে ধারণ করা অডিও সাক্ষাৎকারটি গত ১৪ অক্টোবর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ফাঁস করে। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির উপস্থাপক বিলি বুশকে টেলিফোনে ওই ‘বিতর্কিত’ সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ফাঁস হওয়া অডিও সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘তারকারা নারীদের নিয়ে যা খুশি করতে পারে, আর এতে ওই নারীরাও বাধা দেবে না।’ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এক বিবাহিত অভিনেত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তার আগ্রহের কথাও জানান। মিস ইউনিভার্সসহ কয়েকটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক ট্রাম্প সুন্দরী নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষার কথাও জানান। সূত্র : হাফিংটনপোস্ট।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!