• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তার সংকটে চিকিৎসা বঞ্চিত দুই লাখ মানুষ


ঝালকাঠি প্রতিনিধি জুন ১৭, ২০১৭, ০৩:২৩ পিএম
ডাক্তার সংকটে চিকিৎসা বঞ্চিত দুই লাখ মানুষ

ঝালকাঠি: জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের চিকিৎসা চলছে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে। উপজেলার একমাত্র আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক।

তাই উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা মুখ থুবরে পড়েছে। অধিকাংশ সাধারণ মানুষই বঞ্চিত হচ্ছে সুচিকিৎসা থেকে। যাদের সাধ্য আছে তারা এখানে না এসে বরিশালে চিকিৎসার জন্য ছুটে যাচ্ছেন। তবে সাধারণ মানুষরাও বরিশাল যাচ্ছে অনুপায় হয়ে শেষ চিকিৎসার জন্য।

আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে আমুয়া ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পাশেই রয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও বরগুনার বামনা উপজেলা। তাই অবস্থানগত কারণে স্বাস্থ্য সেবার দিক থেকে কমপ্লেক্সটির গুরুত্ব অনেক। এ জন্যই কাঁঠালিয়া উপজেলা ছাড়াও সিমান্তবর্তী উপজেলার জনসাধারণ প্রতিনিয়ত এখানে চিকিৎসা নিতে ছুটে আসেন।

কিন্তু চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি এখানে প্যাথলজিষ্টসহ চিকিৎসকের অভাবে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা, এক্সরে, জটিল অপারেশনসহ কিছুই করা সম্ভব হচ্ছেনা। হাসপাতালে ২টি এ্যাম্বুলেন্সের একটি সবসময় অকেজ থাকে। ফলে রোগী পরিবহনেও প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৫টি চিকিৎসক পদের মধ্যে দীর্ঘ ১০ বছর পর্যন্ত সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী অজ্ঞানসহ মেডিকেল অফিসারের ১১টি পদ শূণ্য। এরমধ্যে কর্মরত ৪টি পদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রায়ই উপজেলা সদর ও সিভিল সার্জনের দাপ্তরিক কাজে ব্যাস্ত থাকতে হয়।
এছাড়াও ৩৫ তম বিসিএস থেকে একজন নারী চিকিৎসক দিলেও তিনি আছেন মাতৃকালীন ছুটিতে। বাকি ২ জন চিকিৎসকই একমাত্র ভরসা উপজেলাবাসির ভরসা।

সম্প্রতি ৩১ শয্যার পুরাতন জড়াজীর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ৫০ শয্যার নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধন না করেই সেখানে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা। এখানে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ল্যাব, রেডিওলজিষ্ট, ডেন্টাল, ইপিআই, ফার্মাসিষ্টের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য। ফলে  চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বহিরাগত ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। পাশাপাশি ৬টি স্বাস্থ্য সহকারির পদও শূণ্য।

এ বিষয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আওরাবুনিয়া গ্রামের মোখলেচুর রহমান বলেন, ‘এখানে নার্সরাই আমাগো চিকিৎসা দেয়। লোকবলের অভাবে কোন অপারেশন হয়না। আমাগো মত গরীবদের গাছ, গরু, ছাগল বিক্রি করে বরিশাল বা ঝালকাঠি গিয়ে উন্নত চিকিৎসা ও অপারেশন করাতে হয়’।
এদিকে কাঁঠালিয়া সদরে একমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি কোন চিকিৎসক বা স্থাস্থ্যসহকারি ছাড়াই চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে। ফলে উপজেলাবাসি চিকিৎসা সেবা থেকে চরম ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মানষ কৃষ্ণ কুন্ড জানান, অবস্থানগত দিক থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির গুরুত্ব অনেক। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসক সংকটসহ অসংখ্য সমস্যা আছে। ফলে রোগীরা ঠিকমত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেনা। তবে আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, প্রতিমাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিকিৎসক সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছি। আমুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি মারাত্মক চিকিৎসক সংকটে ভূগছে। ৩৫তম বিসিএসএ নির্বাচিত  চিকিৎসকদের মধ্য থেকে চাহিদা দিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমুয়ায় দিল একজন, নলছিটিতে দিয়েছে ৪ জন। এ অবস্থায় আমরা যে ভাবে পারছি চেষ্টা করে যাচ্ছি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!