• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন : স্বার্থান্বেষীদের অপপ্রচার


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম
ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন : স্বার্থান্বেষীদের অপপ্রচার

রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ডিসিসি মার্কেটের আগুন এখনও থেমে থেমে জ্বলছে। শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) সকাল ৯ টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের ধসে পড়া অংশের মাঝ বরাবর আগুন জ্বলছে। ডিসিসি মার্কেটের 'শরীয়তপুর ক্রোকারিজ' দোকানের মালিক মো. মুনসিদ আলম জানান, প্রথম থেকেই ওই জায়গায় আগুন জ্বলছে। আমরা সবাইকে ডেকে ডেকে দেখিয়েছি। এখন পর্যন্ত ওই আগুন নেভানো হয়নি। ভিতরের ওই আগুনের জন্যই বাইরে এত বেশি ধোঁয়া উড়ছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, গুলশান মার্কেটে আগুনের ঘটনা তদন্তের আগেই এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা ভুল ছিল। মার্কেটে আগুনের ঘটনায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার মূল কারণ বেরিয়ে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার  দুপুরে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গতকালও ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজ অব্যাহত ছিল। মার্কেটের কোনো কোনো স্থান থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডুলি বের হতে দেখা গেছে। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ কিছু জানাতে পারেনি। আগুনের ঘটনা তদন্তে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা করা হয়েছে। এর মধ্যেই ব্যবসায়ীদের শুক্রবার মার্কেট খোলার প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা করতে দেখা গেছে।

গতকাল দুপুরে গুলশান-২ নম্বরের গুলশান সেন্টার পয়েন্টে ডিএনসিসির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মেয়র আনিসুল হক এ সময় বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল আগুনের ঘটনা নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তদন্তের আগেই ঘটনাটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলা আমার ভুল ছিল। এটা ঠিক হয়নি। এখন ঘটনার তদন্ত চলছে। একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার মূল কারণ বেরিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। 

তিনি বলেন, তদন্ত যেন সুষ্ঠু  ও স্বচ্ছ হয় সে জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি রাখা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

গুলশান ডিসিসি মার্কেটে আবার ধোঁয়া : গুলশান ডিসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পরও গতকাল ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন স্থান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে দেখা গেছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বপ্নগুলোও যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। ধোঁয়া বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আবারও পানি দিতে শুরু করেন। তারা জানান, পুড়ে যাওয়া মালামাল থেকে এই ধোঁয়া বের হচ্ছে। আরো পানি দেয়ার পর আর ধোঁয়া ও আগুন কোনোটাই আব থাকবে না।

দুর্ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবারও ফায়ার সার্ভিসের অর্ধশত কর্মী ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট গতকালও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে ঘটনাস্থলের সামনে অবস্থান করছিল। পানির পাশাপাশি দাহ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাসায়নিক দ্রব্য ছিটানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক সমর নাথ বিশ্বাস ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে ধসে পড়া ভবনের মালামাল যা ছিল তার সবই পুড়ে গেছে। এসব মালামাল থেকেই এখন  ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিনি জানান, ধসে পড়া মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজ চলছে। তাই সব জায়গায় পানি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।  

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল দুপুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ডিসিসি মার্কেট পরিদর্শন করেন। তিনি উদ্ধার তৎপরতার খোঁজখবর নেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘আপনি মমতাময়ী মা, আপনার সন্তানরা নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরো বলেন, অগ্নিকাণ্ডে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। তবে আগুন লাগার ঘটনা পরিকল্পিত নাকি নাশকতা তা তদন্তের পর বলা যাবে। 
ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদল মেয়রের কার্যালয়ে

ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও মার্কেটের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য তারা মেয়র কার্যালয়ে যান। এর আগে মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে মার্কেটের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য মেয়র তার দফতরে ডাকেন। মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বাবু বলেন, ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি মেয়রের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করে। এই মার্কেটে ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য মেট্রো নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে ডিএনসিসির চুক্তি রয়েছে। আলোচনায় এখানে ওই বহুতল ভবনের বিষয়ে ও অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে কথা হয়।  

মানবাধিকার কমিশনের আট সদস্যের তদন্ত কমিটি : ওদিকে গুলশানে ডিএনসিসি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আট সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। এতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কমিশনের সদস্য নুরুন নাহার ওসমানী। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে সরেজমিন তদন্ত করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গতকাল মানবাধিকার কমিশন সূত্র জানায়, ৩ জানুয়ারি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ওই দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে কর্মরতদের চাকরি হারানোর বিষয়টি কমিশনের দৃষ্টিতে আসে। এ ছাড়া আগুনের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত, সে বিষয়টিও অনুসন্ধান করা প্রয়োজন বলে মনে করে। কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সামনে বিষয়টি উত্থাপিত হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তকরণ ও ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ধরনের সুপারিশ দিতে উচ্চপর্যায়ের এই কমিটি গঠন করা হয়।

কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ডিএনসিসি মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির একজন করে সদস্যকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

আগুনের কারণ এখনো অজানা : মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান-১-এ অবস্থিত ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগে। অন্যদিকে গুলশান পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোর ৪টার আগে হঠাৎ করেই আগুন জ্বলতে দেখা যায় ডিএনসিসি মার্কেটে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেটের পাহারাদার রাত ২টার সময় আগুন লাগার বিষয়টি জানিয়েছে। ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কারণে এই আগুন লাগে বলেও জানায় তারা। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!