• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
সরকারের শীর্ষপর্যায়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত

ডিএসইর বিদেশি কৌশলগত অংশীদার


অর্থনৈতিক রিপোর্ট ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮, ০৩:৪৬ পিএম
ডিএসইর বিদেশি কৌশলগত অংশীদার

ঢাকা : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিদেশি কৌশলগত অংশীদার নেওয়া বিষয়ে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ বিষয়ে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। বিএসইসি সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর বিদেশি কৌশলগত অংশীদার বাছাইয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি উন্মোক্ত দরপত্রে চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের কাছে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম হেরে যায়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ডিএসই পর্ষদ। ১১ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিক্রম মুকুন্দ লিময়ে।

তিনি বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনির্ধারিত এক বৈঠকে বসেন। এরপর থেকে ভারতের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে অংশীদার করতে বিএসইসি ডিএসইকে চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ ওঠে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়।

চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয় ও প্রতিটি শেয়ারের জন্য ২২ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি ৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার ক্রয় ও প্রতিটি শেয়ারের দর ১৫ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাতে স্পষ্ট কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না।

বিএসইসির একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি দরপত্র গ্রহণের পর রাতে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন ডিএসই কর্তৃপক্ষকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, দরপ্রস্তাবের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাই দর প্রস্তাবে চীনের জোট এগিয়ে থাকলেও ভারতের জোটকে ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার করতে বহুমুখী চাপ রয়েছে। তবে বিএসইসির অবস্থান আমলে না নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বন্ধের দিন ডিএসই পর্ষদ সভা ডেকে চীনের জোটের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

পরবর্তী সময়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কমিশনে ডেকে নিয়ে চীনের পাশাপাশি ভারতের জোটকে অংশীদার করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষই কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘ডিএসই এখনো কারো প্রস্তাব জমা দেয়নি। সে জন্য ডিএসইর বিদেশি অংশীদার নিয়ে কোনো চাপ আছে কি না- তা বলতে পারছি না।’  

ডিএসইর বিদেশি অংশীদার নিয়ে উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহলে বিএসইসির সমালোচনা শুরু হয়েছে। টিআইবিসহ কয়েকটি সংগঠন বিএসইসির পদক্ষেপের নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ অবস্থায় সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনা করে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়টিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিএসইসি।

চীন ও ভারতের জোটের দর প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব নিতে আগ্রহী। অন্যদিকে ভারতের কনসোর্টিয়াম ডিএসইতে বিনিয়োগের পাঁচ বছর পর শেয়ার বিক্রি চলে যাওয়ার শর্ত দিয়েছে। চীনের কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে শেয়ার কিনতে আগ্রহী হলেও ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ সাব-সিডিয়ারি কোম্পানির নামে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত অনুযায়ী, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে এনএসই পরিগণিত হবে না।

ডিএসইতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব অভ্যন্তরীণ এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমোদন রয়েছে চীনের কনসোর্টিয়ামের। অন্যদিকে এনএসই এখনো সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) ও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পায়নি। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত অনুযায়ী ডিএসই বোর্ডে চীনের জোট একটি আসন চেয়েছে। আর ভারতের জোট চেয়েছে দুটি আসন।

এদিকে কৌশলগত বিদেশি অংশীদার অংশের শেয়ারে চীনের কনসোর্টিয়াম সর্বাধিক দর প্রস্তাব করলেও তা বিএসইসিতে পাঠাতে পারেনি ডিএসই কর্তৃপক্ষ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি নিজেদের পর্ষদ সভায় চীনের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও বিএসইসির অনাগ্রহে তা পাঠাতে দ্বিধায় ভুগছে ডিএসই। চীনের দর প্রস্তাবটি কবে নাগাদ পাঠানো হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয় ডিএসই। যদিও আজ সোমবার এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জরুরি বোর্ডসভা ডেকেছে ডিএসই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে স্টক এক্সচেঞ্জের সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বাধ্যবাধকতা ছিল। এ সময়ের মধ্যে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ আগামী ৮ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে কমিশন। ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের শর্ত অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জের মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ (সংরক্ষিত শেয়ার থেকে) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে এবং বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করতে হবে। আর ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!