• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল ভোটিংয়ে ইসির পথে হাটবে আ.লীগ


সোনালী বিশেষ অক্টোবর ১৪, ২০১৭, ০৩:০৪ পিএম
ডিজিটাল ভোটিংয়ে ইসির পথে হাটবে আ.লীগ

ঢাকা : ইসি ও আওয়ামী লী গনির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন/ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ইভিএম/ডিভিএম) ব্যবহারের দাবি থেকে কিছুটা সরে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বস্তরে ইভিএমের ব্যবহার চাইবে না ক্ষমতাসীন দলটি।

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার পথে এগিয়ে নিতে এবার পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু ক্ষেত্রে ইভিএম চাইবে তারা। এক্ষেত্রে  ৩০০ আসনের মধ্যে কয়েকটিকে পুরোপুরি ইভিএম বা সব আসনের ১/২টি কেন্দ্রকে ইভিএমের আওতায় আনার জোর দাবি জানাবে দলটি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলীয় প্রস্তাবনা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামের নেতৃৃত্বে দলের একটি টিম কয়েক দফা বৈঠকে বসেছে। ওইসব বৈঠকে সংলাপের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৩ দফা প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে দলটি।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় সংলাপের প্রস্তাবনা চ‚ড়ান্ত করা হবে। এক্ষেত্রে চ‚ড়ান্ত প্রস্তাবনায় কিছুটা যোগ-বিয়োগ হতে পারে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শনিবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে যেসব নেতা সংলাপে অংশ নেবেন, তাদের নামও চ‚ড়ান্ত করা হবে। উল্লেখ্য, আগামী ১৮ অক্টোবর সকাল ১১টায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, ইভিএম ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনায় সেনা মোতায়েন না করা, আরপিওতে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন না আনা, একান্ত জরুরি না হলে সীমানা পুনর্বিন্যাস না করা, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিসহ তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, ভোটার তালিকার ভুলগুলো দূর করার বিষয় গুরুত্ব পাবে।

আওয়ামী লীগের নীতিগত অবস্থান নির্বাচনে পুরোপুরি ইভিএম চালু করা। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের ১৬ ফেব্রæয়ারি সংসদের প্রশ্ন-উত্তরে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনার কথা জানান। এরপর থেকে দলের নেতারা ইভিএম ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে থাকেন। আ.লীগ রাজনীতির মাঠের বক্তব্যে এখনও ইভিএমের পক্ষে দলের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা।

এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইভিএমকে কারচুপির হাতিয়ার উল্লেখ করে বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছে। ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠিও দিয়েছে বিএনপি।  

এদিকে রাজনৈতিক দুই শিবিরের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ইভিএম ব্যবহারে ইসির সক্ষমতা রয়েছে দাবি করে কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে তারা ইভিএম ব্যবহার করবে। না হলে নয়। যে কারণে ইসি নির্বাচনি রোডম্যাপেও ইভিএমের বিষয়টি বাদ রেখেছে।

ইভিএম ইস্যুতে দুই শিবিরের বিপরীতমুখী অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপেও। এতে তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টিসহ সরকার-সমর্থিত কয়েকটি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাপ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থানও ইভিএমের বিপক্ষে। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি বুধবার সংলাপে অংশ নিয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়। দলটি ব্যালট পেপারের পাশাপাশি প্রতিটি নির্বাচনি আসনের ১/২টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এসেছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সব আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএম চালু করতে হলে তাদের এক লাখেরও বেশি ইভিএম ডিভাইসের দরকার হবে। আর দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

কাজেই এই সময়ের মধ্যে এত যন্ত্র কেনা বা তৈরি করা সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করছেন। এক্ষেত্রে দলটি  ইসির সঙ্গে সংলাপে আংশিক ইভিএম ব্যবহার চাইবে। জানা গেছে, তারা ৮/১০টি আসনের সব কেন্দ্র অথবা সব আসনের ১/২টি কেন্দ্রে ইভিএম চাল করতে ইসির কাছে প্রস্তাব দিতে পারে।

পুরোপুরি ইভিএম চালুর অবস্থান থেকে সরে আসার কারণ জানতে চাইলে প্রস্তাবনা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা চাই ডিজিটাল যুগে ব্যালট-পেপার ছাড়াই নির্বাচন হবে। এ জন্যই বার বার ইভিএম চালুর কথা বলেছি। আমরা জানি, এটি একবারে সম্ভব নয়। তবে প্রক্রিয়াটা শুরু হতে হবে। এ জন্য আমরা চাই, এবার অন্তত শুরু হোক। এবার আংশিকভাবে শুরু করা গেলে বাকিগুলো পরবর্তী সময়ে করা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ইভিএম আধুনিক প্রযুক্তি। ইভিএম আমরা গ্রহণ করতে চাইব। নির্বাচন কমিশন যদি পারে, চালু করবে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইভিএম না হলে আমরা ভোটে যাব না। আর আমরা জানি, এর জন্য সময় লাগবে। ৩০০ আসনে নির্বাচন। ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্র। ইভিএম চালু করতে হলে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাতে সময় লাগবে।’  

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবীর কাওসার বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে আমরা পিছিয়ে থাকব কেন? আমরা অবশ্যই নির্বাচনে ইভিএম চাইব। তবে কতটা সম্ভব, সেটা নির্ভর করবে কমিশনের ওপর। একবারে সম্ভব না হলেও আমরা চাই, শুরু হোক। এবার আংশিকভাবে হলেও শুরু করা গেলে আগামীতে পুরোপুরি করা যাবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!