• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজে সুন্দরীদের সংস্পর্শেই ‘আর্মস ডন’ অনিক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩০, ২০১৭, ১০:৪৭ পিএম
ডিজে সুন্দরীদের সংস্পর্শেই ‘আর্মস ডন’ অনিক

ঢাকা: অপরাধ জগতে কিস্তিতে অস্ত্র বিক্রির স্টাইল প্রথম চালু করেন তারেক আহমেদ ওরফে ডিজে অনিক (২৫)। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশে এ প্রথা তিনিই প্রথম চালু করেন। এ কারণে অপরাধ জগতের নয়া মডেল হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। পানির ভ্যানে করে অস্ত্র ও মাদক সরবরাহ করা ছিল তার একটি স্টাইল। তবে অভিযোগ রয়েছে, গভীর সখ্যের কারণে পুলিশ নাকি সব সময় নীরবতা পালন করত এসব ব্যাপারে। অনেক সময় অনিক নিজেকে র‌্যাব-পুলিশের সোর্স হিসেবেও জাহির করতেন।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে ডিজে অনিক এসব তথ্য জানিয়েছেন। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এএসপি মিজানুর বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে তারেক আহমেদ ওরফে ডিজে অনিক। সে তার ডিজে পার্টি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেক সহযোগীর নামও প্রকাশ করেছে। সঠিক তদন্ত ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে সেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে ডিজে অনিকের অন্যান্য সহযোগিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীজুড়ে অনেকটা গোপনেই চলছিল ডিজে অনিকের অস্ত্র ব্যবসা। তবে ডিস্কো জকি (ডিজে) ও মাদকের ব্যবসা ছিল ওপেন সিক্রেট। অবৈধ এ তিন ব্যবসা ডিজে অনিককে রাতারাতি কোটিপতি বানিয়ে দেয়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ডিজে অনিক বলেছেন, গত প্রায় দেড় বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন অপরাধীর কাছে কিস্তিতে অস্ত্র বিক্রি করে অপরাধ জগতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ছোট অপরাধীদের পক্ষে একসঙ্গে এক লাখ বা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি অস্ত্র কেনা খুবই কষ্টকর। এ জন্য ছোট অপরাধীদের কাছে আগে অস্ত্র থাকত না। এ চিন্তা থেকেই ডিজে অনিক ছোট অপরাধীদের কাছে কিস্তিতে অস্ত্র বিক্রি করতে শুরু করেন। এতে তিনি অপরাধ জগতে যেমন দ্রুত আলোচিত হয়ে ওঠেন, তেমনি তার অস্ত্র ব্যবসারও ব্যাপক প্রসার ঘটে। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার শর্তে প্রায় এক লাখ টাকা দামের অন্তত ৬০টি অস্ত্র রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন তিনি। আর মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে কিস্তিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা দামের অস্ত্র বিক্রি করেছেন আরো শতাধিক। 
কিস্তিতে এসব অস্ত্র বিক্রির মেয়াদ থাকে এক বছর। কিস্তিতে অস্ত্র বিক্রি প্রথা চালু করার কারণে মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই রাজধানীর অপরাধ জগতে মডেল হিসেবে পরিচিতি পান ডিজে অনিক। রাজধানীর অনেক অপরাধী ডিজে অনিককে চেহারায় না চিনলেও নামে চেনেন সবাই। কিস্তিতে অস্ত্র বিক্রি প্রথাই তার এ পরিচিতি এনে দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ডিজে অনিক আরো জানান, রাজধানীর এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মাদক ও অস্ত্র আনা-নেয়ার কাজ নিরাপদে করতে খাবার পানির ব্যবসা শুরু করেন। পানি সরবরাহের ভ্যানের মধ্যে মাদক ও অস্ত্র রেখে ভ্যান চালককে দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে নেয়া হতো। এভাবে সবার সামনে দিয়েই মাদক ও অস্ত্র আনা-নেয়া হতো স্বভাবিকভাবে। সবাই দেখত পানির ভ্যান। আড়ালে থাকত মাদক ও অস্ত্রের চালান। এ কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিজে অনিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরিফুল ইসলাম আরিফ ওরফে পানি আরিফ। পানি আরিফ গেল বছরের ৪ ডিসেম্বর অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাবন্দি।

এদিকে, রাজধানীর অপরাধ জগতে নয়া মডেল ডিজে অনিকের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক সখ্য ছিল। তাদের বিভিন্ন চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে ডিজে অনিক এ সখ্য গড়ে তোলেন। ডিজে পার্টির সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে গভীর মেলামেশার সুযোগ দিয়ে পুলিশ সদস্যদের আপনজন হয়ে ওঠেন অনিক। ডিজে অনিকের এ কৌশলই মাঠ পুলিশকে নীরব থাকতে বাধ্য করে। 

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুলিশ অনিকের ব্যাপারে নীরবতা পালনের অভিযোগ সঠিক নয়। আগে তার ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি বলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। 

র‌্যাব সূত্রমতে, ডিজে পার্টি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে অনিক। তার নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসী বাহিনীতে দেড় শতাধিক সদস্য রয়েছে।

তথ্য মতে, ডিজে অনিক উত্তর বাড্ডার সাতারকুল রোডের জিএম বাড়ির সচ্ছল পরিবারের সন্তান। তিনি রাজধানীর মানারত স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ডিজে ব্যবসা চালাতে গিয়ে নারীদের সান্নিধ্যে আসেন এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
 
প্রসঙ্গত, গেল ২৬ জানুয়ারি দুপুরে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা রাজধানীর বাড্ডার আফতাবনগর এলাকার একটি বাড়ি থেকে গুলিভর্তি পিস্তলসহ তারেক আহমেদ ওরফে ডিজে অনিককে গ্রেপ্তার করে। রাতেই ডিজে অনিককে বাড্ডা থানায় হস্তান্তর করে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন ২৭ জানুয়ারি পুলিশ অনিককে আদালতে হাজির করে। পরে আদালত তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!