• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম বিতর্ক

ডিভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৯, ২০১৭, ১২:২৮ পিএম
ডিভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি

ঢাকা : একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের (ডিভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন বির্তক। ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আর  বিএনপি বলছে, ইভিএম হচ্ছে সরকারের ডিজিটাল কারচুপির কৌশল। তবে জাতীয় নির্বাচনে ডিভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেদহ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনদের।

ডিভিএম সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, এটির প্রাথমিক মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনে ডিভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা তা চূড়ান্ত করা হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনের বাকি রয়েছে আর মাত্র দেড় বছর। এই অল্প সময়ে তিন লাখ ডিভিএম যন্ত্র তৈরি করা কি করে সম্ভব। ডিভিএম মেশিন নাকি আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটার শনাক্ত করবে। এমনটি হলে কারচুপি হওয়ার বেশি সুযোগ। স্মার্টকার্ড বিতরণে সময় অনেক মানুষের আঙুলের ছাপ মিলছে না। আগামী নির্বাচনের আগে যেখানে দেশের সব ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছাতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে, সেখানে এত কম সময়ে ডিভিএম তৈরি করা সম্ভব হবে কিনা জানি না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, ইভিএম ক্রটিপূর্ণ হওয়ায় সাবেক কমিশন এটি ব্যবহারে আগ্রহী ছিল না। ডিভিএম প্রাথমিক অনুমোদন আমাদের কমিশন দিয়েছিল। এটি যদি ত্রুটিমুক্ত করে তৈরি করা যায় তবে নির্বাচনে কারচুপি ঠেকানো সম্ভব হবে।

এদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভেটিং মেশিন) নিয়ে নতুন করে দেশের বড় দুই দলের মধ্যে বির্তক শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। তবে ইভিএম ব্যবহারের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ইসি আওয়ামী লীগের পরামর্শ চাইলে এর পক্ষে মতো দেব আমরা।

আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ইভিএমের সুফল না জেনেই বিএনপি এর বিরোধিতা করছে। আওয়ামী লীগের যেকোন উদ্যোগের বিরোধিতা করাই তাদের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন পাইলট প্রকল্প হিসেবে ইভিএম ব্যবহার করেছে। তাতে সুফল পাওয়া গেছে। ভোটাররা কম সময়ে ঝামেলা ছাড়াই ভোট দিতে পেরেছে।ডিভিএম সর্ম্পকে হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশন ডিভিএম ব্যবহার করতে চাইলে আমরা সমর্থন দেব।

ইভিএম ও ডিভিএম প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেখানে উন্নত দেশগুলো ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছে সেখানে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে সরকার ডিজিটাল কারচুপির পরিকল্পনা করছে । কারণ, সরকার জানে তাদের ওপর জনগণের সমর্থন নেই। তাই তারা মেশিনের মাধ্যমে কারচুপির নকশা করছে। ইভিএম ও ডিভিএমের ওপর বিএনপির কোনো সমর্থন নেই বলে জানান হাফিজ।

সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কোন প্রযুক্তি গ্রহণের আগে এর ভালোমন্দ দিকগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা জরুরি।

বিদায়ী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নির্বাচন কমিশন যান্ত্রিক সমস্যার কথা বলে শুরু থেকেই ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছিল। নির্বাচন কমিশনের আনাগ্রহে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেনা এসব যন্ত্র ফেলে রাখা হয়েছে। রকীব কমিশনের অধীনে সংসদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা বা উপজেলা পরিষদ ইউনিয়ন নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হয়নি। এটিএম শামসুল হুদার বিগত কমিশন চট্টগ্রাম সিটির একটি ওয়ার্ড দিয়ে ইভিএমের যাত্রা শুরু করে পুরো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সফল হয়।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে দশম সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও রেখে যায় রকিব উদ্দিন কমিশনের জন্য। এ জন্য ইভিএমের প্রটোটাইপ তৈরির নির্দেশনাও দিয়ে যায় বিগত ইসি। সে ধারাবাহিকতা ধরে না রেখে কাজী রকীবের কমিশন ইভিএম থেকে ক্রমেই দূরে সরে যায়।

সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কারৈ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানিয়েছেন,একাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ডিভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করতে চাইলে ৩ লাখ মেশিনের প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক দল ও সরকারের সম্মতি পেলে নির্বাচনের আগেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে এসব মেশিন সংগ্রহ করা সম্ভব।

সিইসি বলেন, আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ছিল, কিন্তু এখন ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) কনসেপ্ট চলে এসেছে। যে নামেই হোক না কেন, প্রযুক্তিটি সবার কাছে আগে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে ছোট ছোট নির্বাচনে ব্যবহারের পর রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পেলেই এর ব্যবহার করা হবে। আমরা কারও ওপর এটা চাপিয়ে দিতে চাই না।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেই রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।

বর্তমানে ইসির হাতে এক হাজার দুইশটির বেশি ইভিএম নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। বুয়েটের সহায়তায় প্রথমে ১৩০টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৪০০টি এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহযোগিতায় আরো ৭০০ ইভিএম ক্রয় করে ইসি। এসব ইভিএম তৈরিতে কমিশনের প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!