• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
চালু হবে প্রাণিজ সম্পদ বীমা

ডেইরি উন্নয়নে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৫, ২০১৮, ১০:০৭ এএম
ডেইরি উন্নয়নে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

ঢাকা : প্রতিবছর বাড়ছে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা। এর ফলে উৎপাদন বাড়লেও মাংস ও দুধের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। দেশে চাহিদার থেকে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ বছরে ৫ লাখ টন কম। ১৩০ মিলিলিটার চাহিদার বিপরীতে দেশে মাথাপিছু দৈনিক দুধের ব্যবহার ৩৫ মিলিলিটার। মাংসের উৎপাদনে ঘাটতি ৫৯ লাখ টন। বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার মাংস ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাণিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও প্রাণিজ সম্পদ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রস্তাবিত প্রাণিজ সম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার চেয়েছে সরকার। প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যেই একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় দেশের ডেইরি খাতকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হবে। পশু স্বাস্থ্য, প্রজনন, বিপণনসহ প্রতিটি খাতের ব্যবস্থাপনায় থাকবে আধুনিকায়নের উদ্যোগ। খামারিদের নিরাপত্তায় প্রবর্তন করা হবে প্রাণিজ সম্পদ বীমা। ডেইরি ফার্মের আধিক্য রয়েছে এমন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে থাকবে অবকাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে বেশ কিছু উদ্ভাবনী ও নতুন উদ্যোগ থাকবে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো প্রাণিজ সম্পদ বীমা চালু হবে। বীমার আওতায় থাকা প্রতিটি পশুর আলাদা পরিচিতি নম্বর থাকবে। এ লক্ষ্যে গড়ে তোলা হবে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার। বীমার আওতায় আসা পশুর স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে বিভিন্ন ধরনের বাধা থাকায় ডেইরি পণ্যের দামে পার্থক্য দেখা দেয়। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারলে দামের পার্থক্য কমে আসবে। উৎপাদকরা পণ্যের ন্যায্য দাম পাবেন। ভোক্তারাও পণ্য পাবেন তুলনামূলক কম দামে। বিশ্বব্যাংকের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার তুলনামূলক বেশি। খাদ্য উৎপাদন মূল পেশা হলেও পল্লী অঞ্চলেই অপুষ্টির হার বেশি। পল্লীর পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার ৪১ শতাংশ। প্রায় ২২ শতাংশ শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১১৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০তম।

এতে আরো বলা হয়েছে, কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষি খাতের ওপর বড় ধরনের নির্ভরতা রয়েছে সরকারের। দারিদ্র্য দূর করে দেশকে মধ্যম আয়ে নিয়ে যেতে কৃষি খাত যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে দেশের প্রাণিজ সম্পদ খাত। কৃষিভিত্তিক জিডিপির ১৪ শতাংশ আসছে প্রাণিজ সম্পদ থেকে। এ খাতে কৃষির ২০ শতাংশ শ্রমিকের পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান রয়েছে। কৃষি খাতের অর্ধেক শ্রমিক এ খাতে খণ্ডকালীন কাজ করে থাকেন।

পল্লী অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবার পশুপালন করে থাকে। প্রান্তিক ও ভূমিহীন পরিবারে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গণ্য হচ্ছে পশু পালন। প্রাণিজ সম্পদ অধিদফতরের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে প্রাণিজ সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে। ২৪ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে।

ডেইরি শিল্পের ঝুঁকি কমাতে ব্যয় করা হবে ১৪ কোটি ডলার। আরো ৩ কোটি ডলার ব্যয় হবে প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা ও মূল্যায়নে। প্রকল্পের আওতায় উৎপাদন বাড়াতে দুটি উপখাতে ৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ৩ কোটি ডলার ব্যয় হবে খামারিদের একটি ফ্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে। সংগঠনটি নিজেদের সামষ্টিক স্বার্থে কাজ করবে। এ খাতের দক্ষতা ও সামর্থ্য উন্নয়নেও কাজ করবে সংগঠনটি। পাশাপাশি ৬ কোটি ডলার ব্যয় করে দক্ষতা ও মান উন্নয়ন করা হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও পুষ্টি ভারসাম্য, প্রজনন উন্নয়ন, আবাসন উন্নয়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পানি ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে এ খাতের অর্থ।

প্রাণিজ সম্পদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কৃষি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান, বিক্রেতা ও পল্লী অঞ্চলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করা হবে প্রকল্পের আওতায়। প্রায় ১২ কোটি ডলার ব্যয় করে গড়ে তোলা হবে ডেইরি শিল্পবান্ধব অবকাঠামো। খামার এলাকায় ডেইরি খাদ্য সরবরাহ ও খামার থেকে বাজার পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের প্রয়োজনে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। ব্যবস্থা করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির। স্থাপন করা হবে কসাইখানা।

এর বাইরে ভোক্তাদের মধ্যে ডেইরি পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচারণায় ব্যয় করা হবে ৪ কোটি ডলার। এর কিছু অংশ ব্যয় হবে বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে দুধ বিতরণে। প্রকল্পের আওতায় ডেইরি খাতের ঝুঁকি কমাতে ১৪ কোটি ডলার ব্যয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যয় করা হবে ৫ কোটি ডলার। প্রাণিজ সম্পদের জন্য বীমা ব্যবস্থা প্রণয়নে ব্যয় করা হবে আরো ৫ কোটি ডলার। এর ফলে ডেইরি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়বে বলেও মনে করে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, আয় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রাণিজ আমিষের প্রাধান্য বাড়ছে। মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন বাড়লেও বাড়তি চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাহিদা পূরণ করতে ২৪ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলারের মাংস ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় কমিয়ে এনে প্রাণিজ সম্পদ খাতকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে প্রকল্পটিতে অর্থ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!