• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ঢাকা অ্যাটাক’ দুর্দিনে সুদিনের শীতল বাতাস


আনিসুর রহমান অক্টোবর ১৬, ২০১৭, ০৫:১০ পিএম
‘ঢাকা অ্যাটাক’ দুর্দিনে সুদিনের শীতল বাতাস

ঢাকা: কিছু দুঃখ- ঢাকা অ্যাটাক দেখতে যাব, লগে টেকা নাই৷ এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলবার গেছি, যেই টাকা উঠাইছি হেইটাই ছেড়া৷ কার্ডে এই টাকাটাই ছিল৷ এখন কি করি৷ সিনেমা আজকে দেহনই লাগবো৷ দৌড়াই গেলাম ব্যাংকে যদি টাকা পাল্টাইয়া দেয় হেই আশায়,যাইয়া দেহি ব্যংক বন্ধ৷ হায়রে কপাল৷

এখন আশা টিকেট কাউন্টার যদি ছেড়া টেকা বুঝতে না পারে তাইলেই টিকিট পাইতে পারি৷ দৌড়াই গেলাম সিলেটের নন্দিতায়৷ বিশাল লাইন, দ্বিতীয় সপ্তাহে আইসাও এমন ভীর কল্পনা করি নাই৷ কাউন্টাররে ফাকি দিয়া কোনমতে টিকিট কাটলাম৷ আল্লায় বাচাইছে এখন সিনেমা দেখা যাবে৷আমার যেদিন কোন কামে কুফা লাগা শুরু হয় ঐদিন বেবাক কামেই কুফা লাগে৷ টাকা লইয়া ঝামেলা হওয়াতে মনের গহীন কোনে মুভি নিয়া কুফা কুফা ভাব আসতেছিল৷ মানে সিনেমা হয়তো আর যত ভাল ভাবছিলাম ততো ভাল হবে না৷ ভয়ে ভয়ে শুরু করলাম দেখা৷

সিনেমা দর্শন- প্রথম সিনেই ড্রোনশট৷ চট্রগ্রামের পাহাড়ের অনেক উপর থেকে সবুজে ঘেরা পাহাড় দর্শন৷ প্রথম শর্টেই মনে শান্তি চলে আসলো৷যাই হোক সিনেমা, এমন একটা সুন্দর শট তো দেখলাম৷ এরপরই বেকগ্রাউন্ড মিউজিকের সাথে সাথে চলা শুরু হল সিনেমা, একেবারেই সিনেমাটিক ওয়েতে৷ মাঝে মাঝে ভেবে উঠলাম হলিউডি সিনেমা দেখছি নাতো! এই ভাবটা সিনেমা শেষ হওয়া পর্যন্ত ছিল৷

যা কিছু ভাল লাগেনাই- প্রথম দিকেই শুভ যে বাচ্চা গুলোকে ট্রেইনিং দিচ্ছিল ঐগুলানের মধ্যে একটা বাচ্চা তার পোজ গুলো ঠিক মতো দিতে পারছিলোনা৷ শেষের দিকে আইসা মোড় গোড়াটা ঠিক মতো হয় নাই৷ পরিচালক চাইলে একঝাক চৌকস বাচ্চা দিয়ে ট্রেইনিংটা করাতে পারতো৷ 

বাচ্চাদের স্কুলের বাসে যে ব্লাষ্টটা হলো গাড়ি থেকে তার দুরত্ব ছিল অনেক৷ এই ব্লাষ্টটাকে আরো পরিপুর্ণ করারা জন্য ব্লাষ্টের ভিজ্যুয়ালাইজেশনটা আরেকটু পারফেক্ট হওয়া দরকার ছিল৷ বাজেটের ঘাটতিতে ভিএফএক্সের কাজটা ঠিক মতো হয় নাই হয়তো৷ এই জায়গায় আরো কিছু মৃতদেহ পড়ে থাকলে আরেকটু পাকা হতো সিনটা,বিশেষত যখন পুলিশের ডিআইজি, আইজি, একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ উপস্থিত ছিল৷ আর তাদের মুখগুলো খুবই বিমর্ষ লাগছিল৷ ক্ষতিটা আরেকটু বেশি হলে রিলেট করতে পারতাম৷

তবে এই হিসাবে দোয়েল চত্বরের ব্লাষ্টিংটাকে রিলেট করতে পারছি৷মোটামুটি পারফেক্ট৷ মালয়শিয়ার সিনগুলো মুভিটারে একটু স্লো করে দিয়েছে মনে হলো৷ যদিও সিনগুলো মুভির কাহিনীর সাথে পারফেক্ট, তবুও হলে বসে কখন বাংলাদেশি সিনগুলো আসবে তার অপেক্ষায় ছিলাম৷ এর আরেকটা কারন শিপন, এর অভিনয় এখনো অনেক কাঁচা৷ এক্সপ্রেশনের সাথে ডায়লড ডেলিবারি ভাল লাগে নাই৷ অনেকে বলেছেন যে এই মুভিতে তার অভিনয় আগের চেয়ে ভাল হয়েছে৷ তার আগের অভিনয় দেখি নাই,তাই বলতে পারবো না৷ 

শেষের দিকে বোম্ব ডিসপোজালের সময় শুভর অভিনয় একটু দুর্বল মনে হইছে৷ যেখানে তার হাতে সময় অনেক কম সেখানে তার যতটা না বোম্বডিসপোজালে মন দেয়ার কথা তার চেয়ে বেশি সে হাত ছুড়াছুড়ি, আহ-উ আওয়াজ আর আকাশের দিকে তাকাইয়া সময় নষ্ট করছে৷ এই সিনটাতে তাকে বেশি চিন্তিত মনে হয় নাই৷ কাজটা আরো প্রফেশনালি করা উচিত ছিল,তীব্র মনযোগী হওয়া উচিত ছিল৷ 

ডবল ভাইয়ের কমেডিগুলার দিকে আরেকটু নজর দিলে কমেডিগুলা আরো ভাল হইতে পারতো৷ যা কিছু ভাল লাগছে- আহ!! ভাল লাগার যে শেষ নেই৷ প্রথমেই আমি দীপঙ্কর দীপনকে ধন্যবাদ দিতে চাই এমন ক্যারেশম্যটিক সিনেমা তৈরীর জন্য৷ যা কিছু ভাল তার সবই আপনার প্রাপ্য৷ সানী সানোয়ারের প্লট সিলেকশন দুর্দান্ত৷

বাংলাদেশীরা যে ধনী গরিবের প্রেম দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছে, যেখানে এমন একটা ঝলঝলে ভিন্নধারার সিনেমা তৈরীর জন্য আপনাদের জানাই সাধুবাদ৷ প্রথম সিনেমা সেই হিসেবে কিছু কিছু ভুল মেনে নেয়া যায়৷ যদিও ভুলের পরিমান অতীব সামান্য, প্রচলিত বাংলা সিনেমার তুলনায় এইসব আসলে কোন ভুলই না৷

প্রথমেই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক- মাথানষ্ট মিউজিক৷ সোয়াতের অপারেশনের সময় বেজে উঠা মিউজিক বুকে কাপন ধরিয়ে দেয় যদিও হলের ভিতর পানি-টাইগার ওয়ালাদের চিল্লাচিল্লিতে মাঝে মাঝে নিজেকেই ভেতর থেকে ফিল করে নিতে হয়েছে৷ কার চোরকে ধরতে কার রেসিংকে চেজ করা, এই প্রথম আমি বাংলাছবিতে হলিউঠি স্টাইলে কার রেসিয়ের চিত্র দেখলাম৷

টিকাটুলির মোড় বাংলাছবির এই দুর্দিনে সুন্দর প্রেজেন্টেশনে উপভোগ্য একটা গান৷ কাউয়ালী গানের আসরের মতো করে, দুর্দান্ত নাচ আর মিউজিকে বুদ হয়ে ছিলাম৷ আইটেম গান হিসেবে এই গানটা সিলেক্ট করা আপনাদেরই সাজে৷ সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই ছবির কন্টিনিউটি, কোথাও চোখ ফেরানোর সময় পাই নাই৷ ছোট খাট কথাবার্তা থেকেও ক্লু চলে আসছে৷ তাই মনযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায় নাই৷ এটা পুরাই ডিরেক্টরের কৃতিত্ব৷ নিজের প্রথম ছবিতে এমন করে কেমনে পারলেন ভাই?

মাহিয়া মাহি- মাহীরে নিয়া সমালোচনা চলতেছে তার অভিনয় ঠিক হয় নাই৷ আমার কাছে তাকে যথেষ্ট স্ট্রংই মনে হইছে৷ শুভ প্রথম পর্দাতে আসাতে দর্শক যতনা চিল্লাইছে তারচে বেশি চিল্লাইছে মাহীর এন্ট্রিতে৷ পুলিশকে ছোট ছোট ক্লু বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে তার অবদানও কম নয়৷ চরিত্রটির অনেক গুরুত্ব আছে৷বানিজ্যিক ছবির জন্য হলেও মাহীর গ্লেমারাস লুকটার দরকার ছিল৷ যারা সমালোচনা করতেছেন তারা ঠিকই মাহীর ন্যাকামীপুর্ণ অভিনয় উপভোগ করেছেন মনে মনে৷ আর পরিচালকের উদ্দেশ্য এটাই ছিল সম্ভবত৷

সুমন-এই লোকটার বডি ল্যঙ্গুয়েজ আর ভয়েজ এক্সট্রিম পর্যায়ের৷ ঠিক মতো যদি ইন্ডাষ্ট্রিতে তাকে কাজে লাগানো যায় তাহলে সেই হতে পারে ইন্ডাস্ট্রির কান্ডারী৷চেহারাটাও মাসাল্লা৷ সোয়াটের অপারেশনের সিনগুলোতে সে সত্যিই মিশে গেছে চরিত্রের সাথে৷ নওসাবা-মেয়েটার কষ্ট৷ যতবারই স্ক্রিনে তার সিন এসেছে দর্শক ততোবারই চিল্লাইছে৷ একটা গর্ভবতী মেয়ে অন্তিম পর্যায়ে তার স্বামীর জন্য আকুল হয়ে আছে৷ এসব সিনে মানুষ হাসে আর চিল্লায় কেমনে মাথায় ধরে না৷ স্বামীর জন্য তার হাহাকরা গুলো বুকের ভিতর আঘাত করে, এতই পারফেক্ট অভিনয়৷ 

আহারে কষ্ট!
শুভ-প্রথমদিকে তার অভিনয় চমৎকার ছিল৷ কিন্তু মাঝে মাঝে খাপছাড়া হয়ে গেছে৷ তবে লোকটারে অনেক ভালবাসি, ছবি সিলেকশনে সে অনেক ভাবে৷কিছু কিছু লুক বিশেষকরে টিকাটুলির মোড়ে গানটায় আর মাহীর পিছনে ধাওয়ার সময় তার লুকটা ছিল অনবদ্য৷ বোম্ভ ডিজপোজালের পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে তার এক্সপ্রেশন ছিল দেখার মতো৷শেষের সিনে ভিলেনের লাষ্ট স্ট্রং ভয়েজ ডেলিভারির পরে যখন শুভ ডায়লোগ থ্রো করলো তা এক্কেবারেই ডাউন ছিল,এমন ভিলেনের সামনে এরকম লোজ ডায়লোগ মানায় নাই ৷ অন্ততো শুভর ভয়েজটা আরো স্ট্রং,গম্ভীর হওয়া দরকার ছিল, যাতে কথায় অন্ততো ভিলেনকে পরাজিত করা যায়৷ এখানে শুভ ফেল করছে৷ এই কারনেই তাসকিন এই মুভিতে ভিলেনরুপী নায়ক৷

শতাব্দী ওয়াদুদ-লোকটার ভয়েজ এক্সট্রিম পর্যায়ের৷ বডি এক্সপ্রেশন এর সাথে ভয়েজ আসামীদের মুখ থেকে কথা বাহির করার জন্য এনাফ৷ দীপঙ্কর দীপন ওনাকে খুব ভাল স্পেস দিয়েছেন তাই চরিত্রটা পারফেক্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন৷
আসামী যখন ক্লু দিচ্ছে না তখন বাহিরে এনে গুলি করার যে ফর্মুলা দেখালেন তিনি, পুরা কাপাই দিছে হল৷‘ঠিক কপালে, দুচোখের মাঝখানে’-ভয় দেখানোর এরচেয়ে ভাল ওয়ে আর কি হতে পারে? এমন ইনভেষ্টিগেটর অফিসারের সাথে এর আগে বাংলা ছবিতে আমার সাক্ষাত হয় নাই৷ এই লোকটার ফিল্মে প্রচুর প্রচুর অভিনয় করা দরকার৷ হায়রে, কে বের করবে এমন ভাবে তার অভিনয়? লোকটার ভীষন ভীষন ফ্যান হয়ে গেছি৷

ভিলেন- কিছুই বলবো না৷ তার সম্পর্কে অলরেডি সবাই বলে ফেলছে৷ কিচ্ছুই বাদ নাই৷ তবে জলন্ত সিগারেট হাতের মুঠোতে চেপে ধরার সিনটা যাষ্ট মাথানষ্ট৷

পর্দার পেছনের কারিগর:
দীপঙ্কর দীপন- স্টাইলিস ডিরেক্টর৷ তিনি খুব ভাল করেই জানেন যে বাংলার জনতা কোন ধরনের মুভি দেখতে পছন্দ করেন৷ তিনি মাসের সাথে তার থিঙ্কিংটা খুব ভালভাবে রিলেট করতে পেরেছেন৷ ফলাফল মুভি সুপারহিট৷ তার কয়েকটা সাক্ষাতকার দেখে বুঝতে পারলাম যে তিনি কত পরিচ্ছন্ন ভাবে চিন্তা করতে পারেন, গুছিয়ে কথা বলতে পারেন৷ পাশাপাশি গুছিয়ে কাজটাও যে করতে পারেন তার প্রমান ‘ঢাকা অ্যাটাক’৷ তার মতো নম্র পরিচালক আমাদের খুব দরকার,খুব দরকার৷ 

সানী ছানোয়ার- এই রকম গল্প লেখার জন্য ধন্যবাদ৷ এই সিনেমার কারনে অন্ততো পুলিশের প্রতি মানুষের ধারনাটা একটু হলেও পাল্টাবে৷ পুলিশ যে যান্ত্রিক না তারাও যে মানুষ, তাদেরও যে আবেগ ভালবাসা আছে,পরিবারের প্রতি পিছুটান আছে তা আপনি না থাকলে ফিল করা হতো না এতো গভীর ভাবে৷ নিজের জীবনের খানিকটা অংশ আশফাকের মাধ্যমে তুলে ধরে দেশের জন্য পুলিশের সেক্রিফাইজটা ভাল করেই বুঝাতে পেরেছেন৷ 

সিনেমাটোগ্রাফার- নাম মনে নাই৷ ওনি আরো বেশি প্রশংসা পাওয়ারর যোগ্য৷ এতো সুন্দর সু্ন্দর ক্যামেরার কাজের জন্যই মুভি থেকে চোখ ফেরানো যায় নাই৷ ধন্যবাদ৷ 

বেকগ্রাউন্ড-

মিউজিক ডিরেক্টর অরিন্দমের কাজ পারফেক্ট৷ এই ধরনের মুভিতে ছবির টানটান উত্তেজনার সময় আপনার মিউজিক মুভির গতিশীলতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছে৷

টুপটাপ গানটা পর্দায় অনেক সুন্দর লাগছে, এতো উত্তেজনার মাঝে খানটা একটু স্বস্থি দিয়েছে,চোখের আরাম দিয়েছে৷
পরিশেষ- যারা অপরাধী, যারা দেশের ক্ষতি করার জন্য কাজ করে তারা আমাদের চারপাশেই থাকে৷ আমাদের সাথে মিশে,তারপর আমাদের উইক পয়েন্ট গুলো বের করে, শেষে মোক্ষম আঘাত হানে৷ এই মুভিতেও এমন অবস্থা৷ মুভি শেষ হয়ে যাইতেছে মাগার ভিলেন খুজে পাচ্ছি না, সে আসবে কখন?  কিন্তু এরই মাঝে যে পরিচালক কয়েকবারই আমার সাথে ভিলেনের দেখা করিয়ে দিয়েছেন তা আমি খেয়ালই করি নি৷

এখানেই পরিচালকের স্বার্থকতা৷ যারা ক্ষতি করতে চায় হোক ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষতি তারা আমাদের চারপাশে ঘুরে,ভান ধরে,বোকা বানায় তারপরই আমাদের ক্ষতি করে,আমরা যদি আগেই এইসব লোকদের আইডেন্টিফাই করতে পারি তাহলে সেভ থাকতে পারি৷Because prevention is better then cure..মুভির আড়ালে পরিচালক বাস্তবের এই শিক্ষাটাই হয়তো দিয়েছেন আমাদের৷ যদিও মুভি মানে স্রেফ বিনোদন, এখানে শিক্ষাদেয়া হয় না৷ শিক্ষা দেয়া হয় স্কুল,কলেজ ,বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ আমি শুধু আমার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বললাম মাত্র৷ 

বিঃদ্রঃ- আচ্ছা যারা সিলেটের নন্দিতা সিনেমাহলে মুভি সাউজফুল হচ্ছেনা বলতেছে তারা কি কখনো সিনেমাটা দেখার জন্য ভিতরে ঢুকেছে? আমার তো মনে হয় না৷ দ্বিতীয় সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনেও লাইনে দাড়িয়ে টিকেট কিনতে হয়েছে৷ এবার বুঝেন! নন্দিতা সিনেমাহলের ফেসবুক পেজটা অবশ্য খুব অ্যাক্টিভ৷ এই সব এরাভেরা পাবলিক গুলারে যথেষ্ট সাইজ করতেছে৷
এই গ্রুপে আমার প্রথম রিভিউ৷ ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!