• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

ঢাকা আক্রমণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ১২:৫০ পিএম
ঢাকা আক্রমণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর। এদিন ঢাকায় অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছিল। এরই মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল এস এইচ এফ জে মানেকশ অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং লিফলেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানাতে থাকেন। প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানি বাহিনীও পরিণামের চিন্তায় একবার যুদ্ধবিরতির কথা ভেবেছিল। ঢাকাস্থ আমেরিকান কনস্যুলেটের মাধ্যমে বার্তাটি দেয়া হয়। একই দিনে মিত্রবাহিনী চাঁদপুর ও দাউদকান্দিকে দখলদারমুক্ত করে। এই অবস্থায় ঢাকা আক্রমণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এর অগে ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হয়। পাকিস্তানিরা কোনো যুদ্ধ না করেই পিছু হটে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হয়। মিত্রবাহিনী ক্যান্টনমেন্টের দিকে না গিয়ে ঢাকা আক্রমণের সিদ্ধান্তে এগিয়ে যায়।

এদিকে ‘এদিন দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ যশোরের ওপর একটি প্রতিবেদন পরিবেশন করে।  এতে বলা হয়, মিত্রবাহিনীকে স্বাগত জানাতে বাঙালিরা যশোরে নাচগান করছে। এছাড়া লোকজনের জয়বাংলা, (বঙ্গবন্ধু) শেখ মুজিব, (বঙ্গবন্ধু) শেখ মুজিব স্লোগানে মুখরিত। বিবরণে বলা হয়, পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংস করে দেয়া নদীর ওপরের সেতুগুলোকে অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করে দিতে হাজার হাজার মানুষ মিত্রবাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। প্রতিবেদক বলেন, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তত্ত্বাবধানে হাজার হাজার গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মাত্র চার ঘণ্টায় নদীর ওপর একটি সেতু অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করে দিয়েছে, তা দেখে তিনি অবাক হয়েছেন। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডকে জানান, পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু তারা একটি যুদ্ধবিরতির পক্ষে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী হেনরি কিসিঞ্জার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানান, ভারতীয়রা ঢাকা থেকে ২২ মাইল দূরে অবস্থান করছে। হেনরি কিসিঞ্জার তার যন্ত্রণার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানিয়ে বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আত্মসমর্পণ করলেই পাকিস্তানি সৈন্য, সংখ্যালঘু (বিহারি) ও কূটনৈতিক কোরের জন্য সহনশীল হবে। তিনি বলেন, যদি মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাহলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। কিসিঞ্জার নিক্সনকে বলেন, ‘আমি অবাক হয়েছি, চীন কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করায়। তারা কোনো তৎপরতা তো চালায়নি, এমনকি কোনো হুমকিও দেয়নি।’

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট বিমানবন্দর মেরামত এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের ঢাকা ত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। এ সময় পাকিস্তানের নবনিযুক্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যোগদান করেন। ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘একজন বাঙালি নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে, তার ডেপুটি করা হয়েছে ভুট্টোকে, কিন্তু তিনি নিউইয়র্ক যাত্রা করায় শপথ গ্রহণ করা হয়নি।’ ইয়াহিয়া খান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডকে আরো জানান, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা একটি নতুন ঐকমত্য গড়ে তুলতে (বঙ্গবন্ধু) শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। 

এদিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লমেন্টের যৌথসভায় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শুধু ভাবাবেগে পরিচালিত হয়ে আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারণী সরকারি ভাষ্য ও বিবৃতি ভারত সরকার পাওয়ার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিদানের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।’ তার এ ঘোষণায় পার্লামেন্ট সদস্যরা সমস্বরে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে একে অপরকে আবেগে জড়িয়ে ধরেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবর্ণনীয় বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের ইতিহাস এক অন্য অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!