• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

ঢাকার দিকে এগিয়ে যায় মিত্রবাহিনী


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ০১:০০ পিএম
ঢাকার দিকে এগিয়ে যায় মিত্রবাহিনী

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর। এদিন মুক্ত হয় ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা, নওগাঁ জেলার রানীনগর ও ঢাকা জেলার রায়পুরা থানা। ১৯৭১ সালের এই দিনে এসব এলাকা শত্রুমুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ভোরের আলো  ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনীর দুর্বার আক্রমণের মুখে দখলদার পাক বাহিনী পালিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৯ মাসের শ্বাসরুদ্ধকর বন্দিদশার অবসান ঘটে মুক্তাগাছাবাসীর। এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় ৩৭ ঘণ্টা তুমুল সম্মুখযুদ্ধের পর রানীনগর উপজেলাকে হানাদারমুক্ত করে। শুধু এই তিনটি থানা নয়, দেশের চারদিক থেকে বীরদর্পে এগিয়ে আসতে থাকেন মুক্তিপাগল যোদ্ধারা। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গলদঘর্ম হন মিত্রবাহিনীর অফিসাররা। হানাদার বাহিনী তখনো আত্মসমর্পণ করেনি। তবে চারদিকে গুঞ্জন, যেকোনো সময় আত্মসমর্পণ করতে পারে হানাদাররা। তবে একের পর এক শহরের পতন ঘটছে। হানাদাররা দলবেঁধে এসে ঘাঁটি গাড়ছে বড় কয়েকটি শহরে। বেশির ভাগই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। 

অন্যরাও ঢাকা লক্ষ্য করে এগোচ্ছে। কিন্তু তাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুক্তিবাহিনী। অনেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে। বেশির ভাগই মারা পড়ছে। বরাতজোরে যারা মিত্রবাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে, তারা আত্মসমর্পণের সুযোগ পাচ্ছে। হানাদাররা তাদের নিয়তি অনুধাবন করতে পারছে। মৃত্যু বা আত্মসমর্পণ, এর মাঝামাঝি কিছু নেই। এই পর্যায়ে তারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য দেশ স্বাধীন হলেও যেন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। তারা প্রধান প্রধান নদীর সেতু ভেঙে দেয়, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় বড় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। তবে খুব বেশি দিন তারা এমন অঘটন ঘটাতে পারেনি। স্রোতের মতো চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আসতে থাকে। সেই সঙ্গে হানাদারদের এদেশীয় দোসররা গণহারে ধরা পড়তে থাকে। তবে নেতৃস্থানীয়দের অধিকাংশই আগেভাইে ঢাকায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।

চারদিকে খবর হচ্ছে- পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করতে চায়। কিন্তু তাদের দাবি, তারা কেবল ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে, সেখানে মুক্তিবাহিনী থাকতে পারবে না। তাদের আশঙ্কা ছিল, মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে তারা কাউকে আস্ত রাখবে না। প্রতিশোধের আগুনে তাদের শরীর টগবগ করছে। মুক্তিবাহিনী এ প্রস্তাব মানতে নারাজ। অপরদিকে ভারতীয় বাহিনী হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে দেশের বৃহৎ অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়েছে। এসব অঞ্চলে চলছে উল্লাস। মুক্তাঞ্চলের মানুষও মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে শত্রুর সন্ধানে, তাদের কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। এখন এদের নিয়ন্ত্রণের জন্যও মিত্রবাহিনীকে সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। বারবার হুঁশিয়ার করে দেয়া হচ্ছে, যেকোনো সময় শত্রুর গোলা এসে পড়তে পারে।

শত্রুবাহিনী যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেই সব বড় বড় শহর পাশকাটিয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে যায় মিত্রবাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য ঢাকার পতন ঘটানো। তাহলে এসব শহরে আশ্রয় নেয়া হানাদার সৈন্যরা বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!