• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিকে ধেয়ে আসছে বন্যা, দিশেহারা বানভাসি


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ১৫, ২০১৭, ০৩:৩১ পিএম
ঢাকার দিকে ধেয়ে আসছে বন্যা, দিশেহারা বানভাসি

ঢাকা : সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। এতে ভয়ঙ্কর রুপ নিচ্ছে বন্যা। সারাদেশে বন্যায় এ পর্যন্ত ৩৭ জন মারা গেছেন। এছাড়া ঢাকাসহ আরও ৯টি জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যার বিস্তার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের দুভোর্গ ও রোগবালাই। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এরই মধ্যে কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরের সঙ্গে সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের ছোট বড় ২৭টি নদীর পানি এখন বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় বাঁধ,উঁচু সড়ক, আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা।

এর মধ্যে খাদ্য সংকটে পড়েছেন বানভাসীরা। অনেকের ঘরে খাবার থাকলেও তা রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছেন না তারা। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানে এবছর স্মরণকালের মারাত্মক বন্যা হয়েছে। আর উজানের দেশগুলোতে বন্যার প্রভার পড়ছে ভাটির দেশ বাংলাদেশে। ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় সবকটি জেলাই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। দেশের উজানে তিনটি অববাহিকায় (গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা) গত দুই-তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে।

এদিকে, চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফার বন্যায় এ পর্যন্ত ২০ জেলার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। বন্যা মোকাবেলা এরইমধ্যে দিনাজপুরে উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিককায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশংকা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীগুলোয় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, নদ-নদীগুলোর ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের ৬৯টিতে পানি বাড়ছে। এর মধ্যে ২৭টি পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারায় সমান তালে পানি বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ধরলা, তিস্তা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধলেশ্বরী, গুর, ধলেশ্বরী, ইছ-যমুনা, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, আত্রাই,পদ্মা,  সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, যদুকাটা, সোমেশ্বরী ও কংশ নদীতে পানি বিপদসীমার উপরে বইছে।

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করে এ কর্মকর্তা বলেন, যমুনার বাহাদুরাবাদ  কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ ও সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বইছে বিপদসীমার ৯৬ থেকে ১১৮ সেন্টিমিটার উপরে। পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টেও বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপরে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলছেন, দেশের উজানে তিনটি অববাহিকায় (গঙ্গা, বহ্মপুত্র ও মেঘনা) গত দুই-তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ফলে এসব অববাহিকার ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশের নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে অধিদপ্তর।

পানি বৃদ্ধির হার অন্তত আরও ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়ে তাদের বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলায় চলমান বন্যা গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বিস্তৃত হবে। পাশাপাশি মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সোমবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে আরও দু’দিন।

বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলে উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে, ৮৫ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসেরও আশঙ্কা থাকে।

দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ : সারাদেশের সঙ্গে দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সোমবার রাতে বন্যার পানির স্রোতে কুড়িগ্রামের টগরাইহাট এলাকার বড় পুলেরপাড় সংলগ্ন রেলের সেতু ভেঙে যাওয়ায় সারাদেশের সঙ্গে কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান,কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে সন্ন্যাসীর ড্রেন দিয়ে ধরলা নদীর পানি প্রবেশ করে পানির স্রোতে টগরাইহাট রেল স্টেশনের পূর্ব প্রান্তে বড়পুলের পাড় এলাকায় রেলপথের ব্রিজ (১৭ জে/ ৪৫৫-০২) ভেঙে যায়। ফলে ওই পথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শহরের বেশির ভাগ এলাকাসহ রেললাইনের ওপরে পানি আসায় বন্ধ রয়েছে রেল যোগাযোগ। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জেলা প্রশাসন প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম জানান, বন্যার কারণে পানিতে ডুবে রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে রোববার আরও নয়জনের মৃত্যু হয়।

যমুনার পানি বৃদ্ধিতে রেকর্ড, মধ্যাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা : যমুনা নদীর পানি জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে এ যাবতকালের সব রেকর্ড ভেঙে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে যমুনার পানি চিলমারী পয়েন্টেও আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে এবং দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলেও বন্যা বিস্তৃতি লাভ করতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে, সোমবার মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, এবারের বন্যায় ২০টি জেলার ৩৫৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে মোট ৫ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বন্যায় প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট: সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি ওইসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের সংশ্লিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিলেও পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে ক্ষুর্ধাত অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। ত্রাণ সহায়তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শিশু খাদ্যের অভাব। এছাড়া নানা রোগ বালাইও ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে বন্যায় কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী সড়ক প্লাবিত হয়ে কয়েকটি জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরকার বলেন, শুকনো খাবারের অভাবে বন্যা কবলিত লোকজন কষ্টে দিন যাপন করছে। অনেকের ঘরে খাবার থাকলেও তা রান্না করার মতো ব্যবস্থা নেই।

শেরপুরে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে : টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে যেতে শুরু করেছে শেরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনের বন্যায় ডুবে যাওয়া নালিতাবাড়ীর পৌর শহর ও আটটি ইউনিয়নের বাড়িঘর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার দুদিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ভোগাই নদীর দশটি স্থানের প্রায় ২ হাজার ৯শ ১০ ফুট বাঁধ ভেঙে যায়। এতে পৌরসভাসহ আটটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫ হাজার ৬শ পরিবার পানিবন্দি হয়। তবে রবিবার ভোর থেকেই এসব অঞ্চলের পানি নেমে যেতে শুরু করে।

তবে ভোগাই নদীতে পাহাড়ি ঢলের ফলে প্লাবিত শেরপুর সদরের গাজীরখামার ও নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের নিুাঞ্চলে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। এ দুটি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, আমন বীজতলা ও সবজির আবাদ এখনও পানিতে তলিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বগুড়ায় বাঁধ রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন : টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনার পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা এলাকার পাউবোর বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল হোসেন মোহাম্মদ আবু হেনা বলেন, যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার নয়টি, সোনাতলা উপজেলার তিনটি এবং ধুনট উপজেলার দুটিসহ জেলার ১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪৫৫টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সিলেট শহরে : বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান শহর সিলেটে। টানা বর্ষন ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি তীর উপচে পানি ঢুকে পড়েছে নগরীতে। ফলে নগরীর কয়েকটি এলাকার নিাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, সুরমা নদী সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। সিলেট পয়েন্ট ছাড়াও এই নদী এবং কুশিয়ারা নদী সব কয়টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে রয়েছে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!