• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার পানি শোধনাগার নির্মাণে অগ্রগতি নেই


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ৭, ২০১৬, ০৩:১৯ পিএম
ঢাকার পানি শোধনাগার নির্মাণে অগ্রগতি নেই

রাজধানী ঢাকার পানি চাহিদা মেটাতে চারটি বড় শোধনাগারের উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তা আলোর মুখ দেখছে না। ঢাকা ওয়াসা দীর্ঘ দেড় যুগ আগে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল এবং ২০২১ সালের মধ্যে তা শেষ করার কথা। কিন্তু দীর্ঘ এসময়ের মধ্যে ওই প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ হয়েছে একেবারেই যৎসামান্য।

আরেকটি প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ হলেও কাজ হয়েছে এক-তৃতীয়াংশ। আর বাকি দুটি প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতিই নেই। এ পরিস্থিতিতে ওয়াসার কর্মকর্তারাই বলছেন নির্ধারিত সময়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না। মূলত অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই প্রকল্পগুলোর এই অবস্থা। ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলাও হয়েছে। ওয়াসা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ওয়াসার গৃহীত বড় পানি শোধনাগারের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের পদ্মা, নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে শোধন করে ঢাকায় সরবরাহ করা হবে। তাতে একদিকে যেমন নগরবাসীর পানির চাহিদা মিটবে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতাও কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে ওসব প্রকল্প কবে নাগাদ শেষ হবে তা সংশ্লিষ্টরাও বলতে পারছেন না। ফলে রাজধানীর পানি সমস্যা সমাধানে খুব তাড়াতাড়িই তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

সূত্র জানায়, ঢাকার টেকসই পরিবেশ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৫ সালের দিকে মেঘনা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে ঢাকায় সরবরাহ করার জন্য গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের গন্ধর্বপুরে এলাকায় নির্মাণাধীন ওই শোধনাগারে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের শম্ভুপুরা মৌজার বিষনন্দী পয়েন্টের মেঘনা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি আনা হবে।

সেখানে পানি শোধন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা রাজধানীতে সরবরাহ করা হবে। সেজন্য মোট ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু সর্বশেষ ওই প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ১১ হাজার কোটিতে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি পাওয়ার কথা।

২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার ছিল। কিন্তু এখনো ওই প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি ঘটেনি। কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে তাও কেউ বলতে পারছে না। তাছাড়া রাজধানীর মিরপুরে পানি সরবরাহের জন্য প্রায় এক যুগ আগে তেঁতুলঝরা-ভাকুর্তা প্রকল্পটি শুরু হয়। ৫২১ কোটি টাকার ওই প্রকল্প আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। তাতে ৪৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে পানি তুলে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।

সূত্র আরো জানায়, ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে শোধন করে সরবরাহ করার পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। সেজন্য মাওয়ার জশলদিয়া পয়েন্টে ৮২ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চায়না সিএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে বিনা দরকষাকষিতে কাজ দেয়ায় ওয়াসার ইতিমধ্যে ৩৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ওই ঘটনায় দুদকে মামলাও চলছে। ওই প্রকল্পের ৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইনের জন্য চীন থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপ আমদানি করা হয়।

ওসব পাইপের ব্যাস ২১ মিলিমিটার হওয়ার কথা। যদিও আমদানি করা হয় ১৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার ব্যাসের পাইপ। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আপত্তি দেয়। অভিযোগ রয়েছে, পাইপের ব্যাস কমিয়ে কম দামে পাইপ এনে ওই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে ওসব পাইপ আটকে থাকে।

পরে সেগুলোকেই ব্যবহারের জন্য নিয়ে আসা হয়। তাছাড়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর কথা ছিল দ্বিতীয় শোধনাগারের কাজ শেষ হওয়ার আগেই। তিন বছর আগেই দ্বিতীয় শোধনাগার উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তৃতীয়টির কাজই শুরু হয়নি। এখন বলা হচ্ছে- ওই প্রকল্পের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা খরচের হিসাব করা হলেও সম্ভাব্য ঋণদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। ডেনমার্ক টাকা দিতে আগ্রহী আছে। কিন্তু তারা নানা শর্ত জুড়ে দিচ্ছে।

এদিকে শোধনাগার নির্মাণে বিলম্ব প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন─প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধান সমস্যাই হচ্ছে টাকা। দাতা সংস্থাগুলো যে অর্থ দেয় তার সুদ দিতে হয়। দাতা সংস্থাগুলো সমীক্ষা করে তাদের লোকজন দিয়ে। ফলে কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। বর্তমানে প্রতিদিন চাহিদার ২৪০ কোটি লিটার পানির ৭৮ শতাংশ ভূগর্ভস্থ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে তোলা হয়। বাকি ২২ শতাংশ পানি ভূ-উপরিস্থ ক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়। গৃহীত প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্যই ছিল ২০২১ সালের মধ্যে পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু প্রকল্পগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে তা আর সম্ভব হবে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজ উদ্দিন বলেন, গ্রহীত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করতেই অনেক সময় লাগে। জনগণ জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে নানাভাবে বাধা দেয়। অনেকে মামলা করে। এখানেই এক বছরের কাজে দুই-তিন বছর লাগে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!