• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় বন্ধ হল পূর্ণিমা, খুলনায় চালু হচ্ছে সিনেপ্লেক্স


বিনোদন প্রতিবেদক এপ্রিল ৬, ২০১৭, ০৬:৩৬ পিএম
ঢাকায় বন্ধ হল পূর্ণিমা, খুলনায় চালু হচ্ছে সিনেপ্লেক্স

ঢাকা: বাংলা সিনেমার জৌলুসময় সময় কিভাবে নির্ণয় করা যায়, বা তার প্রক্রিয়া কি তার বেশ কিছুটা নির্ভর করে মূলত প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যার উপর। এই হিসেবে নব্বইয়ের দশককেই বলা হয় সিনেমার জন্য সোনালী সময়। কারণ পরিসংখ্যান বলে, নব্বইয়ের দশকে পুরো বাংলাদেশে মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল অন্তত ১২’শ-এর অধিক। অথচ বর্তমানে যা এসে ঠেকেছে মাত্র সোয়া তিনশোতে! তাও এরমধ্যে অনিয়মিত প্রায় পঞ্চাশটির মতোন সিনেমা হল। আর এরমধ্যেই থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে, ঢাকাসহ দেশের বাইরের শহরগুলোতে ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল বন্ধ করে সেখানে উঠছে বিশাল অট্টালিকা, বহুতল ভবন। তেমনি বাংলা সিনেমার জন্য আরো একটি দুঃসংবাদ শোনা গেল সদ্যই!

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র কারওয়ান বাজারের প্রজাপ্রতি গুহা সংলগ্ন ‘পূর্ণিমা সিনেমা হল’টি বন্ধ হয়ে গেছে। গেল ৩১ মার্চ(বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় পুরনো এই সিনেমা হলটি। যেখানে ঢাকা শহরের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শক প্রতিনিয়তই ভীড় জমাতো বাংলা সিনেমা দেখতে। কিন্তু এই মানুষদের কথা সামান্য তোয়াক্কা না করে কর্তৃপক্ষ হঠাৎই জানিয়ে দিল যে, এখানে আর সিনেমা হল থাকবে না। নির্মাণ করা হবে বহুতল ভবন।

অথচ বাংলা সিনেমার জৌলুসময় সময়ে শুরু হয়েছিল পূর্ণিমা সিনেমা হলটির যাত্রা। ১৯৮৮ সালে শাবানা, আলমগীর ও জসিম অভিনীত ‘বিশ্বাসঘাতক’ ছবির মধ্য দিয়ে ‘পূর্ণিমা’র যাত্রারম্ভ। অথচ বাংলা সিনেমার যখন সংকটকাল, তখন ব্যবসায়িক ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে সিনেমা হল থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিল কর্তৃপক্ষ। সেখানে বহুতল ভবন গড়ে তুলে লাখ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন হল মালিক!    

এরকম অবস্থা শুধু ঢাকায় নয়। বরং দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও মারাত্মকভাবে বাড়ছে। সেই জায়গায় একটি আনন্দ সংবাদ পাওয়া গেল সম্প্রতি। কারণ চারদিকে যখন সিনেমা হল বন্ধের হিড়িক, তখন শোনা গেল খুলনা শহরে চালু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সিনেপ্লেক্স!

খবরটি চমকানোর মতো হলেও সত্য। সিনেপ্লেক্সটির নাম লিবার্টি সিনেপ্লেক্স। শুক্রবার ৭ এপ্রিল হবে সিনেপ্লেক্সটির উদ্বোধন। হাসিবুর রেজা কল্লোলের পরিচালনায় ‘সত্তা’ সিনেমার মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে কোনো সিনেপ্লেক্সের যাত্রা শুরুর খবরটি সন্দেহাতীতভাবে আনন্দের। লিবার্টি সিনেপ্লেক্স-এর কর্তৃপক্ষও নাকি তাদের সিনেমাটি দেশের সুপারস্টার শাকিব খানের কোনো সিনেমা দিয়ে শুরু করতে চেয়েছেন। আর সেজন্য তারাও অপেক্ষা করছিলেন পাওলি দামের সঙ্গে শাকিবের ‘সত্তা’র জন্য। লিবার্টি সিনেপ্লেক্সে আছে তিনটি পর্দা। কারণ, ঢালিউডের পাশাপাশি হলিউডের সিনেমাও মুক্তি পাবে সেখানে।

এমন ঘটনাকে ব্যতিক্রমী নজির বলে মন্তব্য করছেন সিনে-আলোচকরা। এটাকে সাহসী উদ্যোগ বলেও মনে করছেন অনেকে। একবিংশ শতকের মানুষের মধ্যে রুচির এক দারুন পালাবদল ঘটে গেছে। অর্থ ব্যয়ের কথা কেউ খুব একটা চিন্তা করে না, যতোটা না চিন্তিত একটু স্বস্তির পরিবেশের জন্য! সেইদিক বিবেচনায়, বহুদিনের পুরনো ভাঙা খড়খড়ে প্রেক্ষাগৃহে যেতেও মানুষের রুচি কুলোয় না এখন আর। প্রেক্ষাগৃহের মলিন চেহেরা, ছাড়পোকা সমেত আসনও সিনেমা হলে না আসার কারণ! 

ভালো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না বলে মানুষ সিনেমা হলে যায় না। এমন যুক্তিকে হয়তো অগ্রাহ্য করা যায় না, কিন্তু সিনেমা ভালো খারাপের চেয়ে অনেক দর্শক বিবেচনা করেন সিনেমা হলটির কথা। সেখানের পরিবেশের কথা। মনোরম পরিবেশ, ঝকঝকে তকতকে আসনের কথা। সেখানে হলরুমটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কিনা সেটাও একটা ফ্যাক্টর, সেখানের হসপিটালিটির কথাও এখন একটা বিষয়। কারণ, একটা সিনেমাতো মানুষ স্রেফ বিনোদন নেয়ার ধারণা থেকেই দেখতে যায়। যেখানে অর্থ কোনোভাবেই বাধা নয়। কিন্তু সেখানে যদি সেই নব্বই দশকের ব্যবস্থাপনা এখনো চলে তাহলে মানুষের আধুনিক রুচির সঙ্গেতো তা ক্লেশ করবেই! আর সেইদিক বিবেচনায় খুলনায় লিবার্টি সিনেপ্লেক্স স্থাপনের বিষয়টি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অন্তত এই মুহূর্তে মারাত্মক ইতিবাচক।

তাই খুলনার লিবার্টি সিনেপ্লেক্সকে আদর্শ জ্ঞান করে ঢাকার বাইরের শহরগুলোতেও অন্তত একটি করে সিনেপ্লেক্স করার উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের দাবি। দেশের আর আর সিনে-হলগুলোকে সংস্কার, মনোরম পরিবেশ তৈরি, ডিজিটালাইজড-এর আওতায় আনা জরুরি। দর্শকের রুচির সাথে চাহিদার যুগান দেয়াটাও কাম্য। সরকারিভাবে হোক, আর কোনো সিনে-প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হোক দ্রুতই সিনেমা হলগুলোর মান-উন্নয়ন আবশ্যক। তা না হলে দর্শক খরার অজুহাতে দিনকে দিন বাংলাদেশের বাকি সিনেমা হলগুলোও হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।    

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল 

Wordbridge School
Link copied!