• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
সময় পেলেন খালেদা

ঢাকায় মাঠে ছিলেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ১০:৫৭ এএম
ঢাকায় মাঠে ছিলেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য আগামী ১২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) আত্মপক্ষ সমর্থনে তার আইনজীবীরা সময় বাড়ানোর আবেদন করলে আদালত এই দিন ধার্য করেন। 

এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে অন্যদিনের মতো বৃহস্পতিবার মাঠে ছিলেন না দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ বলে খ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেখা মিললেও তাদের উপস্থিতি ছিল খুবই সামান্য সংখ্যক। তবে ছাত্রদলের দাবি, খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে ফেলা হয় বিশেষ আদালতসহ এর আশপাশের এলাকা।

বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুর রেজাক খান, জয়নুল আবদিন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও সানাউল্লাহ মিয়া শুনানিতে অংশ নেন। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল শুনানি করেন।

শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, যেহেতু আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়ে একটি আবেদন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে, তাই এ মুহূর্তে এই মামলার শুনানি করা যুক্তিযুক্ত হবে না। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের পর খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়ে বক্তব্য দেবেন বলে জানান আইনজীবীরা।

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবীরা বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালত খালেদা জিয়াকে তিনটি প্রশ্ন করেছিলেন। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর তিনি প্রায় দিয়ে দিয়েছেন। শুধু একটি প্রশ্নের আংশিক উত্তর বাকি রয়েছে। এ অবস্থায় মামলা কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হচ্ছে। 

এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীরা এ বিষয়ে আদালতে বক্তব্য দেন। একপর্যায়ে আদালতে কিছুটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পর্যায়ে এসে আদালত বলেন, ‘আমি কারো দ্বারা প্রভাবিত নই। আমার সামনে আসা সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী আমি বিচারকাজ করব। রায় কী হবে এবং রায়ের পরে কী হবে, সে বিষয়ে আমি ভাবি না। আমি বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা আমায় রক্ষা করবেন।’ আদালত এই বক্তব্য দিয়ে এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন। শুনানি চলাকালে আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের আসার আগেই তার আইনজীবীসহ দলের সিনিয়র নেতারা আদালতে উপস্থিত হন।

কঠোর নিরাপত্তা বলয় : রাজধানীর পুরান ঢাকার বখশীবাজারে অবস্থিত বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে ফেলা হয় বিশেষ আদালতের আশপাশের এলাকা। বৃহস্পতিবার দেখা যায়, রাজধানীর কাকরাইল ও মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে হাইকোর্ট চত্বর, দোয়েল চত্বর, চানখারপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ মোড়সহ বিশেষ আদালত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য। 

এদিকে দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তেমন লক্ষ করা যায়নি। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সরব উপস্থিতি সকাল থেকেই দেখা যায়। 

মাঠে নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য দিন দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও বৃহস্পতিবার সকালে ছিল ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর পুরান ঢাকার বখশীবাজারের বিশেষ আদালতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে পৌঁছান খালেদা জিয়া। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের বৃহস্পতিবার অন্যদিনের মতো তেমন সরব উপস্থিতি ছিল না। আদালতের প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মৎস্য ভবনের সামনে অর্ধশত নেতাকর্মীর দেখা মিললেও পুলিশের বাঁশির শব্দ শুনেই ওই এলাকা ত্যাগ করেন তারা। আর মৎস্য ভবন হয়ে দোয়েল চত্বরে আসার পর দেখা মিলে বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতার। 

এদিকে বৃহস্পতিবারই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চাঁনখারপুল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ মোড়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছাড়াই আদালতে প্রবেশ করেন। সাধারণত ঢাকা মেডিকেল মোড় পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা অন্যদিন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকতেন, কিন্তু বৃহস্পতিবার তাদের দেখা মেলেনি। 

ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১৫ : রাজধানীতে ছাত্রদলের পৃথক দুটি মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। ছাত্রদলের দাবি, পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। 

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে হাইকোর্টের সামনে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে পৌঁছে দিয়ে মিছিল নিয়ে ফিরে আসার সময় তাদের ওপর লাঠিপেটা করে পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে আসার সময় হাইকোর্টের সামনে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করে। এ হামলায় অন্তত ১০-১৫ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। আমরা আটককৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!