• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণদের কাঁধে বুড়ো রবীন্দ্রনাথ...


মিতুল আহমেদ মে ৮, ২০১৭, ০৪:৫৪ পিএম
তরুণদের কাঁধে বুড়ো রবীন্দ্রনাথ...

ঢাকা: একবারে ছোট্ট বালক থেকে আশি ঊর্ধ্ব বৃদ্ধটিরও অজানা বা অশ্রবণীয় নয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। কেউ প্রেমে পড়েছেন তো, তার প্রেমকে উস্কে দিতে শোনা শুরু করে দিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত, অনুরূপভাবে যে বিরহকাতর তারও শেষ আশ্রয়স্থল রবীন্দ্রসঙ্গীত। প্রেম থেকে বিরহান্তরে রবীন্দ্রনাথের যেন একচ্ছত্র আধিপত্য, রবীন্দ্রসঙ্গীত যেন এক অপার বৈচিত্রের ক্ষেত্র। আর তাই নানান কারণেই রবীন্দ্রসঙ্গীত বাংলায় বাধ্যতামূলক সঙ্গীত হওয়ার দাবি রাখে।

পুরাতনকে আঁকড়ে ধরে থাকা আমাদের মজ্জাগত অভ্যাস। আর মানুষ যে অভ্যাসের দাসত্ব করে, তার প্রমাণ হলো যখন ‘ক্ষ’ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে একটু ভারি যন্ত্রের সমন্বয়ে একটু বৈচিত্র আনলেন। এই প্রজন্মের পাঁচ জনপ্রিয় শিল্পীর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে নিতে পারেন। যাদের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতে খুঁজে পেতে পারেন অন্যরকম আমেজ!

তরুণ প্রজন্মের এমনই অভিযোগ। রবীন্দ্র সমালোচকরা তরুণ প্রজন্মের রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চাকে স্পর্ধা হিসেবে জ্ঞান করে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। শিল্পীদের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রসঙ্গীত মিউজিক ও সুর বিকৃত করার অভিযোগ এনেছেন। একবারও তারা সময়ের দূরত্বটা বোঝার চেষ্টা করেন না, তারা বোঝেন না। বিশেষ করে ভিনদেশি ব্যান্ড দল ‘ক্ষ’ যখন আধুনিক ইনস্ট্রুমেন্ট বাজিয়ে গাইলো রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি।

ভিন্ন ধাঁচের এক ব্যান্ড দল ‘ক্ষ’। ভিনদেশিদের সাথে নিয়ে সোহিনী আলম এই দলটি গঠন করেছেন। ভোকাল স্বয়ং সোহিনী-ই। বাংলা ফোকের প্রতি আকৃষ্ট এই শিল্পী যখন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইলেন, তখন রবীন্দ্র কট্টরপন্থিরা ক্ষেপে গিয়েছিলেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথের সুর বিকৃত করারও অভিযোগ করেন অনেক সমালোচক। যদিও ‘ক্ষ’-এর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতটি সাদরে গ্রহণ করে তরুণ প্রজন্ম।

সমকালীন বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম ব্যান্ড দল শিরোনামহীন। ইতোমধ্যে তাদের মৌলিক গান দিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছেন তারা। আর এর ফাঁকেও করে ফেলেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে একটি এ্যালবামও। ব্যান্ড দল ‘শিরোনামহীন’-এর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলো শুনে দেখতে পারেন। এতে ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটি অন্যতম শ্রুতিমধুর হয়েছে।

শায়ান চৌধুরী অর্ণব বাংলাদেশের প্রথম সারির অন্যতম মেধাবী একজন শিল্পী ও মিউজিক ডিরেক্টর। বাংলা চলচ্চিত্রেও একাধিক গান রয়েছে তার। প্রথমদিকে তিনি বাংলাদেশী বাংলা ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করলেও পরবর্তীকালে আলাদা একটি ব্যান্ড গঠন করেন। বর্তমানে ‘অর্ণব এন্ড ফ্রেন্ডস’ তার ব্যান্ড দল। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে আগে থেকেই যোগাযোগটা থাকলেও ২০১২ সালে প্রথম তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে পূর্ণ অ্যালবাম প্রকাশ করেন শায়ান চৌধুরী। যা বাংলাদেশ ও কলকাতায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়। অর্ণবের গাওয়া ‘কেন মেঘ আসে, হৃদয় আকাশে’ গানটিতে হৃদয়ছোঁয়া আবেশ পাওয়া যায়। হিন্দি ভাষার জনপ্রিয় শিল্পী সনম পুরি; তার নামেই আছে নিজস্ব ব্যান্ড ‘সনম’। একাধিক জনপ্রিয় হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রেও আছে তার গান। আর এই তরুণ শিল্পীও গেয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত, এবং তা বাংলায়! তার গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতে পাওয়া যায় ভিন্ন স্বাদ! রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি রবে নীরবে’ গানটি অসাধারণ যত্নে গেয়েছেন সনম।

পশ্চিম বাংলায় বর্তমান সময়ের শ্রোতাপ্রিয় এবং মেধাবী শিল্পী বলে গণ্য করা হয় সোমলতা আচার্যকে। আধুনিক গানসহ চলচ্চিত্রের গানে তিনি সমানভাবে বিস্তার করে চলেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েও তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। সোমলতা আচার্য-এর গাওয়া ‘সখি যাতনা কাহারে বলে’ গানটি সবার ভাল লাগবে।

যুগের সাথে পাল্টে যাচ্ছে সবকিছু, কিন্তু পাল্টায়নি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সেই মনকাড়া আবেদন। আগে যেমন বর্তমান সময়ের মত মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট ছিল না, ফলে হারমোনিয়াম আর তবলাযোগেই গাওয়া হত রবীন্দ্রসঙ্গীত। শিল্পী ছিলেন ইন্দ্রানী সেন, শ্রীকান্ত আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মত অসাধারণ ও মাধুর্যময় কণ্ঠের অধিকারী সঙ্গীতশিল্পীরা। কিন্তু এ সময়ে এসে সেসব মহাত্মারা না থাকলেও রবীন্দ্রসঙ্গীতকে সময়োপযোগী করে প্রতিভাবান শিল্পীদের এ ধরনের উপস্থাপনকে ইতিবাচক দৃষ্টভঙ্গিতে দেখা কি যায় না..?

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল  

Wordbridge School
Link copied!