• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তাকে দেখলেই কেন পঁচা ডিম মারে ছাত্রলীগ!


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০২:৩৮ পিএম
তাকে দেখলেই কেন পঁচা ডিম মারে ছাত্রলীগ!

ফাইল ছবি

ঢাকা: গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তাকে পেটানো হয়। সারা দেশের বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারের দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করার সময়ে এই হামলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইমরান এইচ সরকার। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন নেতাকর্মী তার সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎ একদল লোক জড়ো হয়ে তার ওপর ডিম ও ইটের আধলা মারতে শুরু করে। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজনের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ লিমন পক্ষের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এই হামলা চালিয়েছেন। তারা পকেটে করে পচা ডিম ও ইটের টুকরা নিয়ে ইমরান ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তার ওপর বেশ কয়েকটি পচা ডিম নিক্ষেপ করা হয়।

জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন বলেন, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। আমি সিনেটে প্রোগ্রামে ছিলাম। তবে যেহেতু ইমরান এইচ সরকার দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেছে সেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে।

হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমরা শাহবাগের মোড়ে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম। তখন কিছু ছেলে লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগে তারা আমাদের গায়ে বিভিন্ন বস্তু ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পরবর্তীতে আমাদের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। ইটপাটকেলের আঘাতে গণজাগরণ মঞ্চের চার থেকে পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইমরান।

এর আগে মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে ইমরান এইচ সরকার বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে। কিন্তু মানুষ যদি দুর্যোগের সময় খাবার না পায়, তাহলে এ মজুদ দিয়ে কী হবে? উত্তরবঙ্গের বন্যাদুর্গত অনেক এলাকার সংসদ সদস্যরা ঢাকা থেকে এলাকায় যাননি। দুর্গত মানুষেরা ত্রাণ মন্ত্রীর নামও জানেন না। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ত্রাণ নিয়ে দুর্গত এলাকায় যাচ্ছে, অনেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মূল পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে। এটা মানুষের অধিকার, কোনও কৃপা নয়।

ইমরান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইঁদুর বাঁধ কেটে ফেলার কারণেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইঁদুর বাঁধ কেটেছে কিনা জানি না, তবে ইঁদুররূপী কিছু মানুষ যে প্রকল্পের টাকা মেরে খেয়েছেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই। বড় বড় প্রকল্পে বড় হারে টাকার অঙ্ক বাড়ে। অথচ প্রাকৃতিক দুর্যোগে টাকা বের করতে তাদের গড়িমসি। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি কোনও পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠক আকরামুল হক, ঢাকা মহানগর গণকমিটির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন স্বপন, শিশু সংগঠক তাহমিনা সুলতানা সাথী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন পরিচালনা করেন জীবনানন্দ জয়ন্ত।

আগামী শনিবার প্রজন্ম চত্বর ত্রাণ নিয়ে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর ও সুনামগঞ্জের দুর্গত এলাকায় যাবে বলে মানববন্ধনে জানানো হয়।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা বিকালে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য শাহবাগে জাদুঘরের সামনে মিলিত হয়েছিলেন। সমাবেশের শেষের দিকে ১০ থেকে ১২ জন ইমরান এইচ সরকারকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে চারজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় অজ্ঞাত নামা ১০/১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নাসিরউদ্দিন সোহাগ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ২৪।
 
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ইমরানের ওপর হামলার ঘটনায় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নাসিরউদ্দিন সোহাগ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
 
চলতি বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর স্লোগান দেয়ার অভিযোগে ইমরান এইচ সরকারকে পেটানোর ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই তাকে পিটিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতারা। এরপর গত ১৬ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত চত্বরে ইমরান এইচ সরকারের ওপর ডিম ও জুতা মারার ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে করা মানহানির মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে আদালতে গিয়েছিলেন ইমরান ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী সনাতন উল্লাস। এ সময় তাঁদের দুজনের ওপরই হামলা চালানো হয়।

ইমরান এইচ সরকার তখন অভিযোগ করেছিলেন, কেবল ডিম নয়, তার গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে মেরেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। তবে মামলার বাদী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ডিম ছোড়ার ঘটনাটি স্বীকার করলেও ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে সারা দেশে পরিচিত মুখ ইমরান এইচ সরকার।

যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির পাশাপাশি হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ইমরানের বিরুদ্ধে কিছু দিন ধরে নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে ছাত্রলীগ। গত বছরের শেষ দিনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কন্যা নাদিয়া নন্দিতা ইসলামের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করেন ইমরান এইচ সরকার।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!