• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তাভেলা সিজার হত্যা : এখনও অধরা ‌‘মূল পরিকল্পনাকারী’


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬, ০৭:১০ পিএম
তাভেলা সিজার হত্যা : এখনও অধরা ‌‘মূল পরিকল্পনাকারী’

গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় বহুল আলোচিত ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যার আজ এক বছর পূর্ণ হলেও এখনও উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত সেই আগ্নেয়াস্ত্র। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এমএ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। 

আবদুল মতিনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এখনও পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এমএ কাইয়ুমসহ দুজন। ঘটনার পর দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হলে চার্জশিটভুক্ত আসামিদের ব্যবহূত আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে ব্যালাস্টিক (আগ্নেয়াস্ত্রের রাসায়নিক পরীক্ষা) রিপোর্ট মেলেনি। তাভেলা সিজারের শরীর থেকে ৭.৬৫ এমএম পিস্তলের একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। 

আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চার আসামি তাভেলাকে হত্যা করতে দুটি নাইন এমএম পিস্তল ব্যবহার করেছিল বলে উল্লেখ করেন। তবে তাভেলার শরীর থেকে বের করা গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্টে ওই দুই আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। 

সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবরেটরির ব্যালাস্টিক রিপোর্টে এটা উল্লেখ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সিআইডির আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যালাস্টিক রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, তাভেলার শরীর থেকে উদ্ধার করা গুলি ওই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ‘ফায়ার’ করা হয়নি।

সিআইডি সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে সিআইডির পরিদর্শক ও ব্যালাস্টিক বিশারদ মিজানুর রহমান আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও গুলির খোসার রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট দাখিল করেন। রিপোর্টের নিবন্ধন নম্বর হল এফবি-১-০০৩৮-২০১৬। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর) কর্তৃক সরবরাহকৃত ইউএসএ’র তৈরি ২টি ৭.৬৫ ক্ষমতার অটোমেটিক পিস্তল, ৩টি গুলির খোসা (কার্তুজ) ও ১টি ৭.৬৫ ক্ষমতার ফায়ারড গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়। 

এতে বলা হয়, ৩টি গুলির খোসার সঙ্গে দুই আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ব্যবহারের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্যবহূত (ফায়ারড) গুলিটি (তাভেলার শরীর থেকে উদ্ধার করা) তুলনামূলক পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে পরস্পরের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। এসব পরীক্ষা করে মতামত দেওয়া হচ্ছে যে, ৩টি ফায়ারড কার্তুজ (খোসা) ও ১টি বুলেট ওই দুই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফায়ার করা হয়নি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ২৮ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর পরই মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য এ আদালতে পাঠানো হয়। 

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হল-ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুম কমিশনার, তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল ও শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও সোহেল ওরফে ভাঙ্গাড়ি সোহেল। এই আসামির মধ্যে তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 

২৫ আগস্ট এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দিন আদালত ২৬ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। পরে গত সোমবার আদালত আগামী ১৮ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন। 

এ ব্যাপারে মামলার তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, আমরা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করার পর সেগুলো ব্যালাস্টিক রিপোর্টের জন্য সিআইডির কাছে পাঠাই। সেই অস্ত্র দুুটি তাভেলা হত্যার ঘটনায় চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়নি। 

তিনি বলেন, আমরা চার্জশিটে হত্যায় ব্যবহূত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার দেখাতে পারিনি। ঘাতকরা ওই দুই আগ্নেয়াস্ত্র তাভেলাকে খুন করতে ব্যবহার করেনি। তবে ঘাতকরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, তারা তাভেলাকে খুন করেছে। কিলিং মিশনে ব্যবহার করা মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়েছে।’ 

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিএনপি নেতা কাইয়ুমকে গ্রেফতার করতে পারলে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসত। তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত সেই অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান-২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানা প্রাচীরের বাইরের ফুটপাতে তাভেলাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা দুই তরুণকে গুলি চালিয়ে অপেক্ষমাণ এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে পালাতে দেখেছেন। তাভেলা নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিসিও কো-অপারেশন প্রুফসের (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!