• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ

তামাক বিক্রি আইন মানছে না কোম্পানি!


বিশেষ প্রতিনিধি মে ৩১, ২০১৭, ০৯:২৯ এএম
তামাক বিক্রি আইন মানছে না কোম্পানি!

ঢাকা: দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আইন মানছে না কোম্পানিগুলো। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নানা কায়দায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

বিশেষ করে ছবিসহ সতর্কবার্তা দেয়ার ক্ষেত্রে এবং বিক্রয়স্থলে পণ্যের প্রচারণায় আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজরদারির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর বাড়তি করারোপেরও সুপারিশ করেছেন তামাক বিরোধীরা।

আজ (৩১ মে) বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ ছাড়া নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তামাক বিরোধী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

সারা বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে  বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হবে আজ (৩১ মে)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘তামাক উন্নয়নের অন্তরায়’। এ উপলক্ষে দেশের ৬৪টি জেলায়ই দিবসটি উদ্যাপন করা হবে। ইতোমধ্যে সব জেলার জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনদের দিবসটি উদ্যাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বদ্ধপরিকর। তামাকের ব্যবহার হ্রাস করতে পারলে জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব স্থানের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিভিন্ন সিগারেটের মূল্য তালিকা টাঙানো রয়েছে। এই কৌশলে তামাকজাত পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে বিপণন কোম্পানিগুলো। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির বেতনভুক্ত এজেন্টরা সেই কোম্পানির নামাঙ্কিত পোশাক পড়ে সিগারেটের ক্যাম্পেইন করে চলেছে। বিভিন্ন জনবহুল স্থানে এসব ক্যাম্পেইন চোখে পড়ে।

এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ পান, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল বিক্রেতারা তো রয়েছেই। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী বাসস্টেশন ও সদরঘাট নৌবন্দর এলাকাসহ বেশ কিছু স্থান ঘুরে একই রকম ক্যাম্পেইন লক্ষ্য করা গেছে।

সেখানে কিছু সংখ্যক তরুণ তামাক পণ্যের স্টল সাজিয়ে ক্যাম্পেইন করছে। কখনো কখনো বিনা মূল্যে সিগারেট বিতরণ করে মান যাচাইয়ের তালিকা করছে। তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের একজন সোহাগ, তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সব মিলে শুধু ঢাকা শহরেই এই ধরনের ক্যাম্পেইনের জন্য আছে প্রায় এক হাজার স্টল।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সাত শতাংশ তামাক সেবন করে থাকে। আর প্রতিবছর এ হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ আকারে বেড়ে চলছে। বর্তমানে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ চার কোটি ১৩ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ প্রতক্ষ্যভাবে তামাক সেবন করছে।

এ ছাড়া ৫৮ ভাগ পুরুষ ও ২৯ ভাগ নারী বিড়ি-সিগারেট তামাক সেবন করে থাকে। আর নারীদের মধ্যে ২৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ পুরুষ প্রতিদিন পান, জর্দা, গুলের মাধ্যমে ধোঁয়াহীন তামাক সেবন করে।

অন্যদিকে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ তামাক ব্যবহার-জনিত কারণে মৃত্যু বরণ করে থাকে। ২০০৪ সালে ডব্লিওএইচও-এর গবেষণার বলা হয়, তামাক খাতে বাংলাদেশ সরকারের বছরে প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় হয়।

আর তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা, অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের কারণে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। এতে করে বছরে নিট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এটা নয় বছর আগের হিসাব। গত ২০ বছরে বিড়ি-সিগারেটের দামের চেয়ে নিত্যপণ্যের দাম অনেক গুণ বেড়েছে। এ ছাড়া নেশাজাতীয় দ্রব্য সহজলভ্য।

মাদক দ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, তামাকের মধ্যে সাত হাজার ৩৬৫টি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গ্রহণের ফলে শরীরে নানা রকমু রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। আসক্ত ব্যক্তির ফুসফুস ক্যানসারের মতো জটিল রোগসহ অঙ্গহানির আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মাদক সেবন ও বিক্রিতে শুধু ছিন্নমূল মানুষই নয় উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানরাও জড়িয়ে পড়েছে। জড়িয়ে পড়েছেন, কোমলমতি শিশু থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ৪৩ শতাংশ তামাকে আসক্ত, এদের মধ্যে আবার ২৯ ভাগই নারী। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী মাদক নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১৫ শতাংশই সাধারণ ধূমপান এবং ৪৩ শতাংশ নারী শুধু ইয়াবার মাধ্যমে মাদক সেবন করে থাকে।

চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল তামাক নিয়ে কাজ করা সংগঠন মাদক দ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) ‘তামাক, মাদক ও নারী-বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে ৩০ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে এবং ২১ শতাংশ জনসমাগম স্থলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!