• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের মৃত্যুর পরে নব্য জেএমবির সমন্বয়ক হন তানভীর


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬, ১০:২০ পিএম
তামিমের মৃত্যুর পরে নব্য জেএমবির সমন্বয়ক হন তানভীর

একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চ পদের কর্মকর্তা ছিলেন তানভীর কাদেরী, আর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে কাজ করছিলেন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়। এই দম্পতি কিভাবে জঙ্গিবাদে জড়ালেন তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল দুই বছর আগে সৌদি আরব থেকে ফিরে তাঁদের বদলে যাওয়ার তথ্য।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানের সময় নিহত হন তানভীর। ওই বাসা থেকে আহত অবস্থায় যে তিন নারীকে আট করা হয়েছিল তাদের একজন ফাতেমা। তাঁদের যমজ দুই ছেলে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা বলেছেন, গত মাসের শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জে পুলিশি অভিযানে ‘নব্য জেএমবির’ নেতা তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর জঙ্গি দলটির সমন্বয়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছিলেন তানভীর। ‘আব্দুল করিম’ ও ‘শমসেদ’ নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন তিনি। করিম নাম ব্যবহার করেই তিনি বসুন্ধরা আবাসিকে গুলশান হামলাকারীদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাটিকামারী গ্রামে তাঁর বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালে হজ করতে সপরিবারে সৌদি আরবে যান তানভীর। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তানভীরের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা ধরা পড়ে আত্মীয়দের চোখে। ফাতেমাও তখন থেকেই হিজাব পরা শুরু করেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘আহত তিন নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আজিমপুরের বাসায় কারা কারা আসত তা জানার চেষ্টা করছি। কিছু দিন আগে ওই বাসা ভাড়া নেয় জানিয়ে তারা বলেছে, যারা আসত তারা তানভীরের সঙ্গে দেখা করতে আসত। কী নিয়ে তাদের আলোচনা হতো তা জানার চেষ্টা চলছে।’ তবে তানভীর ও ফাতেমার জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

বাটিকামারী গ্রামের এস এম বাতেন কাদেরীর ছেলে তানভীর গাইবান্ধা সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি এবং তার দুই বছর পর গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন।

লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দুটি বেসরকারি কোম্পানি ঘুরে সর্বশেষ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখায় উচ্চ পদে যোগ দিয়েছিলেন তানভীর। হজ থেকে ফিরে ২০১৪ সালে ছেড়ে দেন সেই চাকরি। এরপর ‘আল সাকিনা হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

ফাতেমার সঙ্গে তানভীরের সংসার জীবন প্রায় দেড় দশকের। ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল তাওয়াতের মেয়ে ফাতেমার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।

ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এ চাকরি করতেন। তিনিও জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িত বলে পুলিশের ধারণা।

আজিমপুরের বাসায় অভিযানে গেলে ফাতেমাসহ তিন নারী মরিচের গুঁড়া ও ছোরা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় বলে সেদিন জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে ধর্মচর্চা নিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই তানভীরের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ ছিল বলে তাঁর এক সময়ের সহপাঠী মাহমুদুর রশিদ রাসেল জানান।

তিনি বলেন, “বন্ধুদের সাথে আলোচনা হলে তানভীর বলত, ‘এ দেশে সঠিকভাবে ধর্ম মানা হয় না’।” তানভীর কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত না থাকলেও একসময় ছাত্রশিবিরের সমর্থক ছিলেন বলে তাঁর আরেক সহপাঠী জানান।

তানভীরের পূর্বপুরুষ ছিলেন পাকিস্তানের বাসিন্দা। তাঁর দাদা প্রয়াত আব্দুল ওয়াহেদ গত শতকের প্রথম দিকে পেশোয়ার থেকে তাবলিগ করতে এসে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে বিয়ে করে বসতি গাড়েন। পরে তানভীরের বাবা বাতেন কাদেরী গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের পশ্চিম বাটিকামারী গ্রামে বাড়ি করেন বলে স্বজনরা জানান।

গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, গত সোমবার তাঁরা বাতেন, তাঁর বড় মেয়ে তানজিলা বুলবুল ও ভগ্নিপতি জিয়া ইসলামকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

ছেলের লাশ গ্রহণ করবেন না বলে সেদিন পুলিশকে বললেও পরে মত পাল্টেছেন বাতেন কাদেরী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!