• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তালাক দেয়ায় শ্বশুর পরিবারকে পিটিয়ে ঘর ছাড়া


বরগুনা প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭, ০৯:১৬ পিএম
তালাক দেয়ায় শ্বশুর পরিবারকে পিটিয়ে ঘর ছাড়া

সন্ত্রাসী জামাই বশির মৃধা

বরগুনা: জামাইয়ের সন্ত্রাসি কার্মকান্ডে মেয়ের তালাক নিয়েও রক্ষা পায়নি একটি পরিবার। ওই জামাইয়ের অত্যাচারে শ্বশুরের পরিবার এখন ঘর বাড়ি ছেড়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এবিষয়ে প্রশাসন, স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের কাছে নালিশ করেও কোনো ফল পায়নি এ পরিবারটি।

এদিকে জামাই তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের নিয়ে দখল করে নিয়েছে শুশুরের বসত বাড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবনগোলা গ্রামে।

সরেজমিনে জানা যায়, ওই গ্রামের আমিরুল ইসলামের মেয়ে তানিয়ার দেড় বছর আগে হাজারবিঘা গ্রামের সুলতান মৃধার ছেলে বশির মৃধার সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর বখাটে স্বামীর নির্যাতনের শিকার শুধু একাই নয়, হতে হয়েছে তার পরিবারের সকল সদস্যকে। দিতে হয়েছে জামাইয়ের নানামুখী আবদারের যোগান। অবশেষে জামাই বশিরের নজর শ্বশুরের একমাত্র বসত বাড়িটির ওপর।
নিরুপায় হয়ে তানিয়া নিঃশর্ত তালাক দিয়েও বখাটে স্বামীর হাত থেকে নিস্তার মেলেনি। তানিয়ার বাবা-মা, এমনকি চাচাদেরও পৈত্রিক ভিটে থেকে উচ্ছেদ করে ঘর বাড়ি দখলে নিয়েছে ওই বখাটে বশির।

জেলাব্যাপি তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রমান হিসেবে রয়েছে বরগুনা সদর থানায় ডজন খানেক মামলা। যার মধ্যে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকলেও অদৃশ্য কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী বশির মৃধা।

সরেজমিনে দেখা যায়- ছোট লবনগোলা গ্রামের আমিরুল ইসলামের বাড়িতে নানা প্রকার পোষা পাখির কোলাহল। কয়েকদিন আগেও বাড়িটিতে ছিল মানুষের বসবাস। ভাঙা চুলা কিংবা শুকিয়ে যাওয়া সব্জি ক্ষেত নিরবে জানিয়ে দেয়, বাড়িতে এখন আর নেই উনুনে আগুন জ্বালানোর মানুষটির বিচরণ। নেই সব্জি ক্ষেতে পানি দেয়ার লোকটির উপস্থিতিও।

শ্বশুরের বাড়িটিকে নিজের বাড়ি করে নিতে আবদার করেছিল মেয়ের জামাই বশির। অবশেষে বশির তার শশুরের বাড়িটি দখল করে নিয়েছে। দেড়মাস ধরে দূর দূরান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তানিয়ার বাবা ও চাচার পরিবার। আতঙ্কে মুখ খুলতে ভীত বাড়িটির আশপাশের বাসিন্দারাও।

তানিয়ার বাবা আমিরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তানিয়াকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে পাশের হাজারবিঘা গ্রামের সুলতান মৃধার ছেলে বশির মৃধা। বিয়ের পর মাদকাসক্ত বশিরের নানা আবদার মেটাতে বাধ্য হয় অসহায় আমিরুল। দাবি আদায়ে ব্যর্থ হলে শ্বশুর-শাশুড়িকেও মারধোর করতে পিছপা হয়নি চিহ্নিত সন্ত্রাসী বশির মৃধা। এ অবস্থা থেকে নিস্তার পেতে এক পর্যায়ে বশিরকে তালাক দিতে বাধ্য হয় তানিয়া।

কিন্তু ফল আসে উল্টো। তালাক পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বশির। বশিরের দলবলসহ শশুর আমিরুলের বাড়িতে এসে সকলকে নির্বিচারে মারধোর শুরু করে। বাড়ি থেকে দেড় মাস আগে তাড়িয়ে দেয় সকলকে। লন্ডভন্ড করে দেয় আমিরুল ইসলামের ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ক্ষেত খামার।

শুধু আমিরুলকেই নয় ঘরছাড়া করে আমিরুলের দুই ভাই জহিরুল এবং নুরুল ইসলামের পরিবারকেও। বশির প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়, ‘ফের বাড়ি ফিরলে পুরুষদের জান এবং মহিলাদের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের’। এমন অবস্থায় গত দেড় মাস ধরে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ওই তিনটি পরিবার।

নিজ বাড়ি ফিরে পেতে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন অসহায় আমিরুল ইসলাম। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় নারীনেত্রী এবং মানবাধিকারকর্মীরা। ভুক্তভোগীদের ঘরবাড়ি উদ্ধারের পাশাপাশি, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করেছেন তারা।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, দেড়মাস আগে তাদের কাছে বাড়ি ফিরে পাওয়ার আবেদন জানিয়েছিল আমিরুল ইসলাম। আমিরুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বার বশিরকে ডাকা হলেও কোন সাড়া দেয়নি সে। ভ্রুক্ষেপই করেনি কোনো প্রকার সতর্কবাণীর।

উন্নয়ন সংগঠন জাগোনারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসি বিষয়টিকে নারী নির্যাতনের কঠোরতম উদাহরণ হিসেবেই দেখছেন। বাল্য বিয়ের শিকার তানিয়ার দুঃসহ পরিণতি দেখে সমাজের সকলকে আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। পাশাপাশি মেয়েটি ও তার পরিবারকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে, জাগোনারী পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

ঘটনাটি সুশীল সমাজের দৃষ্টি গোচর হওয়ায় বর্তমানে গা-ঢাকা দিয়েছে বশির। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল ফোনটিও।

বিষয়টি সম্পর্কে মৌখিকভাবে অবগত হয়েছেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। তিনি খোঁজ নিয়ে জানলেন বশিরের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়েও। দ্রুত বশিরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!