• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তাহলে তুমি সিঙ্গল?


ফাতিমা জাহান জানুয়ারি ১, ২০১৮, ০৪:০১ পিএম
তাহলে তুমি সিঙ্গল?

ঢাকা: যেকোনো দেশের স্ট্রিট ফুড বা স্ট্রিট মার্কেট আমাকে খুব টানে। সে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনযাপন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। আমি গরিব বাজেট ট্রাভেলার, স্ট্রিট ফুড ভীষণ আনন্দ ভরে খাই। তো কুয়ালালামপুরে রাস্তার দোকানগুলো দেখতে দেখতে পুলকিত হচ্ছিলাম এই ভেবে যে বেশিরভাগ ছোট ছোট দোকানের মালিক এবং কর্মচারী বাংলাদেশি। আর তারা বাংলাদেশি বলেই কয়েকটা প্রয়োজনীয়, অপ্রোয়জনীয় জিনিসপত্রও কিনে ফেললাম তাদের দোকান থেকে।

হাঁটতে হাঁটতে ইচ্ছে হলো কিছু স্থানীয় স্ট্রিট ফুড খেয়ে দেখি। বসলাম একটি অস্থায়ী খাবারের দোকানে, আশপাশের চেয়ে তুলনামূলক কম ভিড় আছে এমন একটি দোকানে। খাবার অর্ডার করে বসে রাস্তা, মানুষজন দেখছিলাম। পাশের টেবিল থেকে মনে হলো কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘স্কুল ব্যাগটা কত দিয়ে কিনলে?’ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম ৫/৬ জন ভারতীয় পুরুষ ট্যুরিস্ট (দেখতে ভারতীয় লাগছিল, আর ইংরেজি উচ্চারণ ভারতীয়দের মতোই ছিল। মেইন শপিং এলাকা ভারতীয়/বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট বেশি চোখে পড়ে)। আমি দাম বলে আবার রাস্তার মানুষজন দেখতে লাগলাম। আবার প্রশ্ন,

‘কার জন্য কিনলে স্কুল ব্যাগটা?’
‘সেটা দিয়ে তুমি কী করবে?’
‘তুমি নিশ্চয়ই ভারতীয়?’
‘না‘
‘ব্যাগটা কী তোমার বাচ্চার জন্য কিনেছ?’
‘না‘
‘তাহলে তুমি সিঙ্গল?’
‘আই এম নট ইন্টারেস্টেড টু টক।’

আমার খাবার এলো। খেতে খেতে পাশের টেবিলের অল্প বিস্তর কথা কানে আসছিল। তারা তাদের আড্ডা ভুলে সমস্ত মনোযোগ আমার টেবিলে দিয়ে বসেছিল। দুজন বাংলাদেশি আর বাকিরা হিন্দীভাষী ভারতীয়। প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি জোরেই কথা বলছিল। এক ভারতীয় হিন্দীতে গান শুরু করল, দেখাদেখি বাংলাদেশিও বাংলা সিনেমার গান ধরল। এরপর আমি এদের সাথে কী করেছি সেটার ধরন অন্যান্য ঘটনার মতই, পুলিশ ডাকিয়ে পাসপোর্ট আটকে রেখেছিলাম। একা চলাফেরা করি বলে ছাড় দিতে হবে!

দেখতে ভারতীয় একটি মেয়ে ভিনদেশে একা ঘুরছে সেটা ভারতবর্ষের পুরুষরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। একা কেন ঘুরবে, আমরা আছি না, ভাবটা যেন এমন। আর একা ঘুরাঘুরি করা মেয়েকে উত্যক্ত করার লাইসেন্স এরা দেশ থেকেই বিনামূল্যে নিয়ে আসে। একা ভারতবর্ষের মেয়ে মানেই তো ইজিলি এভেইলেবল বা সহজলভ্য। যখন খুশি, যে কোন প্রস্তাব দেয়া যায়। আর ভারতীয়/বাংলাদেশি পুরুষরা পরিবার রেখে বাইরে আসলে একটু তো মৌজ মাস্তি করবেই। এটা শুধু মালয়েশিয়া নয় যে কোন দেশ যেখানে ভারতীয়/বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট বেশি যায় সেখানেই এই চিত্র।

ভারতবর্ষের নারীরা আপনারা এখনও ভয়ে লজ্জায় চুপ করে থাকেন পুরুষদের এ ধরনের আচরণে। লজ্জা তো পুরুষের হওয়া উচিত, ভয় তো তাদের পাওয়া উচিত নারীকে উত্যক্ত করার শাস্তির কথা ভেবে। ভারত বাংলাদেশে বহু নারীবান্ধব আইন আছে যা আপনারা জানেন না বা জেনেও লজ্জাজনক ভেবে উত্যক্তকারীকে সুযোগ করে দেন। আমরা গুটি কয়েক জন লড়ছি। আপনারাও যোগ দিন। আমাদের পথটা সুগম হচ্ছে প্রতিবাদ করে আর যারা করছেন না তাদের হচ্ছে দুর্গম। আসুন আমরা সবাই মিলে সমতার লড়াই লড়ি।

লেখক: সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ফিনান্সিয়াল এনালিস্ট ও ট্রাভেলার


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!