• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭, ১২:৪৪ পিএম
তিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি

ঢাকা : খালেদা জিয়ার মামলা, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনকে (সিইসি) বির্তকে ফেলা ও ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রবর্তনে বিরোধিতা করা এবং সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনা- এই তিনটি ইস্যুতেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি।

এসব ইস্যু নিয়েই মাঠে নামতে চায় দলটি। চলমান ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে বিএনপি রাজপথ কতটা সরগরম করতে পারে তা নিয়ে রয়েছ যথেষ্ট সংশয়। রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, ইস্যুগুলো নিয়ে জনমত তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, এই ইস্যুগুলো নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চান তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি যদি ইস্যুগুলো নিয়ে জনমত গড়ে তুলতে পারে তাহলে রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। একই সঙ্গে তারা সংঘাতের আশঙ্কাও করেছন। ইস্যুগুলো নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে বাকযুদ্ধ করছেন তা থেকেই তাদের এমন শঙ্কা।

সাম্প্রতিক রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেকায়দায় খালেদা জিয়া। এই মামলায় তার সাজা হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা খোদ বিএনপি নেতাদের। সাজা হলে জেলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন তিনি।

খালেদা জিয়া জেলে গেলে তখন বিএনপি কীভাবে এবং কার নেতৃত্বে চলবে- এ নিয়েও শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। এমন গুঞ্জনের মাঝে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বেগম জিয়ার কারাগারে যাওয়ার মতো কোনো পরিবেশ হয়নি। শুধু রাজনীতির কারণেই তাকে জেলে দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। খালেদা জিয়া জেলে গেলে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বা হতে দেওয়া হবে না বলেও হুশিযারি দেন তিনি।

মির্জা ফখরুলের এমন কথার উত্তরে পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারাও। তারা বলছেন খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আওয়ামী লীগের। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে সরকারের শাস্তি দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। তবে এটি আদালতের বিষয়। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।

এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বিএনপি বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারবে বলে মনে করেন না সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। যদিও বিএনপি নেতারা দাবি করছেন রাজনৈতিক ইচ্ছার কারণে এবং আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে বাইরে রাখতে সরকারের কয়েকটি বড় পরিকল্পনার অংশ এটি। যা দেশবাসী ইতোমধ্যে উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই এ ইস্যুটি বিএনপির জন্য মোক্ষম হতে পারে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইস্যুগুলোর নৈতিক ভিত্তি রয়েছে কি না, এটার বিচার করবে জনগণ। কারণ দেশের অধিকাংশ মানুষের ভাবনাটাই হলো মুখ্য। মানুষ মনে করে খালেদা জিয়ার মামলাটি সরকারের একটি এজেন্ডার ফল। তাই তার বিরুদ্ধে চলমান বিচারব্যবস্থা নিয়ে দেশের মানুষ সন্দিহান। আমরাও তাই মনে করি নিম্ন আদালতে সঠিক বিচার তিনি পাবেন না।

অন্যদিকে, সরকার যেভাবে চাচ্ছে, তাতে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। তাদের এসব অপকৌশলে দেশের মানুষ ভোট দেয়া ভুলে যাচ্ছে। ভোটের অধিকার রক্ষায় বিএনপি যে সহায়ক সরকারের কথা বলছে তাতে দেশের অধিকাংশ মানুষের সায় থাকবে বলে আমরা মনে করি।

তবে এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার বলছে খালেদা জিয়ার মামলাটি আদালতের বিষয়। এটা ঠিকই আছে তবে, আমাদের দেশে বিচার বিভাগ নিয়ে অবিশ্বাসের একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আদালতের অনেক বিষয়ে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই বিএনপি এ নিয়ে শঙ্কায় আছে। তবে আমি বলব আদালত সঠিক বিচার করবেন। আর সঠিক বিচার হলে এটা ভালো ইস্যু হবে বলে মনে করি না। সহায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি যদি ভালো একটি প্রস্তাব দাঁড় করাতে পারে, তা অবশ্যই জনগণ গ্রহণ করবে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের মানুষ চায় তাদের সরাসরি ভোটে একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। যা নিয়ে আপস করবে না মানুষ। সেই জায়গা থেকে বিচার করলে বিএনপি ভালো প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে অবশ্যই সুফল আসতে পারে। ইভিএম একটি ভালো প্রস্তাব। তবে এখন গ্রহণ না করলেও এটা ঠিকই গ্রহণ করতে হবে সময়ের ব্যবধানে।

দলের একটি সূত্র জানায়, বিএনপি সহায়ক সরকারের প্রস্তাব, খালেদা জিয়ার মামলা, এবং ইভিএম নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে এমন প্রতিকূল বিষয় মাথায় রেখেই আন্দোলনমুখী পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর বাইরে দলের শূন্য পদ পূরণ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, জেলা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ করছেন।

এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির তিন শূন্যপদসহ ছাত্র-বিষয়ক ও সহছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক, দুজনকে আন্তর্জাতিক সম্পাদক এবং দুজন বিশেষ সম্পাদক পদে নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করছেন দলীয় প্রধান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতা বলেন, ম্যাডামের ধারণা তিনি জেলখানায় গেলে দলকে বিভক্ত করতে কয়েকজন নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করতে পারেন। এসব কিছু মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন বেগম জিয়া।

তবে বিএনপির অনেক নেতা বলছেন, দূরদর্শিতা থাকলে সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীকে কারাগারে পাঠাবে না। আর যদি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়ই, তার অনুপস্থিতিতে কীভাবে দল চলবে সেই পরিকল্পনা গ্রহণের মতো দূরদর্শিতাও বেগম জিয়ার আছে। কেননা ১/১১-এর সময় বিএনপির অবস্থা এর চেয়ে করুণ থাকার পরও দল ভাঙতে সক্ষম হয়নি পরাক্রমশালী একটি পক্ষ।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!