• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন পার্বত্য জেলায় অরক্ষিত সীমান্ত, আসছে অস্ত্রের চালান


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩০, ২০১৬, ০১:৪১ পিএম
তিন পার্বত্য জেলায় অরক্ষিত সীমান্ত, আসছে অস্ত্রের চালান

দেশের পার্বত্য অঞ্চলের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়েই জঙ্গিদের অস্ত্রের চালান। ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে- পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করেই তারা অস্ত্র সংগ্রহ করে। সেক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পাহাড়ের কোনো বাসিন্দাকে।

মধ্যস্থতাকারী শুধুমাত্র উভয়পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়। তারপর উভয়পক্ষ দরদাম ঠিক করে। অস্ত্র কেনা হলে মধ্যস্থতাকারীকে কিছু কমিশন দেওয়া হয়। মূলত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোর কাছ থেকেই অস্ত্র পাচ্ছে জঙ্গিরা।

তিন পার্বত্য জেলায় অস্ত্র কেনাবেচায় সম্পৃক্ত থাকা ১৫ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের মধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (এআরএসও), ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরাকান (এনইউএ), ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আরাকান (ডিপিএ), আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট (এআরআইএফ), আরাকান আর্মি (এএ), পিপলস পার্টি অব আরাকান (পিপিএ) ও আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) উল্লেখযোগ্য। সীমান্তবর্তী এলাকা নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচিতে ওসব সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পও রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কিনে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। তিন পার্বত্য জেলার পাশাপাশি মহেশখালীর দুর্গম পাহাড় থেকেও জঙ্গিরা অস্ত্র সংগ্রহ করছে। গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলায় জঙ্গিরা ব্যবহার করে তিনটি একে-২২ মেশিনগান।

ইতিপূর্বে চট্টগ্রামে আটক হওয়া জেএমবি নেতা রাসেল ও ফয়সালের কাছ থেকেও একই ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। বান্দরবান সীমান্ত থেকেই তারা ওই অস্ত্র সংগ্রহ করেছে বলে স্বীকারও করেছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সাথে সখ্য গড়ে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র সংগ্রহ করছে জঙ্গিরা।

আবার গ্রেনেডসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক বানাতে দুর্গম পাহাড়ে গিয়ে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। সেজন্য পাহাড়ি সীমান্ত সুরক্ষিত করতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ছোট হরিণা, বড় হরিণা, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক, জুরাছড়ির আন্দারমানিক, ফকিরাছড়ি, বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার নারাইছড়ি, পানছড়ির দুদুকছড়ি, কেদারাছড়া, মাটিরাঙ্গা উপজেলার আচালং, রামগড় উপজেলার বাগানবাজার, বড়বিল, রামগড় বাজার, বান্দরবানের থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকাকে অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

তবে জঙ্গিদের অস্ত্র কেনাবেচা ঠেকাতে ২০১৪ সাল থেকে পাহাড়ি এলাকার সীমান্ত সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে এতোদিন ২৮১ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত থাকলেও ইতিমধ্যে ১৩০ কিলোমিটার এখন সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। আর মিয়ানমারের সাথে ১৯৮ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত থাকলেও ইতিমধ্যে সুরক্ষিত করা হয়েছে ৮৫ কিলোমিটার। কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে বসানো হচ্ছে চেকপোস্ট।

সূত্র আরো জানায়, গোয়েন্দা পুলিশ গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের আমান বাজারে পরিচালিত অভিযানে এমকে-১১-এর মতো ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র উদ্ধার করে। অত্যাধুনিক ওই রাইফেল দিয়ে প্রায় এক মাইল দূর থেকেও নিশানা করা যায়। এর কার্যকরী রেঞ্জ এক হাজার ৫০০ গজ।

প্রতি মিনিটে ফায়ার করা যায় ৭৫০ রাউন্ড। একটি নতুন এমকে-১১ রাইফেলের দাম প্রায় ১০ হাজার ডলার বা ৮ লাখ টাকা। তার আগেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে জেএমবি সদস্যদের কাছ থেকে একে-৪৭ ও একে-২২-এর মতো দামি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রামে আটক জেএমবি সদস্য রাসেল ও নাঈম তখন জিজ্ঞাসাবাদে জানায় উদ্ধার হওয়া এমকে-১১ রাইফেলটি বান্দরবান সীমান্ত থেকে তারা সংগ্রহ করে। 

তার আগে অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনাবেচার সময় ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবরে বান্দরবান থেকে আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের তিন উপজাতি সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব-৭। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় তিনটি একে-৪৭ রাইফেল।

এদিকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে জঙ্গিদের অস্ত্র সংগ্রহ প্রসঙ্গে পুলিশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন- পাহাড়ি এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টি জানার পর সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হচ্ছে। কারণ চট্টগ্রামে আটক জেএমবি সদস্যদের অনেকেই ওসব এলাকা থেকে অস্ত্র কেনার কথা স্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তের যেসব পয়েন্ট অরক্ষিত সেখান দিয়েই অস্ত্র আসছে। তাই সীমান্ত পয়েন্ট সুরক্ষিত করার ওপর জোর দিয়েছেন গোয়েন্দারাও।

অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দক্ষিণ-পূর্ব আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাবিবুল করিম জানান, পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে যোগাযোগ করে সমতলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চলছে। অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসছে মারণাস্ত্রও। তাই সীমান্তের অরক্ষিত এলাকা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে ৫২টি নতুন চেকপোস্ট। আরো ৫২টি চেকপোস্ট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!