• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তীব্র খাদ্য সংকটে বানভাসি মানুষ


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০৫:৫৪ পিএম
তীব্র খাদ্য সংকটে বানভাসি মানুষ

ঢাকা : সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। যেসব অঞ্চলে পানি কমেছে সেখানে চলছে বিশুদ্ধ পানি আর খাবারের তীব্র সংকট। এরইমধ্যে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর। কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে বন্যার কারণে।

এদিকে, দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ২২ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ লাখ মানুষ। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩০তম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।

অন্যদিকে বিভাগীয় ব্যুরো অফিস ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, বন্যাকবলিত চরাঞ্চলে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন বানভাসিরা। সেখানে হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ছয় দিন পার হলেও চরাঞ্চলের অনেক স্থানে মিলছে না ত্রাণ সহায়তা। বানভাসিদের অভিযোগ, চরাঞ্চলগুলো দুর্গম হওয়ায় তাদের কাছে যায় না কেউ, বাড়ায় না সাহায্যের হাত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও তা অপ্রতুল বা না দেয়ার মতোই।

রংপুর: রংপুরের ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে বসতি এলাকা। মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পুল-কালভার্টসহ উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট নদীর পানি কমতে শুরু করলেও করতোয়ার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন করে ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে বগুড়া-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনও বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকারি হিসাবে জেলার ৯ উপজেলার ৮শ’ ২০টি গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দী জীবন-যাপন করছে।

নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট চলছে। পানির তোড়ে নেত্রকোণা-কলমাকান্দা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত ৯টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৩ উপজেলায় ত্রাণ পৌঁছেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

জামালপুর: জামালপুরে যমুনার পানি সামান্য কমতে শুরু করেছে। তবে ভাটি অঞ্চলে বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় সার্বিক পরিস্তিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় নতুন করে ১শ’ ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এই নিয়ে মোট ৯শ’ ৬৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়েছে এই জেলায়। ক্ষতিগ্রস্থ কমপক্ষে ৭ লাখ মানুষ।

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো ঘরে ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বন্যা কবলিত মানুষের খাবার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের তালিকা করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ পানি কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

দিনাজপুর: দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি’র উন্নতি হয়েছে। তবে গৃহহীন প্রায় ৬ লাখ বানভাসি মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে। বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বানভাসি মামুষের মধ্যে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন এক’শ ২৫টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প খুলেছে এই জেলায়।

বগুড়া: বগুড়ায় ৬৩টি গ্রামের ১৯ হাজার পরিবারের প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পানিবন্দী অবস্থায় আছে।

জল জমছে ঢাকার নিম্নাঞ্চলে: আগামী সপ্তাহে প্লাবিত হতে পারে ঢাকার নিম্নাঞ্চল। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র এমন আভাস দিয়েছে। তারা বলছে, একদিকে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর পানি বাড়ছে সেই সাথে অমবস্যার প্রভাব পড়লে দেখা দেবে বন্যা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দুর্ভোগে পড়তে পারে নিম্নাঞ্চচলের ৪০ লাখ মানুষ।

গত ২৪ ঘণ্টায় বুড়িগঙ্গায় পানি বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার, বালু নদীতে ৯, শীতলক্ষায় ১২ ও তুরাগে ৮ সেন্টিমিটার। পানি বাড়ার এই গতি অব্যাহত থাকলে, আগামী সপ্তাহে ডেমরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরো এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। এদিকে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সবগুলো নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এই স্রোত ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে ঢুকলে পানির উচ্চতা দ্রুতই বিপৎসীমার ওপরে যাবে। এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া ২১ আগস্ট অমাবস্যা। যে কারণে জোয়ারের পানি নামছে ধীর গতিতে। এ সময় মাঝারি বা ভারী বৃষ্টি হলে রাজধানীর পূর্ব ও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। তারা বলছেন, ঢাকার খালবিল ও জলাভ‚মি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে যেভাবে আবাসন প্রকল্পগুলো হয়েছে, তাতে করে বন্যা হলে নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করবেন। অনেকে ঘর থেকেও বের হতে পারবেন না। তাই এসব এলাকার মানুষ পানি আসার আগেই যেন নিরাপদ জায়গায় চলে যায় সে বিষয়ে সতর্ক করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি চলাচল ব্যাহত: পদ্মায় তীব্র গ্রোত এবং ফেরি স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ- রুটে ফেরি চলাচল। পারাপারের অপেক্ষায় দুই পাড়ে আটকে আছে আটশোর বেশি ট্রাক ও বাস।

বিআইডব্লিউটিসি জানায়, নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচলে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় দিগুণ সময় লাগছে। তাছাড়া ৪টি ফেরি মেরামতে থাকায় ঘাটে ট্রিপ সংখ্যাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে উভয় ঘাটেই যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ায় সাত শতাধিক মালবাহী ট্রাক এবং ১৫০টির মত যাত্রীবাহী কোচ আটকা পড়েছে।

দুই জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: পদ্মায় পানি বাড়ায় শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে বন্যা পারিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই দুই জেলার অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। শরীয়তপুরে বন্যার পানি ঢুকেছে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার ৪৮টি গ্রামে। বসত ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পরেছে পদ্মা তীরের মানুষ। বন্ধ রয়েছে নড়িয়া-ঢাকা সড়কে যান চলাচল। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফরিদপুরের পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

এছাড়া পানিবন্দি সেখানকার অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার নিচু এলাকার ২৯টি স্কুল বন্ধ রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!