• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র হচ্ছে ক্রসফায়ার বিতর্ক


এমএ ইউসুফ জুন ১৯, ২০১৬, ১২:০৪ পিএম
তীব্র হচ্ছে ক্রসফায়ার বিতর্ক

দিন যত যাচ্ছে ততই তীব্র হচ্ছে ক্রসফায়ার নিয়ে বিতর্ক। মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন কিংবা সাধারণ মানুষ, ‘ক্রসফায়ার’ সম্পর্কে সবার একই ধারণা, এসব প্রশাসনের সাজানো নাটক এবং বিনাবিচারে হত্যা। গত ১৮ জুন শনিবার মাদারীপুরে এক কলেজ শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তি গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কথিত ‘বন্দুক-যুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফাহিমের মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলছেন, সরকার কিছু একটা ধামাচাপা দিতেই বন্দুকযুদ্ধের নাম করে ফাহিমকে হত্যা করেছে।

দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর তথ্যানুযায়ী চলতি মাসের ৭ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত এ কয়দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এর মধ্যে ৭ জন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য এবং বাকিরা ডাকাত ও বিভিন্ন হত্যা এবং অস্ত্র মামলার আসামি বলে দাবি পুলিশের।

সর্বশেষ রোববার (১৯ জুন) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক যুবক নিহত হয়েছেন। ডিবি পুলিশ বলছে নিহত যুবক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি শরিফ।

বন্দুকযুদ্ধের এসব ঘটনায় পুলিশের দাবিগুলো প্রায় একই রকম, একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন খবরে তারা ঘটনাস্থলে গেলে এ সময় সন্ত্রাসী, জঙ্গি কিংবা অপরাধীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা নিহত হয়।

বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক এই অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রিমান্ডের সময় আইনজীবী বা পরিচিত কারো উপস্থিতির বিধান থাকলেও সেই নিয়মটি ‘মোটেও মানা হচ্ছে না'। তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় দেশের কারো কোনো সন্দেহ নাই যে, পুলিশ তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে ফেলছে’।

মাদারীপুরে অভিযুক্ত জঙ্গি ফাহিম এক কলেজ শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা চালানোর সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা। মনে করা হচ্ছিল, তার কাছ থেকে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডে ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।

কিন্তু ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর চব্বিশ ঘণ্টার মাথায় সে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হবার পর এ নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন রিমান্ডে থাকা অভিযুক্তকে নিয়ে অভিযানে যাওয়া প্রসঙ্গে।

তবে ঘটনার পর মাদারীপুরের পুলিশ প্রধান সরোয়ার হোসেন বিবিসিকে বলেছিলেন, ফাহিম তার সহযোগীদের নাম এবং আড্ডাস্থল বলেছিল এবং তাদের ধরতে ফাহিমকে নিয়েই পুলিশ অভিযানে গিয়েছিল। এসময় ফাহিমের ‘সহযোগীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে’ আহত হয়ে সে মারা যায়।

মালিক বলেন, "২০০৪-০৫ সালে হয়তো কেউ কেউ ক্রসফায়ারের কিচ্ছা বিশ্বাস করতো, এখন কেউ এটা বিশ্বাস করে না"।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে যদি একটি সুষ্ঠু তদন্ত করা না হয় তাহলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে এবং পুলিশেরও আসল অপরাধীকে ধরার যোগ্যতা কমে যাবে।

বাংলাদেশে রিমান্ডে নির্যাতন রোধে ‘হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যু প্রতিরোধ আইন’ নামে একটি আইন থাকলেও প্রচারের অভাবে সেটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।

কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন মালিক, "যেসব দেশে পুলিশ এই কাজগুলি করে, সেই প্রত্যেকটা দেশেই কিন্তু অপরাধের সমস্যার সমাধান হয় না বরং আস্তে আস্তে বর্বর ও সহিংস সমাজে পরিণত হয়"।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!